জীবনের সব ক্ষেত্রে স্মার্ট হতে রপ্ত করুন এই ১০টি কৌশল

জীবনের সব ক্ষেত্রে স্মার্ট হতে রপ্ত করুন এই ১০টি কৌশল

4-1

শিলা আর মিলা দুইজন সহকর্মী। একই সাথে তারা একটি স্বনামধন্য কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছে। শিলার মাঝেমাঝেই মনে হয় মিলা বা অন্য সহকর্মীরা যেভাবে নতুন কোনো দক্ষতা সহজেই আয়ত্ত্ব করতে পারে, তেমনটা সে পারে না। বিষয়টা নতুন যে তা নয়, বরং স্কুল, কলেজেও একই সমস্যা সে অনুভব করেছে। আজকাল সে এই সমস্যাটা থেকে বের হতে চাইছে এবং কাজে কর্মে আরো স্মার্ট হতে চাইছে। আমাদের অনেক ছোট ছোট অভ্যাস আর চিন্তার মধ্যেই যে স্মার্টনেস লুকিয়ে থাকে, সেটা কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না! আপনিও যদি শিলার মতো স্মার্ট হতে চান, আপনার ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে চান, নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করতে চান, অথবা জীবনের সব ক্ষেত্রে ভালো করতে চান, তাহলে বাড়তি বুদ্ধিমত্তা হতে পারে চাবিকাঠি। আজকের ফিচার স্মার্ট হওয়ার ১০টি সহজ ও কার্যকরী টিপস নিয়েই।

স্মার্ট হওয়ার ১০টি টিপস

স্মার্ট হতে সবাই চান। কিন্তু কীভাবে? নতুন কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি আপনার মস্তিষ্কের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারেন এবং দ্রুত স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেন। চলুন জেনে নেই ১০টি টিপস যা আপনার স্মার্ট হওয়ার জার্নিতে সহায়ক হবে।

১। বেশি বেশি পড়ুন

পড়াশোনা আপনাকে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে পরিচিত করাতে পারে, যা আপনার ব্রেণের নিউরনকে উদ্দীপ্ত করে এবং মস্তিষ্ককে উন্নত করতে সাহায্য করে। আপনার বুকশেলফ থেকে একটি বই নিয়ে পড়তে পারেন, ফোনে একটি রিডিং অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন, অথবা লাইব্রেরিতে যান—মূল বিষয় হলো পড়ার জন্য সময় বের করুন। পরবর্তী বই বাছাই করার সময় ভিন্ন টপিকের বই বেছে নিন। এতে আপনি নতুন তথ্য শিখতে পারবেন এবং আপনার শব্দভাণ্ডারও বৃদ্ধি পাবে যা স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে।

২। একই মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে সময় কাটান

স্মার্ট মানুষের সঙ্গে সময় কাটালে আপনি ম্যাজিকালি স্মার্ট হবেন না ঠিকই, তবে এটি আপনাকে এমন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে যারা আপনাকে প্রেরণা যোগাবে। নতুন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির মুখোমুখি হওয়া আপনাকে চিন্তা করতে আরও বেশি সুযোগ দেবে। এটি স্মার্ট হওয়ার দ্রুততম পদ্ধতিগুলোর একটি।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম করুন

অনেক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস শুরু করুন, জিমে জয়েন করুন। ব্যায়াম আপনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখবে, মানসিকভাবেও প্রফুল্ল রাখবে, যার পজেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে আপনার কর্মজীবনে।

৪। নতুন ভাষা শিখুন

একাধিক ভাষায় কথা বলা আপনার কগনিটিভ দক্ষতাকে সক্রিয় করে এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের দক্ষতাকে উন্নত করে। নতুন ভাষা শেখার জন্য প্রবল মনোযোগ, ফোকাস ও সেলফ কন্ট্রোল প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিভাষী মানুষ সাধারণত বাকি সবার থেকে স্মার্ট হয়। তাই, ভাষার ক্লাসে ভর্তি হওয়া একটি দারুণ ব্যাপার হতে পারে।

৫। নতুন কিছু শেখার সুযোগ খুঁজুন

যদি আপনি ছাত্র না হন, তবে শেখা থেমে যাবে এমনটি ভাববেন না। আজকাল অনলাইনে প্রায়ই বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং নেয়া যায়। যে বিষয়টির প্রতি আপনার আগ্রহ রয়েছে, সেই বিষয়ে একটি পডকাস্ট শুনুন অথবা ভিডিও দেখুন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যোগ দিন। প্রতিদিন ২০- ৩০ মিনিট নতুন কিছু শেখার জন্য ব্যয় করার পর আপনি কতটা স্মার্ট অনুভব করবেন, ভাবুন তো!

৬। স্ক্রীন টাইম কমান

স্মার্ট হতে চাইলে প্রথমে আপনার স্ক্রীন টাইম ট্র্যাক করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে কগনিটিভ পারফরমেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ক্রীন টাইম সীমিত করতে এবং মনোযোগ বাড়াতে রিমাইন্ডার (reminder) অ্যাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আপনি ফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস মুছে ফেলতে পারেন অথবা শুধুমাত্র দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ফোন ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।

৭। মেডিটেশন করুন

ধ্যান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার পাশাপাশি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যদি আপনি অস্থিরতা বা উদ্বিগ্নতা অনুভব করেন, ধ্যানের অভ্যাস আপনার শরীর ও মনের অস্থিরতা দূর করতে সাহায্য করবে। এটি স্ট্রেস ও উদ্বেগ দূর করার পাশাপাশি নতুন দক্ষতা শিখতে মনোযোগী হতে সাহায্য করে, যা স্মার্ট হওয়ার জন্য বেশ সহায়ক।

৮। ব্রেইন গেম হতে পারে দারুণ একটি অপশন 

পরিমিত মাত্রায় ভিডিও গেম খেললে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ে এবং এটি আমাদের ফোকাস উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। অনেক শিক্ষামূলক গেম আছে যা গণিত ও ভাষাবিদ্যা শিখাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফ্যান্টাসি ও অ্যাডভেঞ্চার বেইজড ভিডিও গেমগুলো বাস্তব জীবনের অনুমান করার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে এটি যেন নেশার পর্যায়ে না যায়!

৯। সীমিত মাত্রায় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণ করুন 

আমরা সবাই জানি কফি আমাদের এনার্জি দেয়। এছাড়াও পরিমিত ক্যাফেইন ফোকাস করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মন-মেজাজ ভালো রাখে এবং মোটিভেশন বাড়ায়। এই অভ্যাস আপনাকে নতুন তথ্য ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। দেখবেন, সকালে এক কাপ চা বা কফি আপনার মুডকেই বদলে দেয়! তবে হ্যাঁ, ক্যাফেইন ইনটেক যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়, সুগার যেন না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা কিন্তু মাস্ট!

১০। জীবনের সব ক্ষেত্রে স্মার্ট হতে আপনার কল্পনাকে মুক্ত করে দিন

স্বপ্ন দেখা, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ফোকাসড থাকা ও সৃজনশীলভাবে চিন্তা করা আপনাকে জীবনে অনেকটা এগিয়ে দিবে। কখনো কখনো আমরা নিজেরা নিজেদের সিচুয়েশনকে অত্যন্ত কঠিনভাবে ভাবতে বাধ্য করি। এর পরিবর্তে যদি আমরা মস্তিষ্ককে বিশ্রাম নিতে এবং সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে দিই, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

মনে রাখবেন, বুদ্ধিমত্তা মানে হচ্ছে আপনার চারপাশের সবার থেকে বেশি জানা নয়। বুদ্ধিমত্তা মানে নতুন কিছু আবিষ্কার করা এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করা। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সর্বোত্তমভাবে কার্যকরী হয়ে আপনার স্মার্ট হওয়ায় ভূমিকা রাখে। একজন স্মার্ট মানুষ নিজের ভুল নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, সেই অনুযায়ী নিজেকে শুধরে নিয়ে মোটিডেট করেন এবং সাবধানতার সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নেন। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকবেন!

ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ

 

0 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort