যৌন সুস্থতা এক সময়কার অনেক বড় একটা ট্যাবু হলেও এখন কিন্তু আর নয়। শারিরীক, মানসিক, আত্মিক – সবরকম সুস্থতায় পূর্ণতা আনে যৌন সুস্থতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুসারে যৌনতা বিষয়ে পরিপূর্ণ শারিরীক, আবেগীয়, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার পূর্নাঙ্গ রূপটিকেই বলা হচ্ছে যৌন সুস্থতা, শুধুমাত্র যৌন রোগ বা যৌন দুর্বলতাই নয় কিন্তু, কমন মিসকনসেপশন হয়ত আপনার বা আমার, আমাদের অনেকের মাঝেই থাকতে পারে। যৌনবাহিত রোগ কী, জানেন? তা কিন্তু ডিটেইলস জানতে হবে সবাইকে! সর্বাঙ্গ সুন্দর সুস্থ স্বাভাবিক একটি জীবনের জন্য কিন্তু এ সুস্থতার কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে হয়ত কয়েক দফায় আপনাদের সাথে আলোচনা করা যাবে, কিন্তু আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, আর তা হল কী কী উপায়ে যৌন সুস্থতা বজায় রাখা যায়।
যৌন সুস্থতা তথা সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা বজায় রাখতে কিছু টিপস
১. স্বাস্থ্যকর ডায়েট
সুষম খাবার নিয়মিত খেলে তা আমাদের একটিভ রাখতে সাহায্য করে। এতে দেহ সঠিক পুষ্টি পায় যা নানা বিষয়েই দেহকে আগের চেয়েও বেশি সুস্থ ও একটিভ রাখে যা সুস্থ যৌন জীবন বজায় রাখার পূর্বশর্ত। এবং তারই সাথে মদ্যপানের অভ্যাসকেও বিদায় জানাতে হবে। কারণ মদ্যাপান হতে পারে ইনফার্টির্লিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের সেক্সুয়াল লাইফকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম ও ইয়োগা মানুষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহীও করে তুলতে পারে।
৩.ধূমপান বর্জন
ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক ক্ষতিকর হবার পাশাপাশি মানব দেহের ফার্টিলিটি-এর উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট (শুক্রাণুর পরিমাণ) মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে পারে।
৪. স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা
অতিরিক্ত ওজন সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন- অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন হলে TSH, T3, T4 হরমোন-এর ইমব্যালেন্স-এর বা PCOS (PolyCystic Ovary Syndrome) ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে যা সাভাবিক সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
৫. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
নিজেকে, নিজের দেহ, পোশাক আশাক পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গীর পজিটিভ অ্যাপ্রোচ সৃষ্টি করতে এটি সাহায্য করে। পরিচ্ছন্ন শরীর, পরিষ্কার অন্তর্বাস সঙ্গীকে একটি ইতিবাচক ভূমিকায় ধাবিত করে।
৬. সঙ্গীর সাথে সুস্থ শারিরীক ও মানসিক যোগাযোগ বজায় রাখা
সঙ্গীর সাথে স্বাভাবিক সম্মানজনক সম্পর্ক ও যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা যৌন সুস্থতার সবচেয়ে বড় দিক। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাবিউজিভ রিলেশনশিপ-এ কখনই সুস্থ যৌনতা বজায় রাখা সম্ভব নয়।
৭. নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে জানা
অনেক সময় আমরা শারিরীক এবং মানসিক যৌন হয়রানির মধ্যে দিয়ে যাই, যা অনেক সময়ই আমাদের মত অনেকেই সঠিকভাবে বুঝতে পারি না। এর ফলে সুস্থ মানসিক গঠন অসম্ভব হয়ে ওঠে। যেমন রাস্তাঘাটে এমনকি ঘরেও চোখকান খোলা রাখা যাতে এই বাজে মুহূর্তের স্বীকার না হতে হয়।
৮. মানসিক সুস্থতা
মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন ইত্যাদি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলেও ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে যা সুস্থ সেক্সুয়াল লাইফ-এর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৯. জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান
নিয়মিত নিজের জন্য সঠিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন কন্ডম বা বার্থ কন্ট্রোল পিল ইত্যাদি) জানা ও তা ব্যবহার করা অতি আবশ্যকীয়। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ব্যারিয়ার মেথড কনডম বেস্ট অপশন।
১০. ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
আমাদের মধ্যে এখনো বেশির ভাগ মানুষই এবিষয়ে আলাপ করবার বা ডাক্তার কনসাল্ট করতে ভয় পান বা সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারে না। রোগের শেষ পর্যায়ে অনেক সময় পৌঁছে যায় লোকজন। তখন সমস্যাটা সমাধান করা আরও কষ্ট হবে, নাকি?
সর্বপ্রকার কুসংস্কার থেকে দূরে থাকুন। নিজে ভাল থাকুন, নিজের পরিবারকে ভাল রাখুন। সর্বাঙ্গীন সুস্থতা ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখলেই জীবন হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়।
ছবি- সাটারস্টক