আমি খুবই পজেটিভ মাইন্ডের একজন মেয়ে। সবসময়ই হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করি। শুধু পছন্দ করি বললে তা ভুল হবে। হাসিখুশি থাকিও আমি। সবাই আমার মুখে হাসি দেখেই অভ্যস্ত সবসময়। যদি কখনও দেখে আমার মুখে হাসি নেই তবে, সবাই মোটামুটি চিন্তায় পড়ে যায়। ভাবে কি হয়ে গেছে আমার। এমন না যে আমার কখনও মন খারাপ হয় না। একটা মানুষের সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকা তো আর সম্ভব নয়।
তবে আমি খেয়াল করেছি যখনই কোন কারণে আমার মন খারাপ হয় তখন দেখা যায় আমার সাথে এমন সব কিছু হয় যেটাতে আমার মন আরও অনেক বেশি খারাপ হয়। সব খারাপ লাগার মুহূর্তগুলো যেন তখন একের পর এক মনে পড়তে থাকে। আর আশেপাশের মানুষগুলো আমাকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর এত প্রশ্ন করে যে আমার আরও অনেক বেশি বিরক্ত লাগে এবং আরও খারাপ যায় দিনগুলো। কষ্টের পরিমাণ যেন আরও বেড়ে যায়।
সে জন্য আমি সবসময় ভালো থাকারই চেষ্টা করি। তবে উপরওয়ালা এর কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আমি! কখন চেষ্টা করে আমি ব্যর্থ হই না বললেই চলে, সফলই হই। তবে সবসময় যে চাইলেই ভালো থাকা যায় তা নয়। আশেপাশের অনেক কিছুই আমাকে বাধা দেয় ভালো থাকতে। এটা অস্বাভাবিক কিছু যে তা নয়। আমার সাথে প্রায়শই এমন কিছু না কিছু হয় যাতে করে আমার কিছু কিছু দিন অনেক বেশি খারাপ যায়। সময়গুলো পার করাটা অনেক বেশি কষ্টের। প্রতিটা মুহুর্ত যেন অনেক বেশি বড় মনে হয়। কিন্তু আমি সেই খারাপ মুহূর্তগুলোকে কখনোই বেড়ে উঠতে দেই না। সেই সময়গুলোতে নিজের যত্ন নেই, নিজেকে সময় দেই যাতে করে খারাপ সময়গুলো আমাকে ঘিরে ফেলতে না পারে। মন থাকলে ভালো অথবা খারাপ দুটোর সংমিশ্রণই থাকবে। তবে নিজের খারাপ সময়গুলোতে নিজের যত্নটা কীভাবে নিতে হয় তাও আমি জানি। শুধু তো জানলেই হবে না। জিনিসগুলো মানি বলেই আমার ভালো থাকা, আনন্দে থাকা আর খুশি থাকা।
[picture]
আমি শুধু একাই ভালো থাকতে চাই যে এমনটা নয়। আমি চাই আমার মতো করে সবাই যেন খুশি থাকে। সবাই যেন তাদের খারাপ সময়গুলোতে নিজের যত্ন নিতে পারে। খারাপ লাগাটাকে কমিয়ে যেন ভালো থাকতে পারে। তাই আমার খারাপ সময়গুলোতে আমি কী কী করে নিজেকে ভালো রাখি তা শেয়ার করছি-
(১) আমি যেই জিনিসটা সবার আগে ভাবি তা হল স্রষ্টা আমাকে কত সুন্দর করেই না বানিয়েছেন। তিনি আমাকে সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। হাত, পা, মুখ সবই ঠিক আছে। কোথাও কোন সমস্যা নেই। কত মানুষ আছে যাদের হাত নেই, পা নেই, আরও কত রকমের সমস্যা। যার কোনটাই আমার নেই।
(২) আমার মা আমাকে কতোটা ভালোবাসেন এবং আমার জন্য কতো কি করেন। আমার পরবারের বাকি মানুষই আমার কতোটা খেয়াল রাখেন।
(৩) আমি যেই কাজটা করি সবচেয়ে বেশি তা হল আমার সাথে যে ভালো ব্যাপারগুলো ঘটে তা মনে করি একের পর এক। আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা মনে করি এবং শুকরিয়া আদায় করি।
(৪) আমাকে কে কতোটা ভালোবাসে এবং তারা আমার একটু খানি খুশির জন্য কী কী করেছে তা মনে করি। যেমন, আমাকে চমকে দেয়া অথবা কোন পছন্দের গিফট দেয়া ইত্যাদি।
(৫) মাঝে মাঝে আমি মজার ম্যাগাজিনও পড়ি।
(৬) আমার বাসায় বারান্দায় কিছু পাখি আসে প্রায়ই। ওদের খাবার দেই। এতে করে আমার মন ভালো থাকে। বাসায় লালন পালন করা যে কোন পশু পাখিদের সাথে সময় ব্যয় করলে মন অনেক ভালো থাকে।
(৭) নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে কার না ভালো লাগে। যখন কোন কারণে খারাপ লাগে তখন আমি নিজে সুন্দর জামা কাপড় পরি এবং নিজে সুন্দর করে সাজুগুজু করে থাকি কারণ ছাড়াই। আপনার খারাপ সময়গুলোতে করতে পারেন এটা, দেখবেন মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
(৮) মাঝে মাঝে আমি হাসির কোন সিনেমা কিংবা টিভি শো ও দেখি। এতে করে কিছুক্ষণ মনখুলে হাসা যায় মন খারাপ থাকলেও।
(৯) আমি ডিপ ব্রেথিং করি। এটা জাদুর মতো করে কাজ করে। নিজেকে অনেক হালকা লাগে।
(১০) মাঝে মাঝে যখন আমার খারাপ লাগে তখন দেখা যায় কিছুক্ষণের জন্য আমি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো থেকে দূরেই থাকি। কারণ মাঝে মাঝে এসব কারণে উল্টা মন খারাপ হয়। সুতরাং নিজেকে ভালো রাখতে এটাও করতে পারেন।
(১১) যখন সময়গুলো খারাপ যায় আমি সবসময়ই ভাবি যে, এই খারাপ সময়টা আমি অল্প সময়েই পার করতে পারব। যাই সমস্যা হোক না কেন আমি সেটা ঠিক করতে পারব। নিজের উপর বিশ্বাস থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে বিপদ যাই হোক তা ছোট মনে হয়। এবং হাসিমুখে যেকোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যাদের কখনোই মন খারাপ হয় না অথবা নিজের কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয় না। খারাপ এবং ভালো থাকার সংমিশ্রণেই মানুষের জীবন। আর আমিও তাদের থেকে আলাদা নই। আমিও তাদেরই একজন। সুতরাং কখনও খারাপ অথবা কখনও ভালো তো লাগবেই। আমি চাই না খারাপ লাগাগুলো আমাকে খুব বাজেভাবে গ্রাস করুক। খারাপ লাগা থাকবেই। তবে তার মাঝেও নিজের ভালো লাগা গুলোকে খুঁজে নিয়ে ভালো থাকতে পারা, আর মুখে সবার ঐ প্রিয় হাসিটা ধরে রাখাই আমার কাছে জীবনের জীবনের অনেকটা মানে নির্ভর করে।
খারাপ সময়ে নিজেকে ভাল রাখতে পারা এবং মুখে হাসি নিয়ে সবার সাথে কথা বলাটাও জীবনের একটা বড় অর্জন। আপনিও চাইলে নিজেকে ভালো রাখতে পারেন খারাপ সময়গুলোতে এই সাধারণ উপায়গুলো ফলো করে।
আমার কাছে তো এটাই মনে হয় যে- আগে নিজেকে ভালো রাখুন। কারণ নিজে ভালো থাকতে পারলেই পারবেন অন্যকে ভালো রাখতে। আর এতেই খুঁজে পাবেন আপনার জীবনের সার্থকতা।
লিখেছেন – আনিন্তা