আজকাল বাইরে বের হলেই মেয়েদের মধ্যে যে জিনিসটা সব থেকে বেশী দেখা যায়, তা হলো রিবন্ডিং করা চুল। নিজের লুক-এ খুব সহজেই পরিবর্তন এবং স্টাইলিশ লুক আনতে রিবন্ডিং একটি সহজ সমাধান। এছাড়াও অনেকে কোঁকড়ানো চুল পছন্দ করেন না, তারা সহজেই স্ট্রেইট চুল পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সব কিছুরই তো কিছু না কিছু প্রতিক্রিয়া আছে। তেমনি, চুল রিবন্ডিং করার পরেই প্রায় অনেকেরই কমপ্লেইন আসে যে চুল পড়ে যাচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে, দূর্বল হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকে আবার কনফিউজড থাকেন যে কিভাবে চুলের টেইক কেয়ার করবেন।
তো চলুন, সকল কনফিউশন দূর করে দেই। জেনে নেই, কিভাবে রিবন্ডিং করা চুলের যত্ন নেবেন।
[picture]
১. চুল রিবন্ডিং করে আসার পরে ২-৩ দিন চুল ভেজাবেন না। এরপর রিবন্ডেড চুলের জন্যে উপযুক্ত শ্যাম্পু বেছে বেছে নিবেন। আজকাল বাজারে রিবন্ডেড হেয়ারের জন্য ভালো মানের উপযোগী শ্যাম্পু পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগাতে একদমই ভুলবেন না। আবারো বলছি, কন্ডিশনার কিন্তু লাগাতেই হবে মাস্ট। এই বেসিক জিনিস গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
২. চুল রিবন্ডিং করার ফলে চুলে যে ড্যামেজ-টা হয়েছে, সেটা সারিয়ে চুল হেলদি করে তুলতে পারে কোকোনাট অয়েল। তবে সপ্তাহে ৩ দিন অন্তত চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত অয়েল ম্যাসাজ করতেই হবে।
৩. অনেকেরই অভ্যাস থাকে হট শাওয়ার নেওয়ার। কিন্তু চুল রিবন্ডিং করা থাকলে এই অভ্যাসটি আপনাকে ছাড়তে হবে। হট ওয়াটার আপনার চুলকে পুরোপুরিভাবে ড্যামেজ করে দিবে। তাই চেষ্টা করবেন ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার নেওয়ার।
৪. চুলের আগা রেগ্যুলার ট্রিম করতে ভুলবেন না। এতে করে চুলের আগা ফেটে গিয়ে আপনার চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে না এবং দেখতেও ভালো লাগবে। এছাড়া এতে করে রিবন্ডিং বেশ সময় পর্যন্ত লাস্টিং-ও করে।
৫. চুল রিবন্ডিং করা অবস্থায় অন্যসব কেমিক্যাল প্রোডাক্ট যেমন হেয়ার কালার অন্তত ৬ মাসের মধ্যে না করাই ভালো। কালার করার পর কোকোনাট অয়েল দিয়ে ময়েশ্চারাইজ করাটাতো মাস্ট। এছাড়াও হেয়ার স্টাইলিং টুলস ব্যবহার থেকেও বিরত থাকুন। যদি ব্লো ড্রায়ার খুব বেশী দরকার পড়ে, তবে কুলিং সেটিং-এ রেখে ব্যবহার করুন।
৬. বাইরে বের হলে সাথে হ্যাট অথবা ছাতা সাথে রাখবেন। কারণ, বাইরের সূর্যের ইউভি রে, বৃষ্টির পানি, দূষণ আপনার চুলের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
৭. হুট করে যদি বৃষ্টিতে চুল ভিজে গিয়ে থাকে, তবে যত দ্রুত সম্ভব চুল ওয়াশ করে ফেলতে হবে। কারণ, বৃষ্টির পল্যুটেন্টস এবং সল্ট চুলে প্রচুর ড্যামেজ করতে পারে। তারপর চাইলে একটা হট অয়েল ম্যাসাজ নিয়ে নিতে পারেন চট করে!
৮. যেহেতু রিবন্ডিং এ চুলে একটা বিশাল ধরনের ড্যামেজ হয়ে থাকে, তাই চেষ্টা করবেন নিজে একটু হেলদি ডায়েট-এ থাকতে। কারণ, হেলদি ডায়েট চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে অনেকটা সাহায্য করবে।
৯. চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করতে হেয়ার মাস্ক হতে পারে আপনার অন্যতম বন্ধু। কারণ, আমাদের চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করতে ময়শ্চার এবং প্রোটিন দরকার হয়। হেয়ার মাস্ক চুলে এসব পুষ্টি দিয়ে চুলকে ডিপ কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে।
হেয়ার মাস্ক হিসেবে ২ টি কার্যকরী ডিপ কন্ডিশনিং মাস্কের কথা জেনে নিন-
– একটি বাটিতে ৪ টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল, ১/৩ কাপ টকদই, ১ চা চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও হাফ চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোমত লাগিয়ে ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
– এবার আসি সেকেন্ড মাস্ক-এ। একটি ব্লেন্ডারের জগে একটা পাকা অ্যাভোক্যাডো/কলা, ১ টা ডিম, ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল, ১ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন ভালোভাবে।এই মাস্ক-টি চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
১০. প্রতিবার গোসলের পর ভেজা চুলে লিভ-ইন-কন্ডিশনার অথবা হেয়ার সিরাম লাগাবেন। এটি আপনার চুলের শ্যাফট-এ একটা প্রটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরী করবে এবং চুল থেকে ময়েশ্চার লস হতে দেবে না।
১১. প্রতি ১৫ দিন অন্তর চুলে স্টিম নিবেন, হতে পারে সেটা ঘরেও। ঘরে স্টিম নিতে কুসুম গরম পানিতে একটি টাওয়েল চুবিয়ে অতিরিক্ত পানিটুকু ঝরিয়ে নিয়ে ওই টাওয়েল-টা পুরো চুলে পেঁচিয়ে রাখবেন। এরপর ১৫ মিনিট ওয়েট করে আবার রিপিট করবেন ২-৩ বার। স্টিমিং-এর ফলে হেয়ার সফট, হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারড হবে।
১২. চুল আঁচড়ানোর সময় অবশ্যই মোটা দাঁতের উডেন চিরুনি ব্যবহার করবেন। এতে চুল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এই তো ছিল, রিবন্ডেড করা চুলের যত্নের ব্যাপারে কিছু কথা। আশা করছি, আপনাদের অনেক হেল্প হবে।
লিখেছেন- জান্নাতুল মৌ
ছবি- সাটারস্টক