অনেককেই বলতে শুনি আমি ত্বকের অনেক যত্ন নেই, তবুও ব্রণ থেকে মুক্তি পাচ্ছি না, অথবা ত্বক অমসৃণ হয়ে আছে। তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি। অনেক যত্ন নেওয়ার পরেও আমরা অনেক সময় না জেনে কিছু ভুল করে ফেলি; ফলে আশানুরুপ সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হই। এই আর্টিকেলে তাই ত্বকের যত্নে ১৩টি টিপস ও সাবধানতা তুলে ধরা হলো।
ত্বকের যত্নে ১৩টি টিপস ও সাবধানতা
১. সবচেয়ে বেশি যে ভুলটি আমরা করি, তা হলো ভুল মেকআপ সামগ্রী বেঁছে নেওয়া। অনেক সময় আমরা না জেনেই ত্বকের যে ধরণ তার বিরোধী কোন সামগ্রী ব্যবহার করি যা আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। এক্ষেত্রে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্যালিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ ক্লেনজার ব্যবহার করতে পারেন। ভাবছেন কিভাবে জানবেন কোন ক্লেনজারে salicylic acid আছে? এর জন্যে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না, কেনার আগে সামগ্রীর গায়ের লেবেলটি ভালো মতো পড়ে কিনুন। সব ধরনের মেকআপ সামগ্রীর লেবেলেই সেগুলো কী কী উপাদান দিয়ে তৈরী করা হয়েছে তা লেখা থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে সূর্যের বেগুনী রশ্মি প্রতিরোধে ক্রিমের বদলে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।
২. স্পর্শকাতর ত্বক পরিষ্কার করার জন্য মিল্কি ক্লেনজার ব্যবহার করুন, সুগন্ধিবিহীন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। অ্যান্টি-এজিং ক্রিমের ক্ষেত্রে hyaluronic acid এবং shea butter সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন।
৩. মিশ্র ত্বকের জন্যে ফোমিং ক্লেনজার এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৪. শুষ্ক ত্বকে ক্ষারহীন ক্রিমযুক্ত ক্লেনজার ব্যবহার করুন। অ্যান্টি-এজিং ক্রিমের লেবেলে দেখে নিন এটি রেটিনল (retinol) যুক্ত কিনা।
৫. ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি সাধারণ ভুল করে থাকি। সেটা হল, শুধুমাত্র মুখের ত্বকের যত্ন নিয়ে থাকি আমরা। আমাদের গলা এবং ঘাড়ের অনেকটাই অরক্ষিত থেকে যায়, অথচ অধিকাংশ সময়ে গলা ঘাড় এবং পিঠের ত্বকও উন্মুক্ত থাকে এবং সূর্যের বেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে আসে। তাই আমাদের উচিত হবে ত্বকের এই অঞ্চলগুলোতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এবং নিয়মিত ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করা।
৬. আমরা অনেক সময় আমাদের মেকআপ করার ব্রাশ অথবা পাউডার পাফ পরিষ্কার করে রাখতে ভুলে যাই। অপরিষ্কার মেকআপ ব্রাশে ত্বকের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এবার থেকে মেকআপ ব্রাশ এবং পাউডার পাফ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন। সাধারণত কয়েকদিন পর পর ব্রাশ এবং পাফ গরম পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে নিলেই জীবাণুমুক্ত থাকে।
৭. যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন সেটটি কানে লাগিয়ে রাখেন এবং কথা বলেন তাদের ত্বকে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি যখন আপনার মুখের সাথে মোবাইল ফোনটি অনেকক্ষণ ধরে রাখছেন তখন মোবাইল থেকে বের হওয়া তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও তাপ আপনার ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন অথবা একান্তই যদি বলতে হয় হেডফোন ব্যবহার করুন।
৮. প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুম হলেও আমাদের ত্বকের উপর এর স্পষ্ট প্রভাব পড়ে। ঘুমানোর সময় আপানার শরীর প্রাকৃতিক ভাবেই সারাদিনের ক্লান্তিকে নিঃশেষ করে শরীরকে সুস্থ করে তোলে। তাই রাত জাগলে ত্বকে রক্তপ্রবাহের গতি কমে আসতে পারে যা ত্বককে লাবণ্যহীন করে তোলে। তাই ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় নিয়ম করে ঘুমানো একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়।
৯. আমরা অনেক সময় ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করি না। এটিও ত্বকের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঘুমোতে যাবার আগে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা অবশ্য কর্তব্য।
১০. অধিক পরিমাণে জাঙ্ক ফুড খেলেও ত্বকে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তাই যাদের ত্বক স্পর্শকাতর তারা তাদের খাবারের মেনু থেকে জাঙ্ক ফুডকে বিদায় করুন।
১১. আমাদের চোখের চারপাশের ত্বক মুখের অন্য অংশের ত্বকের তুলনায় পাতলা, অথচ প্রায় সবসময় আমাদের চোখের চারপাশের ত্বক অবহেলার স্বীকার হয়। এছাড়াও আমাদের আরেকটি বদভ্যাস হলো ব্রণে খোঁচাখুঁচি করা। এতে ত্বকে ব্রণের স্থায়ী দাগ বসে যেতে পারে। তাই ব্রণে অযথা খোঁচাখুঁচি করা থেকে বিরত থাকুন।
১২. অনেকেই একই সাথে ত্বকের ওপর নানা ধরণের ক্রিম লাগান। ময়েশ্চারাইজার, তার ওপর অ্যান্টি এজিং ক্রিম, আবার সানস্ক্রিন। এতে ত্বকের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। আপনি দিনের বিভিন্ন সময়ে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন, তবে কখনই একসাথে নয়।
১৩. সবশেষে, ত্বককে লাবণ্যময় ও উজ্জ্বল করে তুলতে হলে এসব কিছুর পাশাপাশি আমাদের উচিত প্রতিদিন নিয়ম করে দশ থেকে বিশ মিনিট হাঁটা অথবা ব্যায়াম করা। এতে দেখবেন আপনার ত্বক মসৃণ , উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় হয়ে উঠবে।
এই তো জেনে ফেললেন ত্বকের যত্নে ১৩টি টিপস ও সাবধানতা কোনগুলো; এখন ত্বকের যত্নে আরো সাবধান হোন, সুস্থ থাকুন।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক