চুল পরা বন্ধ করার জন্য কত রকম মাস্ক, কত তেল, আরও কত কিছুই তো আপনারা ব্যবহার করেন। কিন্তু একটু সাবধানে থাকলেই আর নিয়ম মেনে চললেই এই চুল পড়া বন্ধে অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারেন। এখানে এমন কয়েকটি অভ্যাস বা নিয়মের কথা তুলে ধরা হলো যা আপনার চুল কম পড়তে সহায়তা করবে।
চুল পরা বন্ধে মেনে চলুন ১০ টি নিয়ম জেনে নিন
(১) চুল পড়া বন্ধে বালিশের কাভার
সিল্কের তৈরি বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। সুতির তৈরি কাপড়ের উপর আপনার চুল সারা রাত পড়ে থাকে আর তখন সুতির কাপড় আপনার চুলের সমস্ত ময়েশ্চার শুষে নেয়। ফলে চুল অনেক শুষ্ক হয়ে যায় আর বালিশের কাপড়ের সাথে ঘষা লেগে লেগে আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। সিল্কের কাপড় কখনও চুলের ময়েশ্চার শুষে নেয় না। তাছাড়া সিল্কের তৈরি বালিশের কাভার ব্যবহার করলে চুলে জট বাঁধবে না।
(২) তোয়ালের ব্যবহার
চুল শুকানোর জন্য তোয়ালে ব্যবহার না করে আপনার কোন পুরোনো টি শার্ট বা পুরোনো পরিষ্কার নরম কাপড় ব্যবহার করুন। কারণ সুতির বালিশের কাভারের মতোই তোয়ালেও এক-ই ভাবে চুলের ময়েশ্চার শুষে নিয়ে চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ, প্রাণহীণ এবং ভঙ্গুর করে তোলে।
(৩) চুল পড়া বন্ধে চুলের আগা ছাঁটা
প্রতি ৬ সপ্তাহে চুলের আগা ছাঁটতে হবে কারণ দু’মুখো চুল আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ট্রিম না করলে এই ফাটার পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।
(৪) ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু
চুলের যত্নে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যেটার মধ্যে ন্যাচারাল অয়েল থাকে। যেমন নারিকেল তেল, জ়োজ়োবা তেল ইত্যাদি। এতে চুল ময়েশ্চেরাইজ থাকবে। মাইল্ড বা ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টসযুক্ত শ্যাম্পুতে চুলের ক্ষতি কম হয়।
(৫) চুল পড়া বন্ধে ভেজা চুলে স্টাইল
হালকা ভেজা চুল হলেও তা ভালো মত শুকিয়ে বাঁধতে হবে। আপনি যে ধরনের স্টাইলেই চুল বাঁধুন না কেন, তার আগে সম্পূর্ন চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে হবে।
(৬) চুল শুকানো
হেয়ার ড্রায়ারের মাধ্যমে চুল না শুকিয়ে বাতাসে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। কারণ হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর। রেগ্যুলার হিট স্টাইলিং করার অভ্যাস থাকলে সেটা কমিয়ে আনুন। অকেশনালি আপনি স্টেইটনার বা ড্রায়ার ইউজ করতে পারেন, কিন্তু তার আগে চুলে হিট প্রটেক্টিং স্প্রে দিয়ে নিতে হবে।
(৭) পনি টেইল
মেয়েদের একটি কমন চুলের স্টাইল হচ্ছে পনি টেইল। যারা সব সময় টাইট পনি টেইল করে তাদের চুল বেশি পরে বা ভেঙ্গে যায়। তাই সব সময় পনি টেইল ঢিলা করে করবেন। ইলাস্টিক এর রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করবেন না।
(৮) ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করুন
আপনার চুলের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করুন। প্রচুর পরিমাণে ফল, পানীয় আর প্রোটিন খান। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন খেতে পারেন। ভেতর থেকে পুষ্টি পেলে চুল এমনিতেই সুন্দর হয়ে উঠবে।
(৯) কন্ডিশনারের ব্যবহার
ডিম কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করলে তা আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো করতে সাহায্য করবে, কারণ ডিমে আছে প্রচুর প্রোটিন। চুলের ৭০ শতাংশই হলো কেরাটিন প্রোটিন। তাই ডিমের প্রোটিন ড্যামেজ হয়ে যাওয়া চুলকে আবার আগের মতো সুন্দর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। ডিমের কন্ডিশনার আপনি খুব সহজেই প্রস্তুত করতে পারেন।
প্রথমে একটি ডিম ভেঙ্গে তার সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। একটি কাঁটা চামাচ দিয়ে ভালো মতো মেশাতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো মতো ধুয়ে নিন। চুলের অতিরিক্ত পানি হাত দিয়ে চেপে চেপে ঝরিয়ে নিন। এরপর একটি শুকনো তোয়ালে দিয়ে একবার শুধু চুলগুলো চেপে ধরে আবার ছেড়ে দিন, কিন্তু চুল শুকানোর চেষ্টা করবেন না। এবার চুলের প্রতিটা অংশে ডিম আর অলিভ অয়েলের মিশ্রণ লাগান। যাদের চুলের আগা ফেটে যায় তারা চুলের আগায় মিশ্রণটি ভালো মতো লাগাবেন। এব্র একটি শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন এবং ১০ – ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ডিমের কন্ডিশনার ধুয়ে ফেলুন ভালো মতো ।
(১০) চুল আঁচড়ানো
ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না। অনেকে গোসল শেষ করে চুল তোয়ালে দিয়ে মুছেই চুল আঁচড়ে নেন। এতে করে চুল অনেক বেশি পড়ে কারণ ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে। ঐ সময় চুলে টান লাগলে চুল খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ে বা ঝরে পড়ে। তাই চুল শুকানোর পরে তা আঁচড়ান।
চুলে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করার পাশাপাশি এই নিয়মগুলো মেনে চললে কোন ঝামেলা ছাড়াই চুল পড়া কমানো যায়।
ছবি – Shutterstock