গ্রীষ্মকাল তার পুরো তাপ নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। দিনে দিনে তেজ বাড়ছে গরমের। মানুষজনের প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার জোগাড়। এই সময়ে সুস্থ থাকতে কিছুটা বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা সবারই উচিত। বাচ্চা বা বয়স্ক মানুষ কেবল নয়, তরুণরাও থাকছে নানা রকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে। তাই সাবধান থাকা অবশ্য করণীয় কাজ।
ইট-পাথরের নগরকে তো নরক নামে ডাকা হয় এমনিতেই, এই সময়ের আগুনের মতো উত্তপ্ত নগর সেই নামটা পুরোপুরি সার্থক প্রমাণ করে যায়। তাপমাত্রার পারদ বাড়তেই থাকে, দিনে-দুপুরে বাইরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। তবুও জীবিকার তাগিদে মানুষ বের হয় পথে। গরমের তেজকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা নিয়েই এমন সময়ে বের হওয়া উচিত। হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়া না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে নিজেকেই।
- বের হলে সবসময় সাথে পানি রাখা লাগবে। যতো অল্প সময়ের জন্যেই বাইরে যাওয়া হোক না কেনো এক বোতল পানি সাথে থাকা চাই। এই গরমে পিপাসা না লাগলেও শরীরে পানির প্রয়োজনীয়তা থাকে অনেক বেশি। গলা ভিজিয়ে রাখার জন্যে হলেও খানিকটা পানির মজুদ নিজের কাছে থাকা উচিত।
- স্যালাইন অথবা গ্লুকোজ পানি খুব কাজে লাগে এই সময়ে। অধিক দুর্বলতা থাকলে বা বাইরের গরম সহ্য করার ক্ষমতা যদি কম থাকে তবে গ্লুকোজ পানি পান করাটা বেশ উপকারী হয়। সাধারণ পানির বদলে তাই স্যালাইন বা গ্লুকোজ পানি নেয়া যায় বোতলে।
- দরকারের বাইরে রোদে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে যেতে হবে। বাইরে কোন কাজ না থাকলে ভবনের ভেতর বা যেকোন ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করা ভালো। হয়তো আপনি নিজেকে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ঠিক ভাবছেন, কিন্তু রোদের অত্যধিক তেজ আপনাকে অসুস্থ বোধ করাতে খুব বেশি সময় নেবে না। সামলে থাকুন আগেভাগেই।
- ছাতা বহন করুন। ছাতা কেবল বাদলা দিনের সঙ্গী এমন ভুল ভাবনা নিশ্চয় আপনার নেই? চড়া রোদে হাঁটতে গেলে ছাতার দরকার বোধ হবেই। তাই দরকারের জিনিষ ব্যাগে ভরে রাখুন মনে করে।
- হালকা রঙ ও হালকা নকশার পোশাক হোক গরমের দিনে আপনার পছন্দ। হালকা রঙগুলি সূর্যালোকের প্রতিফলন ঘটাবে, তাতে গরমে আরাম পাবেন আপনি। আর পোশাক যতো হালকা ততোই স্বস্তিদায়ক হয়। অনুষ্ঠান বা উৎসবের জন্যেও পোশাক বাছাই করার আগে গরমের চিন্তা মাথায় রাখুন।
- অল্প আহারে সন্তুষ্ট হোক উদর। খাবারে পরিমিতি আনুন। বাইরের এই মাথা ঘোরানো তাপে ভূরিভোজ দিয়ে যদি দেহের তাপও বাড়িয়ে ফেলেন, অসুস্থ হবার বেশি বাকি থাকবে না আপনার। খাবার বেছে চলুন, সবসময়ই সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র এটা।
- একবারে অনেক না খেয়ে স্বল্প পরিমাণে বারেবারে খেতে পারেন। বিরিয়ানি, পোলাও-মাংস জাতীয় খাবার খেলে তার সাথে পর্যাপ্ত সালাদ ও পানীয় রাখুন।
- নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা খুব বেশি জরুরী। সম্ভব হলে দিনে একাধিক বার গোসল করুন। বাইরে থেকে ফিরে ঘাম শুকিয়ে নিয়ে পানির ঝাঁপটায় নিজেকে পরিষ্কার করুন। ঘাম থেকে জীবাণু বাসা বাঁধবে শরীরে, ফলাফল পাবেন অসুস্থতায়।
- বড় চুল খোলা না রেখে বেঁধে রাখুন সবসময়। খোলা চুল ঘাড়ে বা মুখের পড়ে থেকে র্যাশ হতে পারে ত্বকে। তাছাড়া ঘামে চিটচিটে ত্বকে চুল লেগে থাকাটা নিজের জন্য অস্বস্তিদায়ক, চুলেরও ক্ষতি হয় এতে।
- কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন নিয়মিত। অপরিষ্কার কাপড় অসুস্থ করবে আপনাকেই। কাজেই সাবধান।
কিছুটা বুঝে – শুনে চললেই এই তেজী গরমকালকে পাল্লা দিয়ে ফুরফুরে থাকা সম্ভব। দরকার কেবল একটু সচেতন থাকার, আর গ্রীষ্মকালও হয়ে উঠবে হাসিখুশি, ঝলমলে!
ছবি – সাটারস্টক
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব