মেকআপ আসলে এমন তলোয়ার যার দুইদিকেই ধার। এর সঠিক ব্যবহারে আপনার ব্যাক্তিত্বের সবচেয়ে বেস্ট ফিচার গুলো যেমন ফুটে ওঠে তেমনি আপনি যদি ব্যাকডেটেড মেকআপ টেকনিক ইউজ করেন আপনার মুখে মুহূর্তেই ১০-১২ বছর অ্যাড হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে যেটা প্রধান সমস্যা সময়অনুপযোগী আর খারাপ মেকআপ টেকনিকের সাথে আমাদের আরেকটি বদভ্যাস হচ্ছে নিজের বয়স মাথায় না রেখে কচি থেকে বুড়ো সবাই একই পার্টি মেকআপ নিয়ে বসে থাকা! (আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলামনা কেন একজন কিশোরী বা তরুণী দিনের বেলা ফুল কাভারেজ প্যানকেক মেকআপ নেয়ার জন্য এত অস্থির!) তা পার্লারেই হোক আর ঘরেই হোক। এখন কারো যদি নিজ থেকেই নিজেকে এতোটা বয়স্ক করে ফেলার ইচ্ছা থাকে তবে বি মাই গেস্ট… কিন্তু যারা রেগুলার মেকআপ করেন না, কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে এক্তু গ্ল্যামারাস লুক চান এই বুড়োটে দেখানোর ঝক্কি ছাড়া তবে এই টিপস গুলো একটু মাথায় রাখবেন।
[picture]
ভুল নং ১-নিজের ত্বকের চেয়ে হালকা রঙের ফাউন্ডেশন
৯০ এর দশকে দেশে মেকআপ যখন মাত্র পপুলার হয়েছিল, সবাই আরও ফর্সা হবার জন্য নিজের শ্যামলা রঙের উপরে সাদা পাউডার আর ফাউন্ডেশন লাগাত। মনে রাখবেন ফাউন্ডেশনের কাজ আপনাকে ফর্সা করা নয়। আপনার স্কিন টোন ইভেন করা। আপনি যদি এখনও ৯০ এর দশকে আটকে থাকেন তবে আপনাকে তো সেই যুগের মানুষই মনে হবে তাই না? Trendy হন। নিজের ত্বকের শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
ভুল নং ২-কেকি ফাউন্ডেশন
মেকআপে নতুন অনেকেই বোঝেন না এই ‘কেকি’ ব্যাপারটা কী। সোজা কথায় বুঝাই। আপনি কি মনে করেন আপনার ত্বকে অনেক দাগ ছোপ? দাগ ছোপ ঢাকার জন্য ফুল কাভারেজ মেকআপ নেবেন ভাবছেন? আপনার কি কনসিলার আছে? না কি শুধু প্যানকেক দিয়ে সব ব্রণ ঢেকে ফেলবেন? সবকটি প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যা’ হয় তবে মনে রাখবেন- ঈদের দিন আপনার মেকআপ কেকি লাগবে। আগেও বলেছি, ফাউন্ডেশনের কাজ আপনার স্কিন টোন ইভেন করা। ত্বকে ব্রণ/দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করুন। ফাউন্ডেশনের মোটা পরত থাকলে সবাই ভাবে আপনার ত্বকে এত সমস্যা যে আপনি হালকা কাভারেজ নিতে পারেন না। আর ভারী মেকআপ সবাই বয়স্ক ম্যাচিওর নারীর সাথে কানেক্ট করে। বয়স যার যত কম কাভারেজ ততই কম হওয়া উচিত।
ভুল নং ৩-চিকণ ভ্রূ
এখানেও একই কথা। আমাদের সেই ৯০ দশক থেকে নারীদের ভ্রূ প্লাকের নামে নিজের ঘন ভ্রূ সুতার মত চিকণ করে ফেলতে দেখে মনে এঁটে গেছে, বয়স্ক নারী মানেই চিকণ ওভারপ্লাকড ভ্রূ। যেখানে কমবয়সী মেয়েরা ভ্রূ প্লাক করত না। এখন তো ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই অনেকে ভ্রূ প্লাক শুরু করে। যাতে করে ক্লাস এইট নাইনের কিশোরীকেও দেখে মনে হয় ২৫-২৬ এর যুবতী। বুঝতে পারছেন চিকণ ভ্রুর সাথে বয়স কীভাবে কানেক্টেড?
ভুল নং ৪-ড্রাই স্কিন
আর্দ্র, ডিউয়ি স্কিন থাকে টিন এজারদের। আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতা কমে এখানে সেখানে ড্রাই প্যাচ দেখা যায়। আপনি যদি মেকআপ করার আগে ভালো ভাবে ত্বক ময়েশচারাইজ না করেন তবে ড্রাই প্যাচ গুলো ঢাকার বদলে আরও হাইলাইট হয়ে যায়। এটা মেকআপ করার সময় ওভার এক্সাইটমেনটে আপনি খেয়াল না করলেও আপনার সামনের মানুষটা কিন্তু ঠিকই খেয়াল করে!
ভুল নং ৫-ম্যাট লিপস্টিক
অনেকেই ম্যাট লিপস্টিক লুক পছন্দ করেন। কিন্তু সব বিউটি গুরুই বলেন ম্যাট লুক নেবার আগে ভালো করে লিপ স্ক্রাব করে লিপবাম লাগিয়ে নিতে নইলে বয়সের সাথে সাথে ঠোঁটে পড়ে যাওয়া লাইনস আর ঠোঁটের ড্রাইনেস ম্যাট লিপস্টিকে খুব বাজে ভাবে ফুটে থাকে। আর ঠোঁট পাতলা আর অপুষ্ট দেখায়। নিজের বয়স যদি মেকআপ দিয়ে না বাড়াতে চান তবে সঠিক ভাবে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করুন।
ভুল নং ৬-ডার্ক লিপ লাইনার
মনে আছে ছোট বেলায় আমাদের মা-কাকিরা ডার্ক শেডের লিপ লাইনারের সাথে একটু হালকা শেডের লিপস্টিক লাগাতেন? তাদের যুগে সেই লুক খুব পপুলার ছিল। কিন্তু এখন তো দিন বদলেছে, তাই না? পুরনো যুগে আটকে থাকলে আপনাকেও তাদের সমসাময়িক মনে হবে। নিজের লিপস্টিকের সাথে মিলিয়ে লাইনার লাগান। কোন ভাবেই যেন লাইনার আলাদা ভাবে বোঝা না যায়।
ভুল নং ৭-রুক্ষ চুল
মেকআপের সাথে যদি চুলের কথা মনে না রাখেন আর চুলটা থেকে যায় রুক্ষ আর ফ্রিজি। আপনাকে মধ্যবয়স্ক দেখাতে সময় লাগবে না। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল আর্দ্রতা হারায়। ঝামেলা এড়াতে এখন থেকেই চুলে মাস্ক আর ডিপ কনডিশনিং ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
ভুল নং ৮-ব্যাকডেটেড হেয়ারস্টাইল
আপনার যদি চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছা না থাকে তো কোন সমস্যা নেই। সামনে থেকে একটু ব্যাংস করে নিন অথবা আরও কমে চুলের সিঁথিটা বদলে নিন। নতুন স্টাইল আমাদের লুকে ‘the same old you’ ভাইবটা চেঞ্জ করে একটা trendy আর সফিসটিকেটেড লুক দেয়।
ভুল নং ৯-চোখের নিচে কেকি কনসিলার
অনেক বেশি ডার্ক সার্কেল থাকলে ঢাকার জন্য কনসিলার ইউজ করতে পারেন। কিন্তু দিন বয়ে যাবার সাথে সাথে যদি ঘন কনসিলারের পরত চোখের নিচে কেকড হয়ে যদি বলিরেখার মত দেখায় আপনি তবে একদিনেই কিন্তু বয়স ২০ বছর বাড়িয়ে ফেলবেন। মনে রাখবেন, অনেক কনসিলার ব্যবহার করলেই কিন্তু ডার্ক সার্কেল ভালো ঢাকবে না। আর ভালো মানের কনসিলার ব্যবহার করুন আর সেটিং পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। আর কনসিলার কেকি হবে না।
ভুল নং ১০- হলদে দাঁত
দাঁতে যেন বিন্দু মাত্র হলদেটে ভাব না থাকে। তাহলে দেখলে মনে হবে অনেক যুগ ধরে পান খেতে খেতে এই অবস্থা হয়েছে। কমবয়সীদের দাঁত হলদে হয় না বলে হলদে দাঁতের সাথে বয়স্কদের কানেক্ট করা হয়। দাঁতের হলদে ভাব দূর করুন।
সবশেষে আরেকবার মনে করিয়ে দেই। সারা বছর মেকআপ করেন না বা মেকআপ সম্পর্কে কিছু জানেন না , ওকে, কোন সমস্যা নেই। জানার চেষ্টা করুন । এখানে যে পয়েন্ট গুলো নিয়ে কথা বললাম সব খুবই ছোট ছোট ভুল। কিন্তু একসাথে দুই তিনটা করে ফেললেই ডিজাস্টার! ঈদের মেকআপের নাম করে মুখে গাদা গাদা প্রোডাক্ট লাগালেই কিন্তু আপনাকে ভালো লাগবে না। আয়নায় দেখুন নিজেকে কীভাবে ভালো লাগবে নিজে ঠিক করুন। অন্য কারো লুক দেখে চিন্তা ভাবনা না করে কিছু করবেন না যেন!
লিখেছেনঃ মীম তাবাসসুম
ছবিঃ নিউআর্টকালার্জ.কম