চুলের যত্নে বিভিন্ন রকম তেলের ব্যবহার যুগযুগ ধরে হয়ে আসছে। আজকে আমরা কথা বলব নারকেল তেলযুক্ত নারকেল তেল, আর নারকেল তেলবিহীন নারকেল তেল নিয়ে! কি অবাক হচ্ছেন?
আমরা জেনে না জেনে শুধু রঙিন বিজ্ঞাপন আর প্যাকেজিং দেখে মুগ্ধ হয়ে কিন্তু মার্কেট থেকে একগাদা টাকা দিয়ে তেল কিনে নিয়ে আসি আর ভাবি অমুক তেল ব্যবহারে এক রাতের মধ্যেই আমাদের চুল একদম টেলিভিশন কমার্শিয়ালের মডেলদের মত হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে কি তা হয়?
উত্তরটা হচ্ছে – না।
সাজগোজের ইনবক্সে অনেক প্রশ্ন আসে যে, কোন তেলটা চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। এ প্রশ্নের উত্তর যদি দিতে হয়, তাহলে শুরুতে আপনাদের জানতে হবে কোন ধরণের তেল চুলের জন্য লং রানে নিরাপদ এবং খুব সহজে স্কাল্পে প্রবেশ করতে পারে, সেই সাথে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর কোন রেসিডিউ থেকে যায় না।
নারকেল তেল, সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য এবং সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভও বটে। আপনার স্ক্যাল্পের ভিতরে প্রবেশ করে চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে তোলে নারকেল তেল। চুলের উপরের লেয়ারে প্রাকৃতিকভাবে একটা শীল্ড তৈরি করে থাকে। যার ফলে বাইরের প্রখর তাপ, ধুলোবালি আর দূষণ থেকে চুলগুলো রক্ষা পায়। চলুন একনজরে দেখে নিই, কেন চুলের যত্নে সত্যিকারের নারকেল তেলযুক্ত নারকেল তেলটাই সেরা।
[picture]
(১) নারকেল তেলে থাকা লরিক এসিড চুলের জন্য ক্ষতিকারক ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ হতে দেয় না। ফলে চুল পড়া কমে।
(২) নারকেল তেল চুলের জন্য সেরা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। চুল এবং স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার লেভেলকে ধরে রাখে, ফলে স্ক্যাল্পের ইরিটেশন দূর হয় এবং ইচিং হয় না।
(৩) নারকেল তেল চুলের জন্য প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। ফলে সূর্যের ক্ষতিকারক আলোর প্রভাবে চুলের ক্ষতি হওয়া থেকে চুলকে রক্ষা করে।
(৪) নিয়মিত স্ক্যাল্পে নারকেল তেল ম্যাসাজের ফলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুল পড়া কমে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
(৫) নারকেল তেলের সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
(৬) চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা, ভঙ্গুরতা দূর করতে সক্ষম নারকেল তেল।
(৭) নারকেল তেল চুলের ফলিকলে গভীর থেকে পুষ্টি জোগাতে সক্ষম।
(৮) আপনি শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললেও নারকেল তেলের লেয়ারের কারণে হেয়ার প্রোটিন লস হয় না। ফলে চুল দেখায় প্রাণবন্ত আর উজ্জ্বল।
(৯) নারকেল তেলে থাকা ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার চুলকে ডিপলি কন্ডিশন করে। ফলে আপনি ভালো করে নারকেল তেল দিয়ে মাথার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে, সেই সাথে চুলে লাগালেও আপনার চুল হয়ে উঠবে মসৃণ, ঝলমলে আর উজ্জ্বল।
(১০) কেমিক্যালি ট্রিটেড চুলের জন্য সবচেয়ে সেরা হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্ট হচ্ছে নারকেল তেল। বিউটি পার্লারগুলোতেও হেয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য বেইজ প্রোডাক্ট হিসেবে নারকেল তেলকেই বেছে নেয়া হয়।
(১১) বিভিন্ন হেয়ার স্টাইলিং এর সময় আমরা চুলে যে হিট এবং বিভিন্ন রকম স্প্রে ব্যবহার করে থাকি, সেগুলো দূর করে চুলকে হেলদি করে তুলতে সাহায্য করে নারকেল তেল। হেয়ার বিল্ড আপ প্রোডাক্ট রিমুভিং এর জন্য নারকেল তেলের বিকল্প নেই।
বর্তমানে বাজারে যেসব দেশি বিদেশি নারকেল তেল পাওয়া যায়, তাতে যে আসলে কতটুকু নারকেল তেল বিদ্যমান সেটা নিয়ে তো বরাবরই আমার সন্দেহ ছিলই। নারকেল তেলে আদৌ নারকেল তেল আছে কিনা সেটা জানার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তেলটা বাটিতে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন। যদি আধঘণ্টা পর জমে যায়, তাহলে বুঝবেন ওতে নারকেল তেল আছে, কারণ নারকেল তেলে আছে এসেনশিয়াল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা তাপমাত্রা কমলে জমে যায়। আর যদি একেবারেই না জমে তাহলে বুঝবেন, আপনি ধরা খেয়েছেন।
দিনের শেষে টাকাও আপনার, চুল ও আপনার। সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ঝলমলে চুল পেতে হাজার হাজার টাকার প্রোডাক্ট কেনার কিন্তু প্রয়োজন নেই। চুলের জন্য শুধু নারকেল তেলই যথেষ্ট। তবে সে নারকেল তেল টা হতে হবে নারকেল তেলযুক্ত নারকেল তেল, নারকেল তেলবিহীন নারকেল তেল নয়।
Stay Beautiful, Stay Gorgeous!
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি