প্রত্যেক খাবারের কিছু বিশেষ রান্না করার নিয়ম আছে কিন্তু সেই রান্নাটা কি সঠিক নিয়মে হচ্ছে কিনা তা আমরা অনেকেই জানি না। এই সঠিক নিয়মে রান্নার মাধ্যমে আমরা খাবারের মান ও পুষ্টির সর্বোচ্চ রক্ষা করতে পারি। আসুন আজকে জেনে নিই কিছু রান্নার সঠিক নিয়ম।
শাক-সবজি রান্নার কৌশলঃ
সঠিক ভাবে শাক সবজি রান্না করলে পুষ্টি উপাদানের সাথে রং ও স্বাদের অপচয় কম হয়। এখানে কয়েকটি উপায় দেয়া হলোঃ
১. কড়া গন্ধযুক্ত সবজি যেমন মূলা, মূলাশাক, বাঁধাকপি খোলা পাত্রে কিছুক্ষণ ঢাকনা খুলে রান্না করলে কড়া গন্ধ বের হয়ে যায়। তাই এই ধরনের সবজি গুলো ঢাকনা খুলে রান্না করতে হয়।
২. সবুজ শাকপাতা, সবজি যেমন বরবটি, সিম রান্নার প্রথম দিকে ঢাকনা না দেয়াই ভালো। এতে উদ্বায়ী জৈব এসিড অপসারিত হয় এবং সবুজ রং নষ্ট হয় না। কারণ ক্লোরোফিল জৈব এসিডে ম্লান হয়ে যায়। শাক- সবজি কখনই বেশি সময় ধরে রান্না করা উচিত না। এতে খাবারের রং, জমিন ও পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয় না।
৩. গাজর, মিষ্টি আলু, বীট, কচু সিদ্ধ করার পরিবর্তে ভাপিয়ে নিলে রং উজ্জ্বল হয় ও স্বাদে মিষ্টি লাগে।
৪. শাক সবজি পরিমান মত পানিতে রান্না করতে হয়, এবং সেদ্ধ হয়ে গেলেই নামিয়ে ফেলতে হয়।
৫. শাক সবজির সাধারণ রং যেন বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা এদের সাদা ভাব যেন বজায় থাকে, সে জন্য খুব বেশি মশলা ব্যবহার না করাই ভালো। বাঁধাকপি ১৫-২০ মিনিট এবং অন্য সবজি ১০-১৫ মিনিটে সেদ্ধ হয়ে যায়।
৬. শাক সবজি সেদ্ধ কড়া পানি ফেলে দেয়া উচিত নয়, একে স্যুপ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ডুবো তেলে ভাজার সাধারণ নিয়মঃ
১. খাবারের পরিমানের উপর পাত্র এবং তেলের পরিমান নির্ভর করে। অল্প খাবার হলে ছোট কড়াই বা ফ্রাই প্যান হলে তেল ও জ্বালানির খরচ কম হয়।
২. তেল বা ডালডা বা ঘি গরম হলে খাদ্যবস্তু ছাড়তে হবে। ভাজার তাপমাত্রা যেন এক রকম থাকে অর্থাৎ ২০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট এ ভাজা ভালো। চুলার আগুন একভাবে রাখাই ভালো।
৩. খাবারের গায়ের অতিরিক্ত টোস্টের গুঁড়া ঝেরে ফেলতে হবে এবং খাবার একটি একটি করে ছাড়লে তেলের তাপমাত্রা একই থাকবে।
৪ তেলের রং কালচে হলে তেল বদলানো ভালো। একই তেলে বারবার ভাজা উচিত নয়। এতে তেল আঠালো ও ধীরে ধীরে বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
৫. ভেজে খাবারটি সম্ভব হলে টিস্যু দিয়ে একটু চাপ দিলেই অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।
সেদ্ধ করার কিছু নিয়মঃ
১. বিভিন্ন খাদ্য বিভিন্ন ভাবে সেদ্ধ করা হয়। যেমন মাংস, ডিম, শাক সবজি আলাদা নিয়মে সেদ্ধ করা হয়। মাটির উপর জন্মানো সবজি ফুটন্ত পানিতে ছাড়া হলে রং গন্ধ ভালো হয়।
২. মাটির নিচে জন্মানো সবজি যেমন আলু, গাজর, মূলা, শালগম ঠাণ্ডা পানিতে ছেড়ে রান্না করলে ভালো হয়।
৩. ভাপে সেদ্ধ করার সময় খুব জোরে পানি ফুটতে থাকলে পাত্রের ভেতর পানি ঢুকে পড়বে।
৪. পাত্রের গায়ে তেলতেলে কাগজ দিয়ে মুড়ালে ভেতরের পানি শুষে যাবে। পাত্রটি ভালো ভাবে ঢাকনা দিয়ে ঢাকতে হবে।
৫. মাংস কম তাপে সেদ্ধ করলে নরম ও সুস্বাদু হয়। উচ্চতাপে মাংসের প্রোটিন ও আঁশ শক্ত হয়ে পড়ে। তাই অল্প আঁচে মাংস রান্না করা উচিত।
লিখেছেনঃ ফারিয়া ইসলাম
ছবিঃ সিঙ্গেলমাইন্ডেডওমেন.কম