আপনি কি চল্লিশোর্ধ ও পরবর্তী পর্যায়ে প্রবেশ করছেন? জানেন কি চল্লিশোর্ধ মহিলার ১০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কোনগুলো? যদি আপনি চল্লিশোর্ধ হয়ে থাকেন তাহলে অন্য সব কাজ সরিয়ে রেখে দশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। হ্যাঁ, পরীক্ষাগুলো চল্লিশোর্ধ মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন বলা হয় যে প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। মহিলাদের জীবনে প্রাক রজোবন্ধ (মেনোপজ) পর্যায় অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ে তাদের মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন, মোটা হবার প্রবণতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এই বয়সের মহিলাদের বিভিন্ন রোগে ভোগার প্রবণতা থাকে। তারা প্রকৃত চেহারার পরিবর্তন সহ হার্ট, হাড় ও চোখের সমস্যারও সম্মুখীন হন।
প্রাক রজোবন্ধ পর্যায়ে শরীরের ইস্ট্রজেন মাত্রা হ্রাস হয় এবং নারীরা তাদের মাসিক চক্রের একটি চরম পরিবর্তন অনুভব করেন। কখনো অত্যাধিক আবার কখনো সামান্য রজঃস্রাব বেদনাদায়ক হতে পারে। এটি মহিলাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, এই পরিবর্তনের সময় হজম ক্ষমতা হ্রাস পায় ফলে মহিলাদের ওজন বাড়তে থাকে ও তারা মোটা হতে থাকেন। তাই ঋতুজরার পরে স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিরোধ করার ভালো উপায় হলো কিছু অপরিহার্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া । এখানে চল্লিশোর্ধ মহিলাদের জন্য দশটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি তালিকা দেওয়া হল। সেগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
প্রতিটি চল্লিশোর্ধ মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা
(১) প্যাপ স্মেয়ার
এটি একটি অত্যন্ত সহজ পরীক্ষা যা আমরা অধিকাংশ মানুষই উপেক্ষা করে থাকি। প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষা চল্লিশোর্ধ মহিলাদের জন্য আবশ্যক কারণ এই পরীক্ষা সার্ভিকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিরিশ বছরের উপরের মহিলারা এই পরীক্ষা শুরু করতে পারেন কিন্তু চল্লিশ পেরোলে এই পরীক্ষা দুই -তিন বছরে একবার করা খুবই আবশ্যক।
(২) থাইরয়েড সক্রিয়তা
সবচেয়ে অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা যা আজকের নারী মোকাবেলা করে থাকেন তা হলো থাইরয়েড সমস্যা। কিছু মহিলা হাইপোথাইরয়েডিজমে ভোগেন আবার কিছু মহিলা হাইপারথাইরয়েডিজমে। পা ফোলা, হাত পা ও জয়েন্টগুলোতে ব্যাথা থাইরয়েড সমস্যার সাধারণ উপসর্গ।
(৩) ম্যামোগ্রাম
চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রিকাতে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বিশেষত চল্লিশোর্ধ মহিলাদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য সবচেয়ে ভাল উপায় হল একটি সহজ ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা।
(৪) হাড়ের ঘনত্ব
বয়স বাড়ার সাথে হাড়ের অবনতি শুরু হতে থাকে। চল্লিশের পরে হাড়ের ঘনত্বের পরীক্ষা অত্যন্ত দরকারি। এটি অস্থিভঙ্গ প্রতিরোধ করে।
(৫) হৃদরোগ
এটা দেখা যায় যে বয়সের সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই চল্লিশ পেরোলেই নিয়মিত হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত চেকআপে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে আকস্মিক মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়।
(৬) ওভারিয়ান ক্যান্সার
মহিলাদের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যান্সার বেশিরভাগই ঋতুজরার পরে দেখা যায়। তাই ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে ঋতুজরার আগেই মহিলাদের নির্দিষ্ট পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
(৭) ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড়ের ক্ষয় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। চল্লিশোর্ধ মহিলাদের ভিটামিন ডি এর বেশি প্রয়োজন যা ক্যালসিয়াম শোষণ করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। তাই ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।
(৮) ডায়াবেটিস
চল্লিশোর্ধ মহিলারা টাইপ-টু ডায়বেটিসে বেশি আক্রান্ত হন। শরীর গ্লুকোজের সমত্ব বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না, তাই ডায়বেটিসের হানা রুখতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
(৯) রক্তচাপ
মহিলাদের ঋতুজরার পরে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা খুব বেশি মাত্রায় দেখা যায়। তাই ঋতুজরার আগেই এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। চল্লিশে পৌঁছলেই নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তচাপে নজর রাখা আবশ্যক।
(১০) চোখ
বয়সের সাথে আমাদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। দৃষ্টি ঝাপসা এবং চোখ শুষ্ক হতে আরম্ভ করে। এছাড়া ছানি বা গ্লকৌমা ক্রমে দেখা দিতে পারে আর তাই চল্লিশ পেরোলেই নিয়মিত চোখের পরীক্ষা ভীষণ জরুরি।
এই তো জেনে নিলেন চল্লিশোর্ধ মহিলার ১০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কোনগুলো তা বিস্তারিত। এখন সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করতে উদ্যোগী হন।
ছবি – সংগৃহীতঃ ফটোগ্রাফারসক্যানভেরা ডট কম