খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা, রান্নাবান্নার কাজ শেষ করে বাচ্চাকে খাওয়ানো তারপর অফিসের দিকে দৌড়ানো। এ হলো জয়তার দৈনন্দিন কাজের শুরুর চিত্র। এত সব করে সময় মত অফিসে পৌঁছানোও একটা চ্যালেঞ্জ। তারপর আবার যা জ্যাম রাস্তাঘাটে! আজ আবার জয়তার অফিসে জরুরী মিটিং। আর এদিকে স্বামী রায়হানকে নিয়ে পৌঁছাতে হবে এয়ারপোর্টে। তার প্যাকিং, খাবার সবই বাকি।
এই অতি ব্যস্ততার চিত্র আমাদের সকলেরই চেনা। আধুনিক জীবনের সাথে তাল মেলাতে সারাদিন শুধু ছুটে চলা। সারাদিন এভাবে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা সবাই দিশেহারা। ডেডলাইন মেইনটেন করাই যেন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য! ফলে তৈরি হয় ডিপ্রেশন ও হেরে যাবার যন্ত্রণা। তবে এত সব ব্যস্ততার সমন্বয় করতে পারলে অনেক কষ্ট এড়ানো সম্ভব। তাই দ্রুত জীবন যাত্রার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন এবং সফলতাকে মুষ্টিবদ্ধ করুন।
০১. পরিকল্পনা তৈরী করুনঃ
প্ল্যান করুন এবং সে অনুপাতে চলার চেষ্টা করুন। সল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করুন। যেমন ছয় মাস পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এক বছর পরে, পাঁচ বছর পরে এবং দশ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান। জীবন যদিও প্ল্যান অনুযায়ী চলে না। তবুও যতটুকু সম্ভব। এতে করে আপনার মানসিক চাপ কমবে। পরিবার নিয়ে কোথাও যেতে চান বেড়াতে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে পারেন। কখনও শেষ মুহূর্তের জন্য ওয়েট করবেন না। অফিস ও বাসার কাজ ভাগ করে নিন। প্রতিদিন রাতে শোবার আগে পরের দিনের কাজের লিস্ট করে রাখুন। পরের দিন লিস্ট মিলিয়ে কাজ করুন। এতে করে কাজ মিস হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকবে না।
০২. নিজেকে প্রকাশ করুনঃ
রাগ, দুঃখ এসব আবেগ মনে চেপে রাখবেন না। আপনার চিন্তা ভাবনা কে শ্রদ্ধা দিতে জানে এমন কাছের বন্ধুটির কাছে নিজেকে প্রকাশ করুন। মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন। ঠিক তেমনিভাবে ভালবাসাকেও প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। ছোটখাট ঘটনার মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করুন। এতে আপনার ভেতরে ভাল লাগা তৈরি হবে এবং আপনি আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারবেন।
০৩. প্রায়োরিটি অনুসারে কাজ করুনঃ
একজন মানুষের প্রতিদিন অনেক কাজ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বুঝতে হবে কোন কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব অনুসারে কাজের সিরিয়াল তৈরী করতে হবে। তাই প্রথমেই বেশি কাজের চাপে দিশেহারা হয়ে যাবেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ ভাগ করুন। সেটা বাসার কাজ হোক বা অফিসের কাজ হোক। মনে রাখতে হবে মানুষ হিসেবে আপনার ক্ষমতা ও সময়ের একটা লিমিটেশন আছে। তাই এমন কোন ধরনের লিস্ট করতে যাবেন না, যা অর্জন করা আপনার দ্বারা অসম্ভব হতে পারে।
০৪. ছোট ছোট পদক্ষেপ নিনঃ
প্রথমে ছোট ছোট কাজ সুন্দর ভাবে শেষ করুন। আর নিজেকে ধন্যবাদ দিন যে কাজটি আপনি সুন্দরভাবে শেষ করেছেন। এতে বড় ও কঠিন কাজগুলো করার শক্তি পাবেন। কিছু বিরক্তিকর ও অপছন্দের কাজ সবসময়ই থাকবে। সেগুলো রোবোটিক ভাবে করে যান। করতে ভাল লাগছে কী খারাপ লাগছে এসব মনে আনবেন না। অনেক সময় জড়তা ও অলসতার জন্য কাজ শুরু করতে পারবেন না। কিন্তু মনে কষ্ট পাচ্ছেন। এবার জোর করে প্রথম পদক্ষেপ ফেলুন, দেখবেন সব জড়তা দূর হয়ে গিয়েছে।
০৫. সব কিছু লিখে রাখুনঃ
সারাদিন আমরা নানা রকম কাজ করে থাকি যার সব মনে রাখা আমাদের সম্ভব নয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো টুকে রাখতে পারেন। পরবর্তীকালে কোন সিদ্ধান্ত হতে সরে আসতে চাইলে মনে করতে পারবেন, কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্লেষণ করতে পারবেন কেন সরে আসা দরকার সিদ্ধান্ত থেকে, কেন দরকার নেই।
০৬. প্রতিদিনের জন্য বাঁচুনঃ
মানুষ বাঁচে বর্তমানে, অতীতেও নয় বা ভবিষ্যতেও নয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাবার আগ পর্যন্ত সব কাজ ভাল ভাবে শেষ করতে চেষ্টা করুন। কারন আজকের দিনটি যদি সুন্দর ভাবে শেষ করতে পারেন, তবে যখন আপনি আগামীকাল পেছন ফিরে তাকাবেন তখন দেখবেন আপনার অতীত সমৃদ্ধশালী এবং আপনার ভবিষ্যৎ-ও শক্ত ভিতের উপর দাড়িয়ে আছে।
০৭. ভয়কে জয় করুনঃ
মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু ভয়। কাজ শেষ করতে না পারার ভয়, ব্যর্থতার ভয়, আমি কী পারবো এরূপ নানাবিধ ভয়ে আমাদের জীবন যাত্রা ব্যহত যা সফলতার সবচেয়ে বড় বাঁধা। ভয় জয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া। পুকুরে একবার ঝাঁপ দিয়েই দেখুন, শীতের ভয় দূর হয়ে গেছে।
০৮. নিজেকে সময় দিনঃ
ব্যস্তময় জীবন থেকে কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। এ সময় আপনার পছন্দের কিছু করতে পারেন। পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন। সব কাজ ভুলে, এসময় অন্যরকম কিছু করুন, অন্যরকম ভাবুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই নিজেকে বলুন, ‘আমি ভাল আছি’। দৃঢ় ইচ্ছা শক্তির উপরে নির্ভর করে বলা এই কথা আপনাকে শক্তি ও সাহস দিবে।
০৯. ভাল করে ঘুমানঃ
ঘুমানোর সময় আমাদের ব্রেন ও পেশি সারাদিন কাজ করার পর রিল্যাক্স করে। ভাল করে না ঘুমালে কাজ করার উৎসাহ থাকে না। কাজে মনোযোগ দেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ভাল ভাবে ঘুমান। চেষ্টা করুন প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যেতে ও ঘুম থেকে উঠতে।
১০. সবসময় পজেটিভ থাকুনঃ
বলা হয়ে থাকে যে, চিন্তা করুন পজেটিভ, কথা বলুন পজেটিভ ও কাজ করুন পজেটিভ তাহলে সাফল্য আপনার হাতে ধরা দিতে বাধ্য। সুখী ভবিষ্যতের ছবি ভিজুওয়ালাইজ করলেও স্ট্রেস অনেক কমে যায়। আপানার সারাদিনের কাজের সমন্বয় সাধন করতে পজেটিভ আচরণ করার কোন বিকল্প নাই। যেহেতু সফলতাই আমাদের জীবনে এক মাত্র কাম্য। তাই দ্রুত জীবন যাত্রার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন এবং সফলতাকে মুষ্টিবদ্ধ করুন।
লিখেছেনঃ মৌনতা