নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সের অনেক শিশুরই দেখা যায় খাওয়ানোর সময় অযাচিত হেঁচকি উঠতে থাকে। যদিও হেঁচকির ব্যাপারটি বেশ স্বাভাবিক, কিন্তু অনেক সময় বাবা মা এটি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আজকের লেখায় শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা সহজ কয়েকটি টিপস নিয়ে কথা বলবো।
শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি কেন উঠে?
সবার আগে শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা কি কারণে হতে পারে তা জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত হেঁচকি ওঠার কারণ হচ্ছে শিশুর ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদায় অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিচে থাকে। শিশু খাবার খেতে খেতে যদি কোন কারণে ডায়াফ্রামের উপর চাপ পড়ে ঠিক তখনই শিশুর হেঁচকি উঠতে থাকে।
শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা বন্ধে ১০টি টিপস
১. শিশু মায়ের বুকের দুধ খেয়ে থাকলে হেঁচকি ওঠার সাথে সাথে শিশুকে খানিকটা বুকের দুধ খাওয়ান। তাহলে তরল দুধ শিশুর খাবারের পথ নরম ও মসৃণ করবে এবং ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
২. যদি শিশু বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খায়, তাহলে হেঁচকি উঠলে শিশুকে নরম খাবার খেতে দিন। এক্ষেত্রে আপেলের সস, রাইস সিরিয়াল, চটকানো কলা এগুলা বেশ ভালো সমাধান হতে পারে।
৩. যদি শিশুর বয়স ১ বা তার থেকে বেশি হয় তাহলে তাকে সাধারণ তরল পানি খেতে দিন। এতেও ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে শিশুকে গ্লাসে করে পানি না খাওয়ানোই শ্রেয়। এই বয়সের শিশুর জন্য নিপলযুক্ত ওয়াটার বটল ব্যবহার করা উত্তম।
৪. হেঁচকি বন্ধ হলে শিশুর খাবার গতি ধীর করুন। তাড়াহুড়া করে খাওয়াতে গেলে হেঁচকি বেশি উঠতে পারে। তাই শিশুকে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে খাওয়ান। খেতে না চাইলে জোর করবেন না। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পরে আবার খাওয়ান।
৫. অনেক সময় খাওয়ানোর সময় শিশুর পজিশনের কারণেও হেঁচকি উঠতে পারে। তাই শিশুকে যখনই খাওয়াবেন, চেষ্টা করবেন শিশু যাতে সোজা হয়ে বসে। এতে ডায়াফ্রাম স্বাভাবিক জায়গায় থাকে এবং খাবার চলাচলে কোন সমস্যা হয় না।
৬. আপনার শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয় তাহলে হেঁচকি উঠলে তাকে অল্প করে চিনি খাওয়াতে পারেন। এক চিমটি পরিমাণ চিনি তার জিভের মধ্যে দিয়ে দিন। শিশু নিজেই খেয়ে নেবে। যদিও এর কোন সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা বা স্বীকৃতি নেই তবে প্রাচীন পদ্ধতি অনুসারে এটি মাঝে মাঝে বেশ কার্যকরী।
৭. যদি শিশুর অনেক বেশি হেঁচকি উঠতে থাকে, তাহলে শিশুর খাওয়া বন্ধ করুন। তাকে চিত করে শোয়ান এবং পিঠে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এতে ডায়াফ্রাম এর অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
৮. যদি শিশুর হেঁচকি নিয়মিত হয়, তাহলে ফার্মেসি থেকে Gripe Water এনে রাখতে পারেন। Gripe Water হচ্ছে আদা, ইথার, ফেনল এবং আরো কিছু ক্যামিক্যালের মিশ্রণ। Gripe Water দুই ফোঁটা পানির সাথে মিশিয়ে ড্রপারে করে শিশুকে খাওয়ালে হেঁচকি কমে যাবে।
৯. অনেক সময় শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিলেও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। যেমন শিশুর হেঁচকি উঠলে তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। ঝুনঝুনি জাতীয় কোন খেলনা এনে দিন, বা এমন কিছু দেখান যা শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এতে হেঁচকি অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়।
১০. তবে কিছু জিনিস করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। অনেকে না জেনে নিচের জিনিসগুলো করে থাকেন যা অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে ব্যথা দিতে পারে। যেমন –
- আপনার শিশুকে চমকে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হয়তো অনেক সময় কাজ করে কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে।
- শিশু মুখের ভেতর আঙ্গুল ঢুকাবেন না।
- শিশুকে ঝাঁকাবেন না। এতে শিশুর বমি হতে পারে।
- মাথায় বা গলায় অযথা চাপড় দেবেন না।
- পিঠে ম্যাসাজের বদলে চাপড় মারবেন না।
আগেই বলেছি হেঁচকি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে শিশুর বেশি অস্বস্তি হলে উপরের টিপস গুলো মেনে চলে শিশুর হেঁচকি কমানো সম্ভব।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক