প্রাত্যহিক জীবনের অন্যান্য কাজ গুলোর সঙ্গে যেটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে জায়গা করে আছে, তা হল গোসল। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা তথা শরীর সুস্থ রাখার ব্যাপারে গোসলের কোনও বিকল্প নেই। তবু বয়স ও আবহাওয়া ভেদে এর গ্রহণযোগ্যতা এক এক ক্ষেত্রে এক এক রকম।
গ্রীষ্মে এটি যতটাই আরাম প্রিয়তার সঙ্গে পালন করা হোক না কেন, শীতকালে দেখা যায় ভিন্ন রূপ। সব বয়সের ক্ষেত্রেই শীতকালে এই গোসলের বিষয়টি হয়ে ওঠে বেশ ভীতিকর আর তাই এর থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হয় নানা কৌশল। তার মধ্যে একটি হল-গরম পানি যোগ। শীতকালে গোসলের ক্ষেত্রে শহর কিংবা গ্রাম নির্বিশেষে গরম পানি দিয়ে গোসল করা একটি অত্যন্ত প্রচলিত দৃশ্য। কিন্তু এই পানির উষ্ণতা কিংবা গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে আমরা কখনোই ভেবে দেখি না। আসুন আজ এ বিষয়ে কিছু জেনে নেয়া যাক-
– আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে গরম পানি সহযোগে গোসলের ক্ষেত্রে শরীরে গরম পানি ব্যবহার করলেও মাথায় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে শরীরের কোমল অংশে গরম পানির তাপমাত্রা জনিত ক্ষতিকর প্রভাব। মূলত গরম পানি চোখ ও চুলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই মাথায় গরম পানি ঢালতে মানা করা হয়।
– শারীরিক ধরন ও সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে গোসলের পানি নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি সুস্থ আর সুঠাম দেহের অধিকারী হন তবে ঠাণ্ডা পানি দিয়েই গোসলের কাজটি সেরে নিতে পারেন। অন্যথায় গরম পানি ব্যবহার করুন।
– লিভারে সমস্যা, বদহজম, হাত পা ব্যথা, শরির জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা হলে ঠাণ্ডা পানি দিয়েই গোসল করুন। এতে সমস্যার হাত থেকে পরিত্রান পাবেন।
– অ্যালার্জি, কাশি, ঠাণ্ডা, পায়ের ব্যথা, সাইনাস, বাত এ ধরনের রোগ থাকলে গরম পানি যোগ করে গোসল করুন। নতুবা ঠাণ্ডা জনিত সমস্যায় পড়তে পারেন।
– যাদের শারীরিক সামর্থ্য অপেক্ষাকৃত কম, দুর্বল, বৃদ্ধ কিংবা শিশু, শীতকালে তাদের গোসলের ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করাই শ্রেয়।
– ছাত্র ছাত্রী এবং কর্মজীবীরা যারা অধিকাংশ সময় কাজ কর্মে ব্যস্ত, তাদের ঠাণ্ডা পানি দিয়েই গোসল করা উচিত। এতে মানসিক অবসাদ দূর হয় এবং শারীরিক চাঞ্চল্য বজায় থাকে।
– গোসলের পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গোসলের সময়টিও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ মনে রাখতে হবে আপনি দিনের কোন সময়টিতে গোসল করছেন। সকালে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তির পর রাতের গোসলে অবসাদ দূর করতে গরম পানির জুড়ি নেই।
– নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম এর জন্য রেখে এরপর গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ দূর হয়ে মন থাকবে ভরপুর সতেজ।
– নিয়মিত শরীরে তেল ম্যাসেজ করে আধঘণ্টা পর গোসলের অভ্যাস করা যায়। এটি ত্বকে রক্ত চলাচলে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। যা দিনভর আপনাকে রাখবে শীতের হাত থেকে নিরাপদ।
– ভালো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য গোসলের পানিতে কয়েকটি নিমপাতা দিয়ে রাখুন। এটি প্রত্যক্ষভাবে আপনার গোসলকে করে তুলবে জীবাণুমুক্ত ও প্রাণবন্ত।
মূলত, শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে গোসলের বিষয়টিকে কখনোই অবহেলা করা চলবে না…তা সে যে ঋতুই হোক না কেন। এর জন্য গ্রীষ্মে ঠাণ্ডা পানি আর শীতে গরম পানি ব্যবহার করার কথা বলা হয়ে থাকে। দুটোই উপকারী। শুধু প্রয়োগের ক্ষেত্রে বয়স, শারীরিক অবস্থা আর সুস্থতার দিকটি বিবেচনায় রেখে পানির তাপমাত্রার তারতম্য নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, গোসলের মূল উদ্দেশ্যই শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে শরীরকে পুনরায় দৈনন্দিন কাজের উপযোগী করে তোলা। তাই গোসলের পানি হতে হবে সার্বিকভাবে সহনীয় ও আরামদায়ক।
লিখেছেনঃ রাজদেভ
ছবিঃ shutterstock