অনেকক্ষণ ধরেই সামনের বিল্ডিং এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটাকে দেখছি।গ্রীলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে সে,বহুদুর দৃষ্টি। তার চাহনিতে অসহায়ত্ব আর উদাসীনতা। হয়ত সে মনে মনে বলছে ‘আমি মুক্ত হতে চাই, কাদায় মাখামাখি হয়ে ফুটবল খেলতে চাই, সাইকেল নিয়ে ছুটতে চাই, রঙ বেরঙের ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়াতে চাই,বন মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে চাই’! তাই তো হওয়া উচিত, শৈশব তো চার দেয়ালে নিজেকে আটকে রাখা নয় বা গ্রীলের ফাঁক দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা নয়।
আচ্ছা তারা কি ঐ গানটি গায় না “একদিন ছুটি হবে,অনেক দূরে যাবো। নীল আকাশ আর সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাবো“
না, নীল আকাশ তাদের দেখা হয় না, সবুজ ঘাস ও তাদের পায়ের স্পর্শ পায় না। তাদের বোধ হয় কেউ ঠাকুরমার ঝুলি বা রূপকথার গল্প বলে না। তাদের দেখানো হয় কার্টুন ও হাতে তুলে দেওয়া হয় ভিডিও গেমস। আমাদের শহুরে সভ্যতা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। এখানে নেই শিশুর জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ বা শিশু বিনোদন কেন্দ্র। বাবা মায়ের কর্মব্যস্ততার ফলেও হয়ত শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হচ্ছে না। তবে শিশুর শৈশবকালীন বিকাশ যেন সঠিকভাবে হয় তার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে।এক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন।
[picture]
-
ছুটির দিনগুলোতে বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন। বেড়ানোর ক্ষেত্রে এমন স্থান নির্বাচন করবেন যাতে সে আনন্দ পায়। চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, জাদুঘর পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।
-
অবসর সময়ে শিশুর সাথে গল্প করুন। তার ইচ্ছেগুলো মনযোগ দিয়ে শুনুন।
-
সে যে কাজ করতে ভালোবাসে তাকে তাই করতে দিন। তার পছন্দকে উৎসাহিত করুন। পড়াশুনার বিষয়ে জোর না করে বরং তাকে আগ্রহী করে তুলুন।
-
শিশুকে বকা বা ভয় দেখাবেন না।এটি তাদের মনের উপর আঘাত ফেলতে পারে।
-
শিশুর সামনে ঝগড়া করবেন না।বাবা-মা ঝগড়া করলে সন্তানরা বিষণ্ণতায় ভোগে যা তাদের মধ্যে থেকে যায় পরবর্তীতে।
-
আপনার আচরন তার মানসিকতা তৈরিতে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে।তাই শিশুর সামনে সুন্দর আচরণ করুন।
-
দীর্ঘ সময় ধরে গেমস খেলা বা কার্টুন দেখার ফলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, স্থুলতা, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, অতি কল্পনাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। জাপানে শিশুদের উপর করা একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যেসব শিশুরা নিয়মিত কার্টুন দেখে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুনে বেশী। এই গবেষণা কাজে গবেষকগন ‘পোকেমন’কার্টুনকে বেঁচে নিয়েছেন যা বাংলাদেশে ও সম্প্রচার করা হয়। এবং এটিকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সহিংস কার্টুন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের কার্টুন দেখার ফলে শিশুদের সহিংসতাপূর্ন মনোভাব তৈরি হতে পারে।তাই এ ধরনের কার্টুন দেখা হতে শিশুদের বিরত রাখুন।
-
শিশুর বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করান। বিভিন্ন শিক্ষামুলক গল্পের বই পড়তে দিতে পারেন।
-
শিশুর মধ্যে মানবিক গুণাবলি রপ্ত করে তুলুন। তাকে জনহিতকর কাজে আগ্রহী করে তুলুন।
-
সময়ানুবর্তিতা,অধ্যবসায় এই বিষয়গুলো ও শিশুকে ছোট বেলা হতেই শিক্ষা দিন।
-
শিশুর মধ্যে নেতিবাচক কোন বিষয় খেয়াল করলে তাকে বুঝিয়ে বলবেন সুন্দরভাবে,বকা ঝকা করে নয়।
-
বাবা-মায়েয় সাথে শিশুর একটা সহজ সম্পর্ক তৈরি করুন যেন সে নির্দ্বিধায় মনের সব কথা খুলে বলতে পারে।
-
শিশুকে শারীরিক অনুশীলনে আগ্রহী করে তুলুন।প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট খেলাধূলা ও দৌড়াদৌড়ি করতে দিন।এতে তার শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকবে।
পরিবারকে বলা হয়ে থাকে প্রাথমিক পাঠশালা। শিশুর শৈশবকালীন বিকাশ ও তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবারের কোন বিকল্প নেই। তাই তাকে বুঝুন, তার কথা শুনুন এবং তাকে উপহার দিন আনন্দে মাখামাখি শৈশব।
ছবি – ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানেভেরা
লিখেছেন – আফসানা প্রীতি