মেয়েদের সাজগোজ এবং ত্বকের যত্নে হাজার হাজার ব্র্যান্ড রয়েছে। কিন্তু এতসব ব্র্যান্ডের ভিড়েও রয়েছে কিছু ব্র্যান্ড যেগুলো হচ্ছে বিশ্বসেরা। সেরকমই ৫ টি বিখ্যাত ব্র্যান্ড নিয়ে আজকের লেখা। এই লেখার মাধ্যমে ব্র্যান্ড গুলোর প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা জানানোর চেষ্টা করবো।
Estee lauder:
এই ব্র্যান্ডটির কথা শুনেন নি এমন মানুষ বোধ হয় খুব কমই আছেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গুলোর একটি হচ্ছে Estee lauder। এস্টি লউডার এবং তার স্বামী জোসেফ লউডার এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে শুধু মাত্র চারটি প্রোডাক্ট নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই কোম্পানির। সেগুলো হচ্ছে- সুপার রিচ অল পারপাজ ক্রিম, ক্রিম প্যাক, ক্লিঞ্জার অয়েল এবং স্কিন লোশন। তার ঠিক দুই বছর পরেই নিউ ইয়র্ক এর স্যাকস ফিফথ এভিনিউ এর সাথে কোম্পানির প্রথম ডিপার্টমেনট স্টোর একাউনট প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী পনের বছরে ক্রমেই এর নামের সাথে সাথে পণ্যের প্রসার ও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে নিজ দেশের সীমা পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও শুরু করে এর ব্যবসা এবং পায় সাফল্য। Estee lauder কোম্পানি যেন এখন বিউটি প্রোডাক্টের এক বিশাল সাম্রাজ্য। ম্যাক, ববি ব্রাউন, ক্লিনিক, অরিজিন্স এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ড গুলো এখন Estee lauder কোম্পানির দখলে। এই কোম্পানির আন্ডারে এখন ২৫ টি বিখ্যাত ব্র্যান্ড রয়েছে এবং ১৫০ টি দেশে রয়েছে এর ব্যবসা।
MAC:
Mac এর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আলাদা ভাবে বলার আর কিছুই নেই। প্রত্যেক সৌন্দর্যপিপাসু নারীর স্বপ্নের ঠিকানা যেন ম্যাক। MAC এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে Makeup Artist Cosmetics। ১৯৮৪ সালে ক্যানাডিয়ান মেক-আপ আর্টিস্ট এবং ফটোগ্রাফার ফ্র্যাঙ্ক টসকান এবং বিউটি স্যালনের মালিক ফ্র্যাঙ্ক এঞ্জেলো এই ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে শুধুমাত্র প্রফেশনাল মেক-আপ আর্টিস্টদের জন্যই বিশেষ ভাবে প্রোডাক্টের ডিজাইন করা হত। খুব কম সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ম্যাক এর প্রোডাক্ট। ব্যপক জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীতে মেক-আপ আর্টিস্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও চালু করা হয় এর প্রোডাক্ট। ১৯৯৫ সালে Estee Lauder কোম্পানি MAC এর ৫১% শেয়ার কিনে নেয় এবং ১৯৯৭ সালে ফ্র্যাঙ্ক এঞ্জেলোর মৃত্যুর পর কোম্পানির বাকি ৪৯% শেয়ারও পরবর্তীতে Estee Lauder কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন ফ্র্যাঙ্ক টসকান। ১৯৯৮ সালে Estee Lauder কোম্পানি পুরোপুরি ভাবে MAC এর মালিকানা অর্জন করে। বর্তমানে ৭৮ টি দেশের ১৫০০ টিরও বেশি লোকেশনে ম্যাক এর কসমেটিকস বিক্রি করা হয়।
Chanel:
বিশ্বের নামী দামী ব্র্যান্ড গুলোর একটি হচ্ছে Chanel. মুলত এই ব্র্যান্ডটি পারফিউমের জন্যই খ্যাতি লাভ করে এবং পরবর্তীতে মেক-আপ, ড্রেস, আকর্ষণীয় জুয়েলারি কালেকশন ইত্যাদিতেও সমান পরিমাণে খ্যাতি পায়। কোকো চ্যানেল ১৯০৯ সালে এই ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করে। এই ব্র্যান্ডের বিশ্ব বিখ্যাত পারফিউমের একটি হচ্ছে দ্যা সিগনেচার ফ্র্যাগ্রেন্স চ্যানেল নাম্বার ৫। এর এরুপ নামকরনের পেছনেও রয়েছে একটি কারণ। আর তা হচ্ছে কোন এক জ্যোতিষী কোকো চ্যানেল কে বলেছিলেন যে ৫ হচ্ছে তার লাকি নাম্বার। তাই সাফল্যের আশায় এই পারফিউমের নামকরন করা হয় নাম্বার ৫ এবং এটি রিলিজও করা হয় বছরের ৫ম মাসের ৫ম তারিখে যেটি হচ্ছে ৫ই মে, ১৯২১। চ্যানেল নাম্বার ৫ পারফিউমটি অভাবনীয় সাফল্য পায়। পরবর্তীতে কোকো চ্যানেল এর অনুরোধে পিয়েরে অয়েরথেইমার চ্যানেল ব্র্যান্ড এর ব্যয়ভার অনেকটা বহন করেন এবং কোম্পানির ৭০% শেয়ার চলে যায় পিয়েরের কাছে। ১৯২৪ সালে কোকো চ্যানেল তার ব্র্যান্ডে কসমেটিকস লাইন এবং ১৯২৯ সালে স্কিন কেয়ার লাইন প্রোডাক্ট সংযোজন করেন।
Clinique:
স্কিন কেয়ারের ক্ষেত্রে Clinique ব্র্যান্ডের সুনাম আমরা কমবেশি সকলেই জানি। Clinique হচ্ছে Estee lauder কোম্পানি থেকেই সৃষ্টি হওয়া একটি ব্র্যান্ড। ক্লিনিক ব্র্যান্ড সৃষ্টি এবং বিভিন্ন প্রোডাক্ট লাইন সম্প্রসারণ করতে যার ভুমিকা রয়েছে তিনি হচ্ছেন এভ্লিন লউডার যিনি একই সাথে Estee lauder কোম্পানির এক্সিকিউটিভ এবং এস্টি লউডারের পুত্রবধূ। ১৯৬৭ সালে আমেরিকান ভগ ম্যাগাজিনে একটি আর্টিকেল ছাপা হয় যার হেড লাইন ছিল “can great skin be created?” এবং যার বিষয়বস্তু ছিল স্কিন কেয়ার রুটিনের তাৎপর্য নিয়ে। আর্টিকেলটি এস্টি লউডার এর পুত্রবধূ এভ্লিন লউডার এর চোখে পড়ে এবং তিনি তা এস্টির নজরে আনেন। মূলত এই আর্টিকেল পড়ে উদবুদ্ধ হয়েই আরেকটি স্কিন কেয়ার বেসড ব্র্যান্ড সৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে ক্লিনিক ব্র্যান্ডের প্রিমিয়ার (উদ্বোধনী প্রদর্শনী) করা হয়। ক্লিনিক হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ব্র্যান্ড যা এলারজি টেস্টেড এবং অভিজ্ঞ ত্বক্-বিশেষজ্ঞ দ্বারা চালিত। এর বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে এটি প্রত্যেক মানুষের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী তৈরি করে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। আপনার ত্বক যে রকমই হোক না কেন তার সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন Clinique এর প্রোডাক্ট থেকে। এজন্যই Clinique এর স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।
L’oreal:
১৯০৭ সালে ফ্রেঞ্চ রসায়নবিদ ইউজিন শুলার হেয়ার ডাই করার একটি ফর্মুলা তৈরি করেন। তার নিজের ফর্মুলা ব্যবহার করে নিজেই তৈরি করেন প্রোডাক্ট এবং বিক্রি করা শুরু করেন প্যারিসের হেয়ারড্রেসার দের কাছে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায় এটি। ১৯১৯ সালের ৩১ জুলাই ইউজিন শুলার “সেফ হেয়ার ডাই কোম্পানি অফ ফ্রান্স” নামে তার কোম্পানিটি রেজিস্টার করেন যা পরবর্তীতে L’oreal নামকরন করা হয়। এই কোম্পানির মুল নীতি হচ্ছে রিসার্চের মাধ্যমে নতুন নতুন বিউটি প্রোডাক্টের উদ্ভাবন করা। ১৯২০ সালে এই কোম্পানি ৩ জন রসায়নবিদ নিয়োগ করে এবং সময়ের সাথে সাথে বর্তমানে নিয়োগকৃত রসায়নবিদের সংখ্যা হচ্ছে ২০০০ জন। L’oreal ২০০৬ সালের ১৭ মার্চ বিখ্যাত কসমেটিকস কোম্পানি The Body Shop কে কিনে নেয়। L’oreal এর ব্যবসা প্রথমে হেয়ার কালার বিজনেস দিয়ে শুরু হলেও খুব শীঘ্রই অন্যান্য কসমেটিকস এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে পদচারণা শুরু করে এবং সাফল্যের মুখ দেখতে থাকে। হেয়ার কালার, বডি ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, ক্লিঞ্জার, মেক আপ, ফ্র্যাগ্রেন্স ইত্যাদি প্রায় সবকিছুতেই রয়েছে L’oreal এর সমান বিচরণ।
লিখেছেনঃ নাহার
ছবিঃ ডারিয়াসডিল.কম, ফ্র্যাগ্র্যান্সসিলেকশান.ওয়ার্ডপ্রেস.কম, হান্ড্রেডটপলিস্ট.কম, দ্য গ্রাউন্ডম্যাগ.কম