পোকামাকড় আমাদের পরিবেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর মধ্যে কিছু উপকারী আবার কিছু ক্ষতিকরও বটে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এইসব পোকামাকড়ের সংস্পর্শে এলে হুল ফুটানো কিংবা কামড় দেয়ার মত ঘটনা ঘটে থাকে। যদি সময় মত চিকিৎসা না নেয়া হয় তাহলে এই ছোট কামড় বা হুল প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ অনেক পোকামাকড়ের শরীরেই বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা মানুষ থেকে শুরু করে পূর্ণশক্তির ঘোড়া পর্যন্ত মেরে ফেলতে সক্ষম। তার পাশাপাশি অনেকের শরীরে এলার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে যা কালক্রমে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। তাই যদি আপনি কখনো কোন ধরনের পোকামাকড়ের কামড়ের শিকার হন, যেমন মৌমাছি কিংবা মাকড়সা তাহলে কামড় খাওয়ার মুহুর্ত থেকে সাবধান হওয়া জরুরী।
কামড় অনুভব করার সাথে সাথে আপনি যা করতে পারেন –
- কামড় অনুভব করার সাথেই সাথেই উক্ত পোকা/মৌমাছি/মাকড়সাটিকে সরিয়ে দিন। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত এটি আপনাকে কামড়াবে ততক্ষণই বিষ শরীরে প্রবেশ করতে থাকবে।
- নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। খুব বেশি নড়াচড়া করবেন না। কারণ নড়াচড়া বেশি করলে বিষ রক্তের মধ্য দিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে যাবে।
- যদি মৌমাছি আপনাকে হুল ফোটায়, তাহলে মৌমাছি সরিয়ে দেয়ার পরও হুল ভেঙ্গে চামড়ায় রয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ভাঙ্গা হুলটি চামড়া থেকে সরিয়ে ফেলুন।
- যদি আপনি পায়ে অথবা হাতে কামড় খেয়ে থাকেন তাহলে বাহু যত সম্ভব নিচু করে রাখুন। এতে বিষ সহজে ছড়াবে না। কয়েক ঘণ্টা পর যদি হাত ফুলতে শুরু করে, তাহলে হাত উচু করে ফোলা কমাতে পারেন।
- তবে কামড় যদি কাঁকড়া বিছের হয়ে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হসপিটালে যান। এখন মোটামুটি সব হাসপাতালেই কাঁকড়া বিছের বিষের এন্টি ডোট পাওয়া যায়। তাই যত দ্রুত যাবেন ক্ষতি ততই কম হবে।
ব্যথা নিরসনের জন্য করণীয় –
- যাই কামড়াক, সাধারণত সেগুলো যদি বিষাক্ত হয় তাহলে কামড়ের স্থানে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানে বরফ ব্যবহার করুন। প্রথম ৬ ঘণ্টার প্রতি ঘণ্টায় ১৫/২০ মিনিট করে বরফ ব্যবহার করুন। যেসময় বরফ লাগাচ্ছেন না, সেইসময় একটি পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখুন এবং বরফ ব্যবহারের সময় বরফ এবং ক্ষতস্থানের মাঝে একটি পাতলা কাপড় ব্যবহার করা ভালো।
- ক্ষতস্থানের ফোলা কমানোর জন্য যতটুকু সম্ভব ক্ষতস্থান সমতল থেকে উচুতে রাখার চেষ্টা করুন, এতে বিষ ছড়া্বে না, ফোলাও কম হবে।
- প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ক্ষতস্থানের চুলকানি, ফুলে যাওয়া, ব্যথা কমানোর জন্য Benadryl কিংবা ChlorTrimeton ধরনের এন্টিহিস্টামিন ওষুধ খেতে পারেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
- ব্যথা কমানোর জন্য ফার্মেসি থেকে Benzocaine জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এলার্জিক রিএকশন এর ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন।
- Hydrocortisone 1% cream অথবা ক্যালামাইন লোশন ক্ষতস্থানে লাগালে লালচে ভাব এবং ফোলা দূর হবে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এধরনের কিছু ব্যবহার করবেন না।
- ৬ ঘণ্টা বরফ ব্যবহারে যদি ফোলা কমে যায়, তাহলে আস্তে আস্তে ক্ষতস্থানে গরম কাপড়ের সেঁক দিতে পারেন। এতে ক্ষতস্থানের জীবাণু সংক্রমণ বন্ধ হবে।
পোকার কামড়ের ক্ষেত্রে প্রতিকার হিসেবে আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যেসব ওষুধ খেতে পারেন –
- Acetaminophen; যেমন – Tylenol.
- Ibuprofen; যেমন – Advil অথবা Mortin.
- Naproxen; যেমন – Aleve অথবা Naprosyn.
- Aspirin; যেমন – Bayer অথবা Bufferin.
আরো কিছু টিপস –
- ওষুধ সেবনের পূর্বে ইন্সট্রাকশন গুলো পড়ে নেবেন।
- যতটুকু সেবন করার নির্দেশনা দেয়া আছে ততটুকুই সেবন করুন।
- এলার্জির সমস্যা থাকলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করবেন না।
- বিশ বছরের নিচে ডাক্তার এর নির্দেশনা ব্যতিত অ্যাসপিরিন সেবন করবেন না।
তবে প্রতিকারের চাইতে অবশ্যই প্রতিরোধ উত্তম। তাই সাবধান থাকবেন যাতে এই ধরনের বিষাক্ত পোকামাকড় আপনার সংস্পর্শে আসতে না পারে।
লিখেছেনঃ ফরহাদ রাকীব
ছবিঃ হেলদিহার্ভেস্টহাউজ.কম