ব্রণ /পিম্পল/ একনে যেন এক দুঃস্বপ্নের নাম। অনেক সময় হরমোনাল কারণে, মেকআপ ঠিক মতো রিমুভ না করার কারণে, অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ আর ঘুম কম হওয়ার কারণে, মাথায় খুশকির সমস্যা থাকলে স্কিনে ব্রণের আবির্ভাব ঘটে। ব্রণ কিন্তু একদিনে সারার জিনিস না। কাজেই একরাতের ভেতর চট করে ব্রণ সেরে যাবে কোন কোম্পানির এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টাকা নষ্ট করে সেই সব হার্মফুল কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট না কিনে, ধৈর্য্য ধরে প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ সারানোর চেষ্টা করাটাই ভালো হবে। এখানে আমি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রণ সারিয়ে তোলার কিছু মেথড বর্ণনা করছি। ব্রণ তাড়ানোর মাস্ক ব্যবহারে রেমেডি কিন্তু সময়সাপেক্ষ। চট করে এক রাতেই ব্রণ হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করতে হবে।
কার্যকরী কিছু ব্রণ তাড়ানোর মাস্ক
১) টি ট্রি অয়েল আর মধুর বাম
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বের করতে হয় এমন একটি পুরানো লিপবামের কৌটা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। ৩ চা চামচ খাঁটি মধু আর ১০-১৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল একটি বাটিতে নিয়ে মিক্স করে ঐ খালি লিপবামের কৌটায় ঢেলে দিন। ফ্রিজে রেখে দিন যেন বামটা জমে যায়। এবার প্রতি রাতে মুখ ধোয়ার পর পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে ঐ বাম টা ফ্রিজ থেকে বের করে ব্রণে আক্রান্ত স্থানগুলোতে লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২) অ্যালোভেরা জেল
ফ্রেশ পাতা থেকে অ্যালোভেরার শ্বাস বের করে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখুন কমপক্ষে আধা-এক ঘণ্টা। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন লাগাতে পারবেন। সাশ্রয়ী মূল্যে এবং ভালো মানের স্কিন ক্যাফে অ্যালোভেরা জেল সীমান্ত স্কয়ার ও যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত শপ.সাজগোজ.কম-এ পেয়ে যাবেন।
৩) অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এক চা চামচ খাঁটি আনফিল্টার্ড অ্যাপল সাইডার ভিনেগার আর ৩ চা চামচ পানি মিক্স করে এক টুকরো পরিষ্কার তুলোর বল ঐ মিশ্রণে ভিজিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দিনে যদি বাসার বাইরে না যান তাহলে দিনে ও লাগাতে পারেন, কমপক্ষে ২০ মিনিট স্কিনে রাখতে হবে। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার স্কিনের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক করতে সাহায্য করে এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে।
৪) মধু আর দারুচিনির মাস্ক
৩চা চামচ খাঁটি মধু আর ১চা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো (যেকোন সুপারশপে কিনতে পাবেন/ বাসায় ও আস্ত দারুচিনি বেটে নিতে পারেন) একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিক্স করে যে যে স্থানে একনে/ব্রণ হয়েছে সেসব স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৫) ডিম আর দারুচিনির মাস্ক
একটি ডিম আর ২ চা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে ফ্রিজে রেখে দিন কমপক্ষে আধা-এক ঘণ্টা। তারপর মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ দিয়ে একটি টিস্যু দিয়ে মুখ ঘষে চোখের চারপাশের অংশ বাদ দিয়ে আস্তে আস্তে পুরো মুখে চামচের সাহায্যে মাস্কটি লাগিয়ে নিন। দারুচিনির কারণে চামড়ায় সামান্য জ্বলুনি অনুভূত হতে পারে। এক ঘণ্টা পর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন একবার করে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ব্যবহার করুন। ডিম আপনার স্কিনের পোরগুলোকে ছোট করবে, আর দারুচিনি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণগুলোকে সারিয়ে তুলবে। এই মাস্কটি একবার বানালে কমপক্ষে তিনদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
৬) দই আর মধুর মাস্ক
১ টেবিল চামচ টক দই আর ১ টেবিল চামচ খাঁটি মধু একটি পাত্রে নিয়ে মিশিয়ে মুখে লাগান। আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৭) টি ট্রি অয়েল
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মুখ ধুয়ে টিস্যু দিয়ে মুছে তারপর পরিষ্কার তুলোর বলে টি ট্রি অয়েল নিয়ে স্কিনের যে যে স্থানে অ্যাকনে আছে তাতে সরাসরি লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন। টি ট্রি অয়েলের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। ভালো মানের টি ট্রি অয়েল যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত শপ.সাজগোজ.কম– এ পেয়ে যাবেন।
৮) রসুনের রস
২ কোয়া রসুন থেঁতলে এর রস বের করে ব্রণের উপর একটি পরিষ্কার তুলোর বল বা কটনবাডের সাহায্যে লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৯) লেবুর রস
ব্রণের উপর সরাসরি লেবু ঘষুন। লেবুর রস ব্রণকে প্রাকৃতিক ভাবেই ধীরে ধীরে সারিয়ে তুলবে।
১০) বেকিং সোডা আর পানির মাস্ক
২ চা চামচ বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বোনেট) সামান্য পানির সাথে মিক্স করে পেস্ট বানিয়ে ব্রণে আক্রান্ত স্থানের উপর লাগিয়ে ১৫-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
১১) ব্যবহারকৃত গ্রিন টি ব্যাগ
যাদের গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা গ্রিন টি বানিয়ে খাবার পর টি ব্যাগটা ফেলে না দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মুখ ধুয়ে ঐ ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগ টা ব্রণে আক্রান্ত স্থানগুলোতে ১০ মিনিট করে ধরে রাখুন। তারপর মুখ না ধুয়ে ঘুমিয়ে যান। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে নিন।
১২) কলার খোসা
কলা খাওয়ার পর এর খোসা টা ফেলে না দিয়ে মুখে আস্তে আস্তে ঘষুন, আধা ঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যে পদ্ধতির উপকরণগুলো আপনার কাছে সহজলভ্য মনে হবে, আপনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রণ তাড়ানোর মাস্ক সম্পর্কিত টিপস
- নিয়মিত বালিশের কভার ধুতে হবে।
- মুখে ব্রণের স্থানে বারবার হাত দিয়ে ধরা বা খোঁচাখুঁচি করার বদ অভ্যাস বন্ধ করতে হবে।
- স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
- রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- তেল-চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
- অবশ্যই মেকআপ ভালোভাবে তুলে মুখ ধুয়ে তারপর ঘুমাতে যাবেন। মেকআপের লেফটওভার স্কিনকে সাফোকেট করে অ্যাকনে ব্রেক আউট ঘটাতে পারে।
- যদি সারামুখে অজস্র ব্রণ বেরিয়ে যায় তবে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
জানলেন ব্রণ তাড়ানোর মাস্ক নিয়ে। আপনার স্কিন অনুযায়ী (স্যুট করবে যেটা) যে কোন ব্রণ তাড়ানোর মাস্ক ব্যবহার করুন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
বিঃদ্রঃ রসুন ও বেকিং সোডা অনেকের ত্বকে স্যুট করে না। স্কিন টাইপ বুঝে এগুলো ব্যবহার করবেন। মুখে ব্যবহারের আগে হাতে একটু অল্প জায়গায় এগুলো লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। যদি স্কিনে র্যাশ টাইপ কিছু বা অ্যালার্জি উঠে, তাহলে তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাজগোজ.কম