আপনি কি জানেন, আপনি কতক্ষণ ঘুমালেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার ঘুম কতটুকু ভালো হয়েছে? আপনি ৬ ঘণ্টা ঘুমালেন ঠিকই কিন্তু তা “Deep Sleep” ছিল না। ঘুম থেকে উঠার পরও সারাদিন একটি অপরিপূর্ণ ঘুমের অনুভূতি নিয়ে কাটল, তাহলে কিন্তু আপনার কোন উপকারই হলো না। রাতের ঘুম ভালো হবার উপরই পরের দিনটি কেমন যাবে তা নির্ভর করে। এমনকি পরের দিনের যাবতীয় কাজের রুটিন করা দরকার আগের রাতেই। কিন্তু সারাদিন নানারকম কাজের ধকলের পর অনেকেই রাত হলে কোনভাবে বিছানায় ঘুমাতে পারলেই বাঁচেন। এতে যা হয় রাতের ঘুমটিও ভালো হয় না, পরদিনের নানারকম কাজের চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। সাথে সাথে পরের দিনটিও অগোছালো হয়ে যায়। চলুন তবে জেনে নেই রাতের ঘুম কিভাবে ভালো হতে পারে!
রাতের ঘুম ভালো হতে ১০টি টিপস
সত্যি কথা বলতে আমি কখনোই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার মতো মেয়ে ছিলাম না। এর পিছনে অন্যতম কারণ হলো আমার রাতে ঘুমোনোর কোন নির্দিষ্ট সময় ছিল না। রাত জাগার স্বভাব ছিল। এতে দেখা যায় পরদিন অনেক বেলা পর্যন্ত আমি ঘুমাতাম। কিন্তু সেই ঘুমটাও ভালো হতো না। যাকে আমরা বলি “Sound Sleep”. নিজের এমন ক্ষতি টের পেয়ে নিজেই চেষ্টা করলাম এই বাজে অভ্যাস বদলাতে। নানারকম রিসার্চ (research)-এর পর রাতের বেলার একটি পারফেক্ট রুটিন তৈরি করলাম। আপনাদের জন্য তাই রাতে ঘুমাবার আগে কী কী করা উচিত ও কী করলে আপনি একটি আরামদায়ক ঘুম পাবেন তার কিছু টিপস শেয়ার করলাম। তাই দেখুন এবার-
(১) আজকের কাজ আজই শেষ করুন
পরদিনের জন্য কোন কাজ রেখে দিবেন না। এতে সারারাত একটি প্রেশার কাজ করবে। যারা চাকরি করেন তাদের অফিসের কোন কাজ বাকি থাকলে শেষ করে নিন। তাহলে রিল্যাক্স (relax) হয়ে ঘুমাতে পারবেন। তবে যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন অফিসের কাজ অফিসে শেষ করে আসতে।
(২) কাজের লিস্ট
পরদিনের কাজের একটি লিস্ট (list) করে নিন। তাহলে দেখবেন আপনার সারাদিনের সব কাজ সঠিকভাবে সঠিক সময়ের মধ্যে করতে পারছেন। এর সাথে পরদিন কোন কাপড়টি পড়বেন, তা ইস্ত্রি করে রাখতে পারেন, ব্যাগও গুছিয়ে রাখুন। এতে সকালবেলা তাড়াহুড়ো করতে হবে না! এমনকি কোন কিছু ভুলে যাওয়ারও সুযোগ থাকবে না।
(৩) রাতের খাবার
রাতের খাবারের একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন। প্রতিদিন সেই একই সময়ে ডিনার করার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়ার ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন।
(৪) ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখুন
ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগেই মোবাইল (mobile)-এ নাইট মুড (night mood) অন করে দিন। কোন রকম নোটিফিকেশন (notification) পপ আপ (pop up) হবে না ও আপনার একটু পর পর মোবাইল চেক করারও প্রয়োজন পড়বে না।
(৫) বেড ও রুমটি গুছিয়ে নিন
যে রুমটিতে ঘুমাবেন তা যদি অগোছালো হয়, তবে সেখানে কখনওই প্রাশান্তি নিয়ে ঘুমাতে পারবেন না। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজের রুম ও বিছানাটি সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিন। গোছানোর পর দেখবেন আপনার তখনই মন চাইবে একটু ঘুমিয়ে নেই।
(৬) হালকা লাইট ব্যবহার করুন
হালকা আলোতে আমার নিজের অসম্ভব ভালো লাগে। এটি একটি সুদিং (soothing) ও রিল্যাক্সিং (relaxing) একটা অনুভূতি দেয়। রাতে ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই রুমে হালকা লাইট জ্বালিয়ে রাখুন। দেখবেন হালকা আলোতে আপনার সারাদিনের সব ক্লান্তি ধকল দূর হয়ে যাবে।
(৭) নিজের পরিচর্যা
সারাদিনের সব কাজের প্রেশার (pressure) শেষে রাতের সময়টুকু অন্তত নিজের পরিচর্যার জন্য রাখুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখের ত্বকের, চোখের, গলার, ঘাড়ের, হাত ও পায়ের শরীরের প্রত্যেকটি অংশের আলাদাভাবে যত্ন নিন। অবশ্যই সবশেষে ত্বক ময়েশ্চারাইজ (moisturize) করতে ভুলবেন না।
(৮) গোসল
সবশেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি আরামদায়ক গোসল আপনার পেশিকে রিল্যাক্স করে। হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। দেখবেন এই গোসল আপনাকে সারারাত একটি প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি দিবে ও ঘুমাতে সাহায্য করবে। যদি গোসল করা সম্ভব না হয় তাহলে দাঁত ব্রাশ করে, হাত-মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে পারেন।
(৯) প্রার্থনা করুন
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা কিন্তু মেডিটেশন (meditation)-এর মতোই কাজ করে। গোসল শেষে বিছানায় যাওয়ার আগে নিজ ধর্ম অনুযায়ী কিছুক্ষণ প্রার্থনা করে নিন ও আজকের পুরো দিনের জন্য ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস করা খুবই ভালো একটি গুন।
(১০) বই পড়ুন
বিছানায় গিয়েই অনেকে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এভাবে কখনওই ঘুম আসে না। বিছানায় শুয়ে আপনার পছন্দের একটি বইয়ের কয়েকপাতা পড়ুন। দেখবেন আপনার অনেক স্ট্রেস (stress) কমে আসবে আর সাথে ঘুম ঘুম ভাবও আসবে।
দেখবেন সকল ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে কত প্রশান্তি নিয়ে ঘুমাতে পারছেন আপনি। পরদিনের সকালটিও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন। এই হলো আমার রাতের রিল্যাক্সিং নাইট রুটিন (relaxing night routine)। কয়েকদিন এই রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করে দেখুন, এর উপকারিতা নিজেই বুঝতে পারবেন। সবাই সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!
ছবি- সংগৃহীত: amazonaws