সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় আজকে আপনাদেরকে জানাবো। ডায়েট মানা বা ডায়েট ফলো করা মেডিসিন গ্রহণের মতই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ডায়েট চার্টকে নিছক সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায় ভাবা ভুল। মনে রাখবেন শুধু মাত্র চিকন হওয়া বা মোটা হওয়ার জন্য ডায়েট চার্ট দেয়া হয় না। বিভিন্ন অসুখ এর পথ্য হিসেবেও কিন্তু ডায়েট চার্ট দেয়া হয়ে থাকে। তাই এই ডায়েট চার্ট এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আসি মুল প্রসঙ্গে- প্রথমেই আসি ক্র্যাশ ডায়েট প্রসঙ্গে, ক্র্যাশ ডায়েট সবার জন্য না। শুধু মাত্র তাদের জন্য যাদের খুব দ্রুত ওজন না কমালেই না। যেমন- কেউ একজন এর বাংলাদেশ ফো্র্স যাওয়ার জন্য ওজন কমাতে হবে ১ মাসের মধ্যে। তাকে হয়তো ক্র্যাশ ডায়েট দেয়া যেতে পারে তবে অবশ্যই অল্প সময়ের ফলোআপে রেখে। যা করবেন ১ জন ডায়েটেশিয়ান। কিন্তু সবার জন্য এ ডায়েট চার্ট প্রযোজ্য নয়।
ক্র্যাশ ডায়েট কী?
ক্র্যাশ ডায়েট হল খুব অল্প পরিমাণ খাবারের মাধ্যমে অতি দ্রুত ওজন কমানো। যেমন আপনার চাহিদা যদি থাকে ১৮০০ ক্যালরি খাবারের, সেই ক্ষেত্রে যদি সেই চাহিদা কমিয়ে ৭০০=৮০০ তে নিয়ে আসে এবং খাবারে যদি শর্করা এবং চর্বির পরিমাণ পুরোটাই কমিয়ে খুব অল্প পরিমাণ খাবার দেয়া হয় তবে সেটাকে আমরা ক্র্যাশ ডায়েট ধরতে পারি।
অনেকেই আছেন যারা অন্যকে দেয়া ডায়েট চার্ট ফলো করেন। কোন একজন পরিচিত ব্যক্তিকে ১ জন ডায়েটিসিয়ান ১টি চার্ট দিল, আপনি দেখলেন যে সেই ব্যক্তিটি সেই চার্ট ফলো করে উপকার পেল, আপনিও সেই চার্ট শুরু করে দিলেন।
আমার প্রশ্ন কাউকে ডাক্তার যখন কোনও ১টা রোগের জন্য মেডিসিন দেয় তখন সেটা কি ডাক্তারকে না দেখিয়ে আপনি সেবন করে ফেলেন?? উত্তর যদি না হয় তবে ডায়েট চার্ট এর ব্যাপারে এই অবহেলা কেন?
প্রত্যেকটা মানুষের আলাদা আলাদা ওজন, উচ্চতা, গড়ন থাকে, আলাদা সমস্যা থাকে, ভিন্ন রোগ থাকে। প্রত্যেক এর খাবারের ধরন একেক রকম হয়। কিছু খাদ্যে কারো এলা্র্জি থাকে, কোন খাবারে কারো যেমন হজম হয় না, কারো আবার খুব পছন্দের তালিকায় থাকে সে খাবার গুলো। কাউকে যখন ১ জন ডায়েট চার্ট দেয় তখন অনেক গুলো বিষয় মাথায় রেখে তারপর দিতে হয়। সে বিষয় গুলো আপনার সাথে না মিলার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।
মোটা হওয়া বা খুব বেশি চিকন হওয়া ২টা-ই কিন্তু রোগ। তাই না জেনে না বুঝে চার্ট ফলো করবেন না। দরকার হলে ডায়েটেশিয়ানদের কাছে যান।
ক্র্যাশ ডায়েট এর কুফলগুলো কী?
ক্র্যাশ ডায়েট যখন কাজ করে অর্থাৎ যখন ওজন খুব দ্রুত কমতে থাকে তখন আমরা খুব খুশি হয়ে যাই। কিন্তু এই ডায়েট ফলো করে পরবর্তীতে এমন কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যা হয়তো আপনি টেরই পাবেন না যে এই ডায়েট এর কারণে হয়েছে। আপনি দেখছেন যে ওজন কমছে কিন্তু আপনি বুঝবেন না যে তাতে কোন ফ্যাট কাটছে না, শুধু আপনার শরীর এর সঞ্চিত গ্লাইকজেন ব্যবহার হচ্ছে যা শর্করা থেকে আসে। আসুন জেনে নিই তেমন কিছু সমস্যা-
১. মেয়েরা যখন ক্র্যাশ ডায়েট নেয়া শুরু করবেন, হুট করেই মাসিক এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনিয়মিত হয়ে পড়তে পারে মাসিক।
২. ক্র্যাশ ডায়েট অর্থাৎ অতি দ্রুত ওজন হ্রাস আপনার বিপাকীয় কার্যাবলী নষ্ট করে দিতে পারে।
৩. শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কেড়ে নেয়ার সাথে সাথে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেড়ে নেয়।
৪. পানি শূন্যতা, বুক ধড়ফড় করা, এবং কার্ডিয়াক স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয়। ক্রাশ ডায়েট হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
৫. শরীর এর অম্ল- ক্ষার ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কিডনী তে সমস্যা করে।
৬. ক্র্যাশ ডায়েট বিষণ্ণতা এবং হতাশা বৃদ্ধি করে। কারণ পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেয়ে আপনার মস্তিস্ক কাজ কমিয়ে দিবে।
৭. পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে ভবিষ্যতে osteoporosis হতে পারে কারণ আপনার শরীর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাবে না।
৮. মস্তিস্ক , কিডনি এবং হার্ট ছাড়া ও শরীর এর অন্য মূল্যবান অঙ্গ কাজ করা কমিয়ে দিতে পারে।
৯. শরীরে কিটোনবডি তৈরি হতে পারে।
১০. এই সকল কারণে পরবর্তীতে সন্তান ধারনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১১. ক্র্যাশ ডায়েট হল never-ending cycle. যা আজীবন চালাতে হবে, কারণ সেটা ছেড়ে দিলেই আবার ওজন বাড়তে থাকবে।
একটি কথা মনে রাখবেন ওজন ধীরে কমানো ভালো। সপ্তাহে ১-১১/২ কেজি কমান খুব বেশি হলে। এর চেয়ে বেশি কমিয়ে নিজের সমস্যা ডেকে আনবেন না। অন্যের চার্ট ফলো করবেন না। আমাদের দেশে অনেক ভালো ডায়েটেসিয়ান আছেন যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। তাদের সাহায্য নিন, এবং সঠিক নিয়মে নিজের ওজন কমান।
ছবিঃ সংগ্রহীত – দ্যআইডিয়ালমুসলিম.কম, সাজগোজ.কম