এলোকেশী রাজকন্যার হাসি যেন তার চুলে। চুল নিয়েই তাই কত আয়োজন। চুল বাঁধা, সাজানো, নিত্য নতুন রূপ দেওয়া। তার-ই একটি হলো চুল রঙ করা। এখনকার হাল ফ্যাশনে চুল রাঙিয়ে নেওয়া যে খুব নতুন, তা কিন্তু নয়। কেউ বা পুরো চুল, কেউ বা চুলের কিছু অংশ রাঙিয়ে নিচ্ছেন রঙে। আজকাল পার্লারে চুল রাঙানো যায় খুব সহজেই। আবার একটু চেষ্টা করলে নিজে নিজেও করা যায়। এতে সময় আর খরচ দুই-ই বাঁচানো যায়। আসুন জেনে নিই কিভাবে চুলে রঙ করা যায়।
প্রথম ধাপঃ
প্রথমেই প্রয়োজন রঙ নির্বাচন করা। চুলে যে রঙটি লাগাতে চান, তা বেছে নিন। যদি আপনি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চুলের আসল রঙের আশেপাশের কোন রঙ-ই বেছে নিন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
আপনার হাতে পরে নিন গ্লাভস। পাতলা রাবারের গ্লাভস নিন যা চিকিৎসকেরা ব্যবহার করে থাকেন, যেকোন ওষুধের দোকানেই পাওয়া যাবে। একটি পুরনো তোয়ালে (যাতে রঙ লাগলে সমস্যা হবে না) নিন এবং কাঁধের উপর ছড়িয়ে দিন। এই তোয়ালে দিয়ে পরে আপনার চুলের পানি ঝরাতে পারবেন, কেননা চুল ধোয়ার পর-ও রঙ উঠতে পারে। যে জায়গায় বসে রঙ করবেন, তার চারপাশে পেপার বিছিয়ে নিন, যাতে অন্য কোথাও রঙ না লাগে।
তৃতীয় ধাপঃ
পুরনো কোন টি শার্ট অথবা অন্য কোন পুরনো পোশাক পরে নিন। কেননা এতে রঙ লাগতে পারে এবং দ্বিতীয়বার হয়তো পোশাকটি আর পরতে নাও পারেন।
চতুর্থ ধাপঃ
আপনার কপালে, গালে, পেছনে হেয়ার লাইনের নিচে রঙ লাগতে পারে তাই ভ্যাসলিন বা লিপ বাম মেখে নিন। একে বলা হয় কোটিং। এর মাধ্যমে রঙ লাগা প্রতিরোধ করা যায়।
পঞ্চম ধাপঃ
আপনি যে ডাই টি কিনেছেন সেটি অনেক ঘন। এটিকে আপনার পছন্দের রঙে পরিণত করতে হলে লঘু করতে হবে। এজন্য ডাই টিকে ডেভেলপারের সাথে মেশাতে হবে। সাধারণত ডেভেলপার ডাই এর সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়। যদি না থাকে তাহলে আলাদা করে কিনে নিন। যদি গাঢ় রঙ করতে চান তাহলে ১০% ডেভেলপার মিশিয়ে নিন। হালকা করতে চাইলে ২০%। এর চেয়ে হালকা আপনার না করাই ভালো। যদি করতে চান তাহলে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে করে নিন। কেননা এর চেয়ে হালকা হলে তা ব্লিচ হিসেবে কাজ করবে।
ষষ্ঠ ধাপঃ
রঙ মেশানো হয়ে গেলে চিরুনি দিয়ে আপনার চুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ক্লিপ দিয়ে আলাদা করে ফেলুন। এবার ব্রাশের মাধ্যমে একটু একটু করে রঙ লাগাতে থাকুন। চুল ভাগ করার সময় যত কম চুল নিয়ে ভাগ করা যায়, তত ভালো। এতে কালার করার সুবিধে হয়। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সাবধানে লাগাতে থাকুন যেন বেশি গড়িয়ে না পড়ে। সব চুলে লাগানো হয়ে গেলে গ্লাভস পরে পুরো চুলে শ্যাম্পু করার মত করে মিশিয়ে নিন।
সপ্তম ধাপঃ
আপনি যে ডাই টি ব্যবহার করছেন,তার প্যাকেটের গায়েই একটি নির্দিষ্ট সময় এর কথা লেখা থাকে। সেই অনুযায়ী সময় আপনার চুলে রাখতে হবে। কখনো সারা রাত রাখবেন না। এতে আপনার চুল যে আরও বেশি কালার হবে, তা কিন্তু নয়। বরং আপনার চুল ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে চুল ভেঙ্গে যায়।
অষ্টম ধাপঃ
একটি তোয়ালে বা টিস্যু পেপার দিয়ে ঘাড়ে, গলায়, কপালে লেগে থাকা বাড়তি রঙ মুছে ফেলুন। শাওয়ার ক্যাপ মাথায় পরতে পারেন, যাতে রঙ ছড়িয়ে না পড়ে। মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন দ্রুত ফলের জন্য।
নবম ধাপঃ
সময় শেষ হবার পর অল্প করে পানি নিয়ে ধীরে ধীরে চুল ধুয়ে ফেলুন। পুরো চুল থেকে রঙ উঠে যাবার পর বেশি করে পানি দিয়ে ২/৩ মিনিট ধরে চুল ধুতে হবে, যতক্ষণ না পরিষ্কার পানি বের হয়।
দশম ধাপঃ
হালকা কোন কন্ডিশনার চুলে লাগিয়ে রাখুন ৫ মিনিট। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।
একাদশ ধাপঃ
চুল তোয়ালে দিয়ে হালকা করে মুছে নিয়ে ন্যাচারালি শুকিয়ে নিন। ব্লো ডাই করার প্রয়োজন নেই। এতে করে চুলের উজ্জ্বলতা কমে যায়।
দ্বাদশ ধাপঃ
কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আপনার চুল সূর্যের আলোয় নিয়ে যাবেন না। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ডাই করা চুলের অনেক ক্ষতি করে।
ত্রয়োদশ ধাপঃ
পরের দিন আপনার চুলে শ্যাম্পু করে নিন। এক্ষেত্রে হালকা কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। বেশিরভাগ শ্যাম্পুতে ডিটারজেন্ট থাকে, তাতে আপনার চুলে লাগানো রঙ উঠে যেতে পারে। তাই শ্যাম্পু নির্বাচনের সময় উপাদান দেখে নিন। এরপর কন্ডিশনার লাগিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
চতুর্দশ ধাপঃ
এরপরের এক সপ্তাহ যখন-ই শ্যাম্পু করবেন, তখন-ই কন্ডিশনার লাগিয়ে রাখবেন অন্তত ৫ মিনিট। এতে করে আপনার চুল আগের মতই নরম, কোমল হয়ে উঠবে।
কিছু পরিচিত ব্র্যান্ডঃ
আপনার চুল কালার করার ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ব্র্যান্ড বেছে নিন। কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হল –
০১. রেভলন
০২. গার্নিয়ার
০৩. স্ট্রিক্স
০৪. ওয়েলা কলেস্টিন্ট
০৫. লরিয়াল
০৬. ম্যাট্রিক্স
০৭. কালার মেট
০৮. ডক্টর জেইন’স
কিছু সতর্কতাঃ
০১. কারো কাছ থেকে নেয়া পরামর্শ এবং প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা বিপরীত হলে সবসময়-ই প্যাকেটের নির্দেশনা মেনে চলুন।
০২. ডাই এর প্রতি আপনি এলার্জিক কিনা তা দেখে নিন। দেখার জন্য কানের পিছনে ডাই লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিন এবং ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে দেখুন কোন প্রতিক্রিয়া হয় কিনা।
০৩. আপনার চুল অনেক বেশি শুস্ক হলে ডাই দেয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতি রাতে চুলে কন্ডিশন করুন এবং হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
০৪. ডাই লাগানোর পর কোন জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হলে সাথে সাথে ধুয়ে ফেলুন।
লিখেছেনঃ সানিয়া
মডেলঃ Laetitia Marie Laure Casta
ছবিঃ জার্মানসফ্যানসশেয়ার.কম