মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। বিশেষ করে ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় আমরা কম বেশি সবাই সচেতন। এমনকি রূপচর্চা-ও করে ফেলি সময় পেলেই। একবার ভাবুন তো, এত যত্ন নেয়া হয় যে ত্বকের, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে সেটা যদি পুড়ে যায়, কালো হয়ে যায় কিংবা বয়স আসার আগেই বয়সের ছাপ ফেলে দেয়, তবে কেমন হবে? শুধু কি তাই? শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ক্যান্সার এর মত জটিল রোগ-ও। সেজন্য আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদের ত্বক। নিজেকে সাজাতে আমরা তো অনেক প্রসাধনী-ই ব্যবহার করে থাকি, আজ কথা বলবো ত্বককে সুরক্ষিত রাখার প্রসাধনী নিয়ে। আর সেটা হলো সানব্লক বা সানস্ক্রিন।
[picture]
সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর দিকঃ
আমাদের কাজের প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হয়। মাথার উপরের গনগনে সূর্যটা জানান দিয়ে যায় তার উপস্থিতি। সূর্যের রয়েছে তিন রকমের ক্ষতিকর রশ্মি। যেমন –
UV-A :
এই রশ্মি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে, এমনকি কাপড় ভেদ করেও। ত্বককে করে তোলে শুষ্ক এবং খসখসে। ত্বকের রং কালো হয়ে যায়। বলি রেখা পড়ে মুখে, চোখের ভাঁজে। বয়স আসার আগেই বুড়োটে ভাব এসে পড়ে।
UV-B :
রোদে পোড়া ভাব এই রশ্মির জন্যই হয়। ত্বক হয়ে উঠে কালচে। এমনকি ক্যান্সার-ও হতে পারে।
UV-C:
এই রশ্মি আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয়। তাই এটি নিয়ে আপাতত ভাবনার কিছু নেই।
UV-A এবং UV-B আমাদের ত্বকের আরও কিছু ক্ষতি করে-
• ত্বক পাতলা হয়ে যায়
• ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়
• ত্বকের কোলাজেন, লেসিথিন ফাইবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়
• ত্বকের মসৃণতা কমে যায়
• ত্বকের টানটান ভাব কমে যায়
• ত্বকে সংক্রমণ ও অ্যালার্জি হতে পারে।
কি আছে সানব্লক ও সানস্ক্রিনেঃ
সানব্লক ও সানস্ক্রিন শুনে মনে হতে পারে দুটো একই জিনিস। কিন্তু আসলে ছোট্ট একটু পার্থক্য আছে। যদিও কাজ একই কিন্তু কাজ করার পদ্ধতি আলাদা। সানস্ক্রিন ত্বকের উপর প্রলেপ তৈরি করে, এ কারণে অতি বেগুনী রশ্মি ত্বকের গভীরে যেতে পারে না। সানব্লক সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে, ফলে রশ্মি ত্বক পর্যন্ত যেতে পারে না।
কিছু কেমিক্যাল দিয়ে এগুলো তৈরী করা হয়। যেমন –
• জিঙ্ক অক্সাইড
• টাইটেনিয়াম অক্সাইড
• প্যারাঅ্যামিনো বেঞ্জয়িক এসিড
• পেডিমেট
• সিনামেট
• এন্থ্রানিলেটস
• স্যালিসাইলেটস
• অক্সিবেঞ্জন
• অ্যান্টি অক্সিজেন ফ্রি র্যাোডিকেল
সানস্ক্রিনে সানব্লকের সব উপাদান-ই থাকে। সানব্লকে সানস্ক্রিনের সব থাকে না। তাই সানব্লক ব্যবহারের চেয়ে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই শ্রেয়।
SPF কিঃ
এটা হল সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর। সানব্লক বা সানস্ক্রিন মেখে আপনি কতক্ষণ সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষিত থাকবেন, তার হিসাব SPF থেকে পাওয়া যায়।
আসুন SPF-১৫বলতে আসলে কী বোঝায় সেটা বোঝার চেষ্টা করিঃ
ধরুন সাধারন ভাবে মানে কোন সানব্ল্রক বা ক্রিম ছাড়া রোদে গেলে যদি ১০ মিনিট পর থেকে আপনার সানবার্ণ শুরু হয়ে যায়। এখন যদি SPF-15 সানস্ক্রিন মেখে রোদে যান তাহলে আপনার স্কিন বার্ণ হবে ১৫০ মিনিট পরথেকে। অনুরূপ ভাবে SPF-30 দিয়ে রোদে গেলে 30×10=300 মিনিট পর থেকে সান বার্ণ শুরু হবে।
তৈলাক্ত,শুষ্ক এবং সেনসিটিভ ত্বক ভেদেঃ
বাজারে অনেক রকমের সানব্লক ও সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। যেমন – অয়েন্টমেন্ট, ক্রিম, জেলি, লোশন, স্প্রে, পাউডার ওয়াক্স স্টিক ইত্যাদি। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তবে সানব্লক লোশন বেঁছে নিন অথবা সানস্ক্রিন পাউডার। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম ফর্মুলেশন। ত্বকের যে অংশে লোম রয়েছে, সেখানে জেল ব্যবহার করুন, বিশেষ করে হাত এবং পায়ে। চোখের আশেপাশে ওয়াক্স স্টিক ব্যবহার করুন। ঠোঁটের জন্য সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম পাওয়া যায়। যাদের ত্বক সেনসিটিভ তারা শিশুদের উপযোগী সানব্লক ব্যবহার করুন। শিশুদের সাধারণত SPF ১৫ মাত্রার সানব্লক দেয়া হয়।
কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এবং দরদামঃ
বিভিন্ন বিপণি বিতান এবং ড্রাগ সেন্টার এ খোঁজখবর করলেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের সানব্লক এবং সানস্ক্রিন।
১) গার্নিয়ারঃ
সব ধরনের ত্বকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। দামটাও হাতের নাগালে। ১৩১৭- ১৪০০ টাকার ভেতরেই পাবেন।
BUY HERE
২) লেডি ডায়ানাঃ
তৈলাক্ত এবং মিশ্র ত্বকে লোশন এবং শুষ্ক ত্বকে ক্রিম ব্যবহার করুন। এটার দাম ১৮০-২০০ টাকা।
৩) জনসন বেবিঃ
সেনসিটিভ এবং শিশুদের ত্বকে ব্যবহার করার জন্য প্রথম পছন্দ। দাম পড়বে ৯৫০ টাকা।
৪) ল্যাকমিঃ
এটা তুলনামুলক কম দামেই পেয়ে যাবেন। ১৫০ টাকা।
৫) সান ফর্মুলাঃ
ক্রিম ও লোশন পাওয়া যায়। দাম ১১০০ টাকা।
৬) নিউট্রোজেনাঃ
তেলমুক্ত লোশন ১৩০০ টাকা। শুষ্ক ত্বকের জন্য আলট্রা শিয়ার ড্রাই টাচ, দাম ৪০০-৯০০ টাকা।
BUY HERE
৭) নিভিয়াঃ
ত্বকের ধরন বুঝে কিনুন। ৩৫০ টাকা দাম পড়বে।
৮) ভেনিক্রিমঃ
এটা আমেরিকান ব্র্যান্ড। দাম কিছুটা বেশি। ২০০০ টাকা পড়বে। এটা সেনসিটিভ ত্বকের জন্য।
৯) লরিয়ালঃ
সব ধরনের ত্বকের জন্য দাম পড়বে ৭০০-৯০০ টাকা।
১০) ওলে অল ডে সানস্ক্রিনঃ
দাম পড়বে ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকা।
১১) লোটাস এবং ক্লিনিকঃ
আপনার পছন্দমত লোটাস বা ক্লিনিক এর সানব্লক ও সানস্ক্রিন বেঁছে নিতে পারেন। এগুলো পাবেন ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার ভেতরেই।
১২) অ্যাভেনো সানব্লক স্প্রেঃ
আপনারা যারা অনেক ঘামেন অথবা পানির সংস্পর্শে আসতে হবে, তাদের জন্য এই সানব্লক। দাম পরবে ১০০০ টাকা।
কেনার সময় ত্বকের ধরণ বুঝে লোশন বা ক্রিম কিনুন। মেয়াদ আছে কিনা দেখে কিনুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ SPF ৩০ বা এর চেয়ে বেশি কিনুন। এর কম কিনলে খুব একটা লাভ হবে না। বাজারে বিভিন্ন পরিমাণ পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী কিনুন। পরিমাণের উপর দামের পরিবর্তন হয়।
ব্যবহারবিধিঃ
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা-সব ঋতুতেই সানব্লক বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এখন যেহেতু অনেক গরম প্রয়োজনটা যেন একটু বেশি-ই। প্রখর সূর্যালোক আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আকাশ মেঘলা থাকলেও প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে ব্যবহার করতে হবে। বাইরে যাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে ত্বকের খোলা অংশে, বিশেষ করে হাত, পা, মুখমণ্ডল, গলা, ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটেও সানস্ক্রিন লিপবাম লাগিয়ে নিন। অনেক্ষণ বাইরে থাকতে হলে ২/৩ ঘণ্টা পরপর পুনরায় ব্যবহার করুন। মেক আপ করতে চাইলে আগে সানব্লক লাগিয়ে নিন, তার ২০ মিনিট পর মেক আপ বা অন্য প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
সানব্লক বা সানস্ক্রিন তোলার উপায়ঃ
সানব্লক তো লাগালেন, সারাদিন পর যখন বাসায় ফিরবেন, তখন তা ভাল ভাবে তুলতে হবে। প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। বরফের কিউব দিয়ে মুখ ঘষে নিতে পারেন। শশার রস মুখে লাগান অথবা শশার রস দিয়ে বরফ কিউব করে রাখুন এবং প্রতিদিন ব্যবহার করুন, এতে সময় বাঁচবে। আর তা না করতে চাইলে তুলায় গোলাপজল নিয়ে মুছে ফেলুন। টোনার-ও ব্যবহার করতে পারেন। ফেস ওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সব শেষে একটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
এই হল সূর্যালোক থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষিত করার উপায়। আপনার ত্বকের ধরন বুঝে কিনে নিন পছন্দমত সানব্লক বা সানস্ক্রিন। সঠিকভাবে ব্যবহার করুন এবং সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনার ত্বককে বাঁচান। প্রতিরোধ করুন রোদে পুড়ে কালো হওয়া, প্রতিরোধ করুন বার্ধক্য। ক্যান্সার থেকেও ত্বককে দিন সুরক্ষা। এভাবে আপনার সৌন্দর্য হোক আরও বিকশিত এবং এই গরমেও আপনার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠুক বিশ্বজয়ের হাসি।
লিখেছেনঃ সানিয়া