হঠাৎ একদিন যখন দেখি সিঁথিটা আগে যেমন ছিল এখন কম করে হলেও তার ৩ গুণ হয়ে গেছে! একসময় যখন ব্যান্ড দিয়ে ২ প্যাঁচ দিয়ে মোটা একটা পনিটেইল করে ফেলতেন সেখানে এখন ৪-৫ প্যাঁচ দিলেও কেমন যেন ঢিলে থাকে! স্বীকার করুন, তখনি কিন্তু আসলে বোঝা যায় চুল পাতলা হয়ে গোছার আর কিছুই বাকি নেই। আর এই পয়েন্টেই শুরু হয় চুল ঘন করা ও চুলের গ্রোথ বাড়ানোর চেষ্টা…!
বেশিরভাগ সময়ে যারা নিজের চুল ঘন করতে চাচ্ছেন তারা জিজ্ঞেস করেন-
“চুলের গোঁড়া শক্ত করতে কোন শ্যাম্পু মাখবো? কোন শ্যাম্পুতে চুল গজাবে…??”
আমরা না তখন ভুলেই যাই যে চুল আসলে একটা মৃত জিনিস! আপনি শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার মেখে বা চুলের লেন্থে কোনও কিছু করেও চুলকে মোটা করতে পারবেন না! যা করতে হবে সেটা করবেন আপনার স্ক্যাল্পে, যেখানে আছে আপনার হেয়ার ফলিকল। হেয়ার ফলিকল যত স্টিমুলেট করবেন ততই আপনার গোঁড়ায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে পুষ্টি পৌঁছে চুলের গ্রোথ ভালো হবে এবং গোছাটা মোটা হবে।
তাই পুরো প্রসেসটাই কিন্তু একটার সাথে আরেকটা রিলেটেড এবং এই প্রসেস শুরু হচ্ছে আপনার স্ক্যাল্প থেকে।
তো আসুন এবারে জানি, কিভাবে স্ক্যাল্প স্টিমুলেট করে চুল ঘন করা যায়?
আপনাকে এমন কিছু ইউজ করতে হবে যা সেইফলি আপনার স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াবে। ফলিকল-গুলোকে উজ্জীবিত করবে। এই কাজের জন্য সবচেয়ে ভালো কি জানেন? গোলমরিচ বা ব্ল্যাক পেপার! কি? শুনেই হাসি পেয়ে গেল?? মানুষ মাথায় কী কী মাখে, তাই না??
হাসাহাসি বন্ধ! গোলমরিচ কেন স্ক্যাল্পের জন্য ভালো বলছি-
১. গোলমরিচে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যারোটিনোয়েড, ফ্ল্যাভোনোয়েড।
২. গোলমরিচের আছে অ্যান্টিসেপটিক প্রপারটিজ। তাই এর রেগ্যুলার ব্যবহারে স্ক্যাল্পের ফাঙ্গাল গ্রোথ কমে, মানে খুশকির সমস্যা কনট্রোলে থাকে।
৩. এর লাইট আর মাইলড ইরিটেশন স্ক্যাল্পে ব্লাড ফ্লো বাড়ায়। হেয়ার রুটে ব্লাড ফ্লো বাড়ার রেজাল্ট হিসেবে হেয়ার গ্রোথ ভালো হয়।
৪. আবার এই একই কারণে হেয়ার ফলিকলগুলো শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে।
৫. গোলমরিচ স্ক্যাল্পে জমে থাকা প্রোডাক্ট বিল্ড-আপ ক্লিন করে স্ক্যাল্প ডিটক্স করে।
তাই উপরের পয়েন্টগুলো থেকে এটা তো ক্লিয়ার যে গোলমরিচের ঐযে একটু চিড়বিড়ে জ্বলুনি ভাব, ওটাই আসলে স্ক্যাল্পে স্কিনে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের গোঁড়াটা শক্ত করে।
তাহলে চুল ঘন করা ও গ্রোথ বাড়াতে এই গোলমরিচ ব্যবহার করার উপায় কী?
না না, বেটে মাথায় লাগিয়ে রাখা যাবে না!! তাহলে কিন্তু জ্বলুনিতে জীবনটাই ছারখার হবে! নিচের রেসিপিটা ফলো করলে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট পাবেন।
যা যা লাগবে
- ২ চিমটি কালো গোলমরিচের গুঁড়ো।
- ১ টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল।
ব্যস… এটুকুই!!
কিভাবে বানাবেন?
১. খুব ভালোভাবে তেল আর গোলমরিচের গুঁড়া মিক্স করে রেখে দিন অন্তত ২ ঘণ্টা। এই সময়ে গোলমরিচের অ্যাসেনসিয়াল অয়েল নারিকেল তেলের সাথে ভালোভাবে মিশে যাবে।
২. এই তেলটা শুধু স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করবেন। চুলে দেবার দরকার নেই।
৩. খুব ভালোভাবে আঙ্গুলের টিপস দিয়ে স্ক্যাল্পে অয়েলটা ম্যাসাজ করুন।
৪. এবার একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপড়ে নিয়ে চুলে পেঁচান যেন তোয়ালের উষ্ম ভাপটা স্ক্যাল্পে লাগে। এতে তেলটা স্ক্যাল্পে ভালোভাবে কাজ করবে আর স্ক্যাল্পের পোরগুলো ক্লিন হবে। সাথে সাথে খুশকি থাকলে লুজ হয়ে যাবে।
৫. তোয়ালেটা ৩০ মিনিট পর খুলে ফেলতে পারেন। কিন্তু তেলটা মাথায় রেখে ১ ঘণ্টা ওয়েট করুন।
৬. ১ ঘণ্টা পড়ে মাইলড এবং সিলিকন ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এই হল পুরো ট্রিটমেন্ট। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার স্ক্যাল্প স্টিমুলেটিং ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। আর আপনি নিজেই স্ক্যাল্পে গোলমরিচের একটু জ্বলুনি বুঝতে পারবেন। ভয় পাবার কিছু নেই। এই জ্বলুনিই স্ক্যাল্পে ব্লাড ফ্লো বাড়াচ্ছে। তাই ধৈর্য ধরুন।
সংরক্ষণ
এই তেলটা কড়া রোদে রাখুন ২ দিন। ২ দিন রেখে বোতলটা ডার্ক কুল প্লেইসে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ইউজ করতে পারবেন।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
দেখলেন তো, চুল ঘন করা কঠিন কিছু কিন্তু নয় এখন! এভাবে রেগ্যুলার তেলটা ইউজ করলে আপনি আপনার হেয়ার গ্রোথে অবশ্যই পজিটিভ চেঞ্জ দেখবেন। অবশ্যই কী দেখলেন ইউজ করে আমাদের ইনবক্সে বা কমেন্টে জানাবেন।
আজ এটুকুই।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক