আপনার নিত্য দিনের রুটিনে টক দই কেন থাকতেই হবে?

আপনার নিত্য দিনের রুটিনে টক দই কেন থাকতেই হবে?

tokdoi

সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করা। আর অবশ্যই এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো শরীরের জন্য উপকারী। এমনই একটি উপকারী খাবার টক দই। সরাসরি দুধ খেতে যাদের সমস্যা হয়, তারা নির্দ্বিধায় এটি খেতে পারেন। পুষ্টিবিদদের মতে, দুধের সমান পুষ্টি পুরোটাই মেলে টক দইয়ে। তাই পূরণ হয় ভিটামিন, মিনারেল, আমিষের চাহিদা। চলুন তাহলে জেনে নেই, কেন আপনার নিত্য দিনের রুটিনে টক দই রাখা উচিত।

টক দই কী?

টক দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়ার গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। ল্যাকটোজের গাঁজনের মাধ্যমে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করা হয়, যা দুধের প্রোটিনের উপর কাজ করে দইয়ের স্বাদ এবং এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ প্রদান করে। মানুষ ৪৫০০ বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং তা খেয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতেই এটি পরিচিত। পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে এর সুনাম আছে। দই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন B6 এবং ভিটামিন B12-এ সমৃদ্ধ।

Sale • Breast Cream, Lotions & Creams

    ডাক্তার বা পুষ্টিবিদেরা সবসময়ই টক দই খেতে পরামর্শ দেন। বাইরের দেশগুলোতে যেমন: ভারতে খাবার পরে সব সময় টক দই খায়। টক দই একটি ল্যাক্টিক ফারমেন্টেড খাবার। টক দই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও হেলদি খাবার, কারণ এতে আছে দরকারী ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ ইত্যাদি। এটি দুগ্ধজাত খাবার ও দুধের সমান পুষ্টিসম্পন্ন। এমনকি এটি দুধের চাইতেও বেশি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ দুধের চাইতে বেশি ভিটামিন যেমন: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস- টক দইতে পাওয়া যায়। নানাবিধ গবেষণার পর চিকিৎসকেদের মনে আর কোনও সন্দেহ রইল না যে শরীরকে নানা জটিল রোগ থেকে দূরে রাখতে এবং সার্বিকভাবে দেহের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দইয়ের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো প্রতিদিন শুধু নয়, দিনে দুইবার করে দই খেলেও কোনো ক্ষতি হয় না। আসলে এই প্রোবায়োটিক-এ উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে।

    টক দই

    নিত্য দিনের রুটিনে টক দই কেন থাকতেই হবে?

    (১) দুধের আদর্শ বিকল্প 

    এমন অনেকই আছেন যারা একেবারে দুধ খেতে পারেন না। কারও গন্ধ লাগে, তো কারও বমি পায়। এই ধরনের সমস্যাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স’ বলা হয়। প্রসঙ্গত, দুধ থেকে দই হওয়ার সময় ল্যাকটোজ, ল্যাকটিক অ্যাসিড-এ রূপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে দই খেলে না গা গোলায়, না বমি পায়। আপনি বা আপনার শিশু কি ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স-এ ভুগছে? তাহলে দুধের বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন টক দই।

    (২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

    দইয়ে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে, সংক্রমণ থেকে ভাইরাল জ্বর, কোনও কিছুই ধারের কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।

    (৩) বাড়তি ওজন কমে

    ওজন কমানো যদি আপনার অন্যতম অ্যাজেন্ডা হয়, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুণ উপকার মিলবে। কারণ এই দুগ্ধজাত খাবারটিতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান শরীরে জমে থাকা ফ্যাট সেলগুলোকে গলাতে শুরু করে। ফলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না।

    (৪) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে

    দইয়ে উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর সোডিয়ামের আধিক্য কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রসঙ্গত, শরীরে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।

    (৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

    সুস্থভাবে দীর্ঘদিন যদি বাঁচতে চান, তাহলে রোজকার ডায়েট-এ দইয়ের অন্তর্ভুক্তি ঘটানো মাস্ট! কারণ দইয়ে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারী উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটা শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারের কাছে ঘেঁষতে পারে না।

    (৬) হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

    বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ কারণে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

    পেপটিক আলসার থেকে বাঁচতে নিত্য দিনের রুটিনে টক দই রাখুন - shajgoj.com

    প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ী এইচ. (হেলিকোব্যাক্টার) পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফেলতেও দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় দইয়ের অন্তর্ভুক্তির পিছনে প্রশ্ন করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

    (৭) হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

    রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। তাই তো নিয়মিত এই দুগ্ধজাত খাবারটি খেলে হার্ট-এর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো পরিবারে যদি কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ-এর ইতিহাস থাকলে দইকে সঙ্গ ছাড়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!

    (৮) স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে

    বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব  রোগগুলির কারণে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেস-এর যোগ রয়েছে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

    (৯) হাড় এবং দাঁতের জন্য খুব উপকারী

    দুধের মতো দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বুড়ো বয়সে গিয়ে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিস-এর মতো রোগে আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে।

    ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় টক দই

    (১০) ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে

    দইয়ে পরিমাণমতো বেসন এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। আসলে দইয়ে থাকা জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ বার লাগালে দারুণ উপকার মেলে।

    এই তো জেনে নিলেন, টক দইয়ের উপকারিতা সম্পর্কে। এখনও যদি খাদ্য তালিকায় টক দই না রেখে থাকেন, তবে জলদি অভ্যাস করার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকতে হলে টক দই কিন্তু আপনাকে বেশ সাহায্য করবে! ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

    ছবিঃ সাটারস্টক

    4 I like it
    1 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort