‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’– জীবনানন্দ দাশের এই লাইনটিই প্রমাণ করে চুল কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো চুল বিখ্যাত কবিদের কবিতাতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে সগৌরবে। প্রাচীনকাল থেকেই বড় চুলের ফ্যাশনটা খুবই জনপ্রিয়। মাঝখানে এর একটু খরা গেলেও এখন আবার লম্বা চুলের ফ্যাশনের জয়জয়কার। একটু সতর্ক থাকলেই আপনিও কিন্তু লম্বা চুল পেতে পারেন।
লম্বা চুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এর বিশেষ যত্নেরও প্রয়োজন। সঠিক পরিচর্যা আপনাকে দিতে পারে কম সময়ের মধ্যে আকর্ষণীয় লম্বা চুল। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক লম্বা চুল পেতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
লম্বা চুল পেতে ১২ টি টিপস
১. তামাক, ক্যাফেইন এবং কোমল পানীয়ের সোডা চুলের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। তাই যতটা সম্ভব এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
২. স্বাস্থ্যকর, পুষ্টি সম্বলিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টাটকা ফল, সবজি, বাদাম, ছোলা, ডিম, দুধ ও মাংস থাকা উচিত। কারণ চুলের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. চুলের দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে ফ্যাটি এসিড, যা পাওয়া যায় মাছ এবং প্রাণিজ প্রোটিন থেকে। তাই উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পাশাপাশি প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করতে ভু্লবেন না।
৪. আপনি যদি চান তবে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য অতিরিক্ত ফুড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। যেমন – বায়োটিন, জিংক, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, আয়রন, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ এবং ওমেগা ৩। তবে এর আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভাল।
৫. আরো একটি জরুরী কথা মনে রাখা দরকার, তা হচ্ছে ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। এ সময় চুলের গোঁড়া নরম থাকে। ফলে চিরুনির আঘাতে চুল ঝরার প্রবণতা বাড়ে।
৬. চুলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এজন্য প্রথমে ঈষদুষ্ণ বা হালকা গরম এবং পরে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা ভাল।
৭. চুল ভাল রাখতে হলে নিয়মিত চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছণীয়। সঠিক উপায়ে চুলে তেল ও শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
৮. চুলের ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু নির্বাচন করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন চুলের উপযোগী ভিন্ন ভিন্ন শ্যাম্পু পাওয়া যায়। বেঁছে নিন আপনার উপযুক্তটি।
৯. সপ্তাহে ২-৩ বার চুল ও স্ক্যাল্প-এ তেল ম্যাসাজ করে সারারাত রাখুন, চুলের ধরণ তৈলাক্ত হলে শ্যাম্পু করার ঘণ্টা খানেক আগে লাগালেই চলবে। বেছে নিতে পারেন জলপাই, নারিকেল, আমন্ড বা জোজোবা তেল।
১০. চুলের ডগা ফাটার সমস্যা থাকলে প্রতি মাসেই ট্রিম করে নিতে ভুলবেন না। এতে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকবে।
১১. প্রতি রাতেই মোটা দাঁতের চিরুনি এবং প্যাডেল ব্রাশ দিয়ে ভাল মত চুল আঁচড়ে নিন। এতে মাথার ত্বকের রক্ত চলাচল বাড়বে; সেই সাথে চুল-ও বেড়ে উঠবে দ্রুত।
১২. আপনি চাইলে চুলের প্যাক-ও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে –
- তৈলাক্ত চুলে ডিমের সাদা অংশ, মেহেদী এবং আমলকির রস দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন প্যাক।
- চুল শুষ্ক হলে ব্যবহার করুন ডিমের কুসুম, আমন্ড তেল, মধু ও গ্লিসারিন। সব উপকরণ এক সাথে মেশান, পেষ্ট-এর মত করে লাগিয়ে রাখুন পুরো মাথায়; ৪০-৪৫ মিনিটের মত। এই প্যাক সপ্তাহে একবার লাগানোই যথেষ্ট।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো হেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
সর্বোপরি পরিমিত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকাটাই সব কিছুর মূলমন্ত্র।
ছবিঃ সংগৃহীত – Shutterstock