বর্তমানে কেনাকাটার বিষয়টা সহজ করে দিয়েছে অনলাইন শপগুলো। ঘরে বসেই চটজলদি জিনিস পছন্দ করা, অর্ডার প্লেস করা ব্যস!!! ২/১ দিনের মধ্যেই জিনিস হাতে! অনলাইনে আজকাল আমরা এমনভাবে সহজেই মেকআপ প্রোডাক্টগুলো কিনে থাকি। তেমনি অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশ কয়েক বছরের। এর মধ্যে প্রায় অনেক প্রোডাক্টই মন মতো পেয়েছি। আবার প্রতারণার স্বীকারও হয়েছি ২/১ বার।
আর অনলাইনে যেহেতু সামনা সামনি দেখে শুনে প্রোডাক্ট কেনার সুযোগ নেই, সেহেতু কিছু সাবধানতা তো অবলম্বন করাই উচিত। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই, অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত!
অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে ১০টি টিপস
১. রিভিউ নিতে হবে
প্রথমেই দেখতে হবে কোন কোন ওয়েবসাইট/ফেসবুক পেজ মেকআপ প্রোডাক্ট সেল করে। তাদের সাইট/পেজ রিভিউগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। সবসময় চেষ্টা করবেন পরিচিত সাইট/পেজ থেকে কেনার। এক্ষেত্রে ফ্রেন্ডস/পরিচিত যারা অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্টস কেনা নিয়ে অভিজ্ঞ তাদের জিজ্ঞাসা করে নিলে ভালো হবে। তাদের প্রোডাক্ট আসল কিনা, ডেলিভারি সিস্টেম, ব্যবহার ইত্যাদি কেমন এগুলো অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে জেনে নেওয়া উচিত।
২. মেকআপ শেড রিসার্চ
ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ফেইস পাউডার- এই প্রোডাক্টগুলো অনলাইনে কেনা একটু মুশকিল। কারণ, শেড সামনা সামনি ম্যাচ করে নেওয়ার কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে, আপনাকেই একটু রিসার্চ করে নিতে হবে। যে ফাউন্ডেশনটি কিনতে চান, সেটির শেড গুগলে সার্চ করলেই শেড সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে যাবেন। আমি যেটা করি, আমার স্কিনের কাছাকাছি শেডগুলো জুম করে আমার স্কিনের পাশাপাশি ধরি। তারপর একটি আয়না নিয়ে রোদে গিয়ে মিলিয়ে দেখি যে কোনটা ম্যাচ করে। এভাবে আমি অনেকবার ফাউন্ডেশন কিনেছি এবং মোটামুটিভাবে আমার স্কিনে ম্যাচও করে গেছে।
তবে স্কিন অনুযায়ী পারফেক্ট ফাউন্ডেশন শেইড, কালার কারেক্টর ইত্যাদি কিভাবে বাছাই করবেন, এ নিয়ে সাজগোজে অলরেডি বলা হয়েছে। তাই প্রোডাক্টগুলো সে অনুযায়ী বাছাই করে রাখতে পারেন আগেই।
৩. রেপলিকা প্রোডাক্ট
অনলাইনে এখন নকল/রেপলিকা প্রোডাক্টের ছড়াছড়ি। অনেকেই কম দাম পেয়ে ইচ্ছামত রেপলিকা মেকাপ প্রোডাক্ট-গুলো কিনছেন। এক্ষেত্রে আমি বলবো, যে দাম দিয়ে রেপলিকা কিনছেন, সে দামেই রিজনেবল ব্রান্ডের ভালো মানের মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন। শুধু শুধু রেপলিকা কিনে নিজের স্কিনের ক্ষতি করবেন কেন? এই কারণে আমি আজ পর্যন্ত কোনো রেপলিকা মেকআপ কেনার সাহস পাই নি। অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক হতে হয় রেপলিকা প্রোডাক্ট নিয়ে।
৪. স্কিনের জন্য কতটা পারফেক্ট
নতুন কোনো মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার আগে অবশ্যই নেটে তার রিভিউ দেখে নিবেন। এই মেকআপ প্রোডাক্টটি আপনার স্কিনের জন্য পারফেক্ট কিনা সেটা সম্পর্কেও কিন্তু জেনে নেওয়া উচিত। হুট করে একটা প্রোডাক্ট দাম দিয়ে কিনে ফেলে রাখার কোনো মানেই হয় না।
৫. চেনা পেইজে অর্ডার করুন
অনেক সময় কোন একটা মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে মন চায় কিন্তু ওয়েবসাইট /পেইজে এভেইলেবল থাকে না অথবা অনেক সময় মেইন ওয়েবসাইটে সেল থাকে তখন আমরা প্রি-অর্ডার করে থাকি। প্রি-অর্ডারে সাধারণত ৩০%-৫০% টাকা আগেই দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এই প্রি-অর্ডার এর ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকবেন। এই প্রি-অর্ডার করতে গিয়ে আমার একবার অনেকগুলো টাকাই জলে গিয়েছিল। তাই চেনা পরিচিত পেজেই প্রি-অর্ডার করার চেষ্টা করবেন।
৬. সোয়াচ দেখে নিবেন
আই মেকআপ প্রোডাক্ট-এর ক্ষেত্রে ইউটিউব-এ বিউটি গুরুদের রিভিউ এবং সোয়াচ দেখে নিবেন। অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা পারফেক্ট করতে এ থেকে বেশ ভালো আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
৭. রিটার্ন পলিসি
অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কিনলে অনেক সময় প্রোডাক্ট-টি রিটার্ন করা লাগতে পারে। তাই কেনার আগেই ওয়েবসাইট/পেজের রিটার্ন পলিসি জেনে নিন। অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা তাহলে আরও ঝামেলাহীন মনে হবে।
৮. হুট করেই প্রোডাক্ট কিনবেন না
অনলাইনে একটা লিপস্টিক দেখলাম। কালার-টা পছন্দ হলো, কিনে ফেললাম। এমনটা আমিও একবার করেছিলাম। শখ করে দুটো লিপস্টিক কিনে ফেলেছিলাম। হাতে পাওয়ার পর ঠোঁটে লাগিয়ে দেখলাম আমাকে একদম মানাচ্ছে না। সেই লিপস্টিক দুটো আমার ড্রয়ারের কোণে আজও পড়ে আছে। অথচ টাকাগুলো পানিতে গেল।
তাই, পছন্দ হলো। আর হুট করে কিনে ফেলবেন না। আগে একটু নেট ঘেটে নিবেন। নেটে ফেয়ার, মিডিয়াম এবং ডার্ক স্কিনে লিপস্টিক সোয়াচের অনেক ছবি আছে। সেখান থেকেই দেখে আপনি বুঝে নিতে পারবেন যে আপনার পছন্দের কালারটি আপনাকে মানাবে কিনা।
৯. ইনগ্রেডিয়েন্টস দেখে কিনুন
অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনা নিয়ে আর একটি বিষয় যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো মেকআপ প্রোডাক্ট এর ইনগ্রেডিয়েন্টস। মেকআপ প্রোডাক্ট-এর কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস অনেক সময় অনেককে স্যুট করে না। আর যেহেতু অনলাইনে কিনবেন তাই চেক করে নেওয়ার ও উপায় থাকে না। তাই কেনার আগে অবশ্যই ইনগ্রেডিয়েন্টস সম্পর্কে সার্চ করে নিবেন।
১০. রিয়েল ও ফেইক প্রোডাক্টের ডিফারেন্সগুলো জানুন
অনেক অনলাইন পেইজ তো রেপলিকা প্রোডাক্টগুলো বলেই সেল করে। কিন্তু কিছু অসাধু সেলারও কিন্তু রয়েছে। তারা রেপলিকাকেই আসল বলে আপনাকে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই এক্ষেত্রেও আপনার বন্ধু হতে পারে গুগল/ইউটিউব। সেখানে রিয়েল এবং ফেইক প্রোডাক্ট এর ডিফারেন্সগুলো বলা হয়ে থাকে। সেটা দেখে আপনি আসল এবং নকলের পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। তাছাড়া যারা রেগুলার কিনে অভ্যস্ত বা এক্সপার্ট, এমন চেনা কেউ থাকলে তাদের সাথে অবশ্যই কেনার আগে আলোচনা করুন। আর ফেসবুকে কিন্তু এখন কিছু গ্রুপও আছে, যেখানে আপনি খারাপ প্রোডাক্ট বা অনলাইন শপ নিয়ে রিভিউ বা সতর্ক করে দিতে পারেন। ঐ গ্রুপ-গুলোতে থেকেও আপনি এ ব্যাপারে আরও অনেক ধারণা পেতে পারেন।
এইতো জেনে নিলেন যে অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার সময় কী কী বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আশা করছি, আপনাদের হেল্প হবে।