একজন মা হিসেবে আপনি অনেক হতাশ হতে পারেন যখন কোনও একটি সুস্বাস্থ্যকর খাবার আপনি অনেক যত্ন ও ভালোবাসা নিয়ে তৈরি করলেন এবং আপনার বাচ্চাটি এসে সেই খাবারটি দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে “ এই খাবার আমার পছন্দ না। আমি খাব না।” মাঝে মাঝে এই খাবার সম্পর্কে আপনি আপনার শিশুকে অনেক বুঝিয়ে থাকেন, এর গুণাগুণগুলো বলেন, কিন্তু একটি শিশুর সন্তুষ্টির জন্য এটি পর্যাপ্ত নয়। তবে ইচ্ছে করলেই সেটা খাওয়ানোর বাহানা খুঁজতে পারেন আপনারা। আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিছু পদ্ধতি যার সাহায্য নিন এবং খুব সহজে আপনার শিশুকে খাবার খাওয়ান। পদ্ধতিগুলো খুবই কার্যকরী। তাহলে দেরি না করে জেনে নিন পদ্ধতিগুলো এবং খুব সহজে আপনার শিশুকে খাবার খাওয়ান ।
শিশুকে খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতি
(১) ছুটির দিন
ছুটির দিনগুলোকে হাতে রাখুন। আপনার বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে চলে যান কোনো মল কিংবা সবজি বাজারে এবং তাকে প্রাধান্য দিন যে সে কোনটি কিনতে চায়? কোন সবজি বা ফল সে কিনতে চায় বা খেতে চায় তাকে জিজ্ঞেস করুন, সেই সাথে প্রত্যেকটি খাবারের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন এবং গুনাগুনগুলো জানান। কাঁচাবাজার ছাড়া আপনি বাচ্চাকে সুপার শপগুলোতেও নিয়ে যেতে পারেন। শিশুকে খাবার খাওয়ান এই অসাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে।
(২) খাবার খাওয়ার জন্য প্রশংসা
আপনার শিশু যদি একটু বড় হয় তবে তাকে শিক্ষার অংশ হিসেবে খাদ্যের রং, জমিন, আকৃতি এবং খাদ্য গুলো কোথায় জন্মে তা সম্পর্কে ধারণা দিন। আরো একটু বড় বেবি হলে তাদেরকে সুযোগ দিন যেন তারা নতুন কোন রেসিপি শিখে এবং বাচ্চাকে সাথে নিয়ে রান্নাটি করুন। খাবার সময় তাকে খাবারের জন্য তার প্রশংসা করতে ভুলবেন না একদম।
(৩) রঙ বেরঙের খাবার
ছোট বাচ্চা, যাদের ৬ মাস- ১ বছর বয়স তাদের জন্য খাবার খাওয়ানোর ধরন একটু ভিন্ন হলেও ব্যাপারটা কিন্তু একই। আপনার শিশুকে রঙ বেরঙের খাবার সামনে দিন। বাচ্চারা এই সময়ে রঙ এর প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। তাই বাচ্চার সামনে কয়েক রঙ এর খাবার ফেলে রাখুন। তবে তাকে জোর করবেন না। দেখবেন কোনো না কোনোটাতে বাচ্চা মুখ দিবেই। রঙ বেরঙের খাবার দেখিয়ে শিশুকে খাবার খাওয়ান।
(৪) বাচ্চার সাথে নিজেও খান
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। তাই তাদের কে খাওয়াতে হলে আগে নিজেকে খেয়ে দেখাতে হবে। বাচ্চা আপনাকে অনুকরণ করবে।শিশুকে খাবার খাওয়ান কিন্তু তার সাথে নিজেও বাচ্চার সাথে খেতে পারেন।
(৫) সুস্বাদু খাবার
খাবার যেন সুস্বাদু হয়, একটু মিষ্টি খাবার শিশুরা পছন্দ করে। আগে নিজে চেখে দেখুন তারপর আপনার শিশুকে খাবার খাওয়ান।
(৬) খাবারে আনুন ভিন্নতা
খাবারে ভিন্নতা এনে শিশুকে খাবার খাওয়ান। শিশুকে সব সময় একই খাবার দিবেন না, এতে করে বাচ্চার খাবারে একঘেয়েমি চলে আসে। তবে বেশি ছোট বাচ্চার জন্য একটি খাবার ২-৩ দিন খাওয়ান।
(৭) চিকিৎসকের পরামর্শ
সবকিছুর পরও অনেক বাচ্চা কিছুই খায় না তাদের কে বলছি, অনেক সময় বাচ্চার পেটে কৃমি হলে তারা খেতে চায় না, বমি করে। তাই সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাছাড়া এমন সব খাবার বাচ্চাকে দিন যা তার জন্য যেমন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তেমনি মজাদার, তেমনি বাড়ন্ত শিশুদের প্রয়োজনীয়।
(৮) মাছের ভিন্ন আইটেম
অনেক বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না, কিন্তু একই বাচ্চাকে ফিশ কাটলেট করে দিন ঠিকই পছন্দ করে খাবে। সমস্যা কোথায়? দিয়ে দিন আপনার পছন্দের খাবারটিতে তার পছন্দ মত চেহারা। ফিশ কাটলেট, চিংড়ি দিয়ে নুডুলস ইতাদি।
(৯) ডিমের ভিন্ন আইটেম
বাচ্চা ডিম খায় না। ঠিক আছে, তার সুজির সাথে ডিমটি মিলিয়ে দিন। বাচ্চা বুঝবেও না। খিচুরির সাথে মিশিয়ে দিন। একটু বড় বাচ্চাদের কে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিতে পারেন, কিংবা ডিম চপ। খাবার ভিন্নভাবে পরিবেশন করুন।
(১০) সবজি রান্নায় ভিন্নতা
সবচেয়ে বড় সমস্যা সবজি নিয়ে। নুডুলস এর সাথে দিন, পাকোড়া বানিয়ে দিন, সবজি রোল বানিয়ে দিতে পারেন। কোনো ১টা খাবার তো নিশ্চয়ই পছন্দ করবে। সাথে চিজ মিলিয়ে দিলে তো সোনায় সোহাগা।
(১১) রুটি অথবা ফ্রাইড রাইস
শিশু ভাত খায় না? রুটি খাওয়ান, ফ্রাইড রাইস করে দিন স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে। বার্গার তৈরি করে দিন নিজ বাসায়। ডিম, রুটি, সবজি, পনির, মাংস সব কিছু দিয়ে তৈরি করে দিন, বাচ্চা পছন্দ করবে আবার আপনার চিন্তাও কমে যাবে।
(১২) খাওয়ার সময় গল্প করুন
বাচ্চারা গল্প শুনতে খুব পছন্দ করে। গল্প শুনতে শুনতে কখন খাবার খেয়ে ফেলে তা খেয়ালই করে না। তাই খাওয়ার সময় মজার গল্প শুনাতে ভুলবেন না কিন্তু। শিশুকে খাবার খাওয়ান গল্প করতে করতে।
আরও অনেক রকম খাবার তৈরি করে খাওয়াতে হবে শিশুকে। মা হয়েছেন, এখন ভালো একজন রাঁধুনি হয়ে যান নিজের ছোট্ট বাচ্চার জন্য।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক