সাধারণত আমরা হারবাল ফেসিয়াল, গোল্ড ফেসিয়াল এসবের সাথে পরিচিত। ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী ও ত্বকের রকমভেদে ফেসিয়াল আরো আছে সেগুলোর সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত না। আর তাছাড়া সব সময় পার্লার-এ যাওয়া সম্ভব হয় না, তাই ঘরে কারো সাহায্য নিয়ে বা নিজেই করতে পারেন আপনার ত্বকের যত্ন। সব ফেসিয়াল-এর মূল লক্ষ্য ত্বকের মরা কোষ, মলিনতা, রুক্ষতা দূর করে ত্বককে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে তোলা। অনেকের অনন্যা হয়ে ওঠার বাসনাটা আসুন আজ কোলাজেন আর পিল ফেসিয়াল-এর মাধ্যমে পূরণ করা যাক!
ত্বকের রকমভেদে ফেসিয়াল যেভাবে করবেন
১) কোলাজেন ফেসিয়াল
কোলাজেন ফেসিয়াল-এ কোলাজেন প্রোটিন ব্যবহার করা হয় ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। কোলাজেন প্রোটিন প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীরে উৎপন্ন হয়, যা আমাদের ত্বকের গঠন, ইলাস্টিসিটি(elasticity), আর দৃঢ়তা বজায় রাখে। বয়সের সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে আর ত্বকে বলিরেখা আর বয়সের ছাপ দেখা দিতে শুরু করে। কোলাজেন ফেসিয়াল-এর মাধ্যমে এই বয়সের ছাপ লুকিয়ে ত্বকে তারুণ্যের উজ্জ্বলতা দেখা দেয়।
কোলাজেন ফেসিয়ালের অন্তর্ভুক্ত ধাপসমূহ
১) ত্বক পরিষ্কার করা
২) মৃত কোষ দূরীকরণের জন্য কোলাজেন ফেসিয়াল এক্সফোলিয়েশন(exfoliation) এবং সেই সঙ্গে ত্বকের আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার।
৩) ফেইস মাস্ক দেয়া যেটিতে ভিটামিন, এসিড, মিনারেল আছে। এই উপাদানগুলো ত্বকে ইলাস্টিন(elastin) এবং কোলাজেন উৎপন্নে সাহায্য করে, আর ত্বকে বয়ে আনে তারুণ্যময় দীপ্তি।
৪) কোলাজেন সমৃদ্ধ ফেইস ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ।
কোলাজেন ফেসিয়াল-এর সুবিধাসমূহ
১. শরীরের বাইরে থেকে প্রেরিত প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়া থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষিত করে।
২. আপনার ত্বককে করে তোলে মসৃন ও কোমল।
কীভাবে বাসায় করবেন কোলাজেন ফেসিয়াল?
সাধারণ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরে বসেই সেরে নিন আপনার কোলাজেন ফেসিয়াল।
১) মুখের ত্বক এবং গলা ভালো কোন ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। আপনি চাইলে বেসনের সাথে দুধ মিশিয়েও ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
২) এক চামচ অ্যাভোকাডো পাল্প-এর সাথে কিউই ভালোভাবে স্ম্যাশ(smash) করে নিন। তারপর মুখে আর গলায় লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
৩) একটি পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মাস্ক তুলে ফেলুন তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৪) ভালো কোয়ালিটি-এর কোন অ্যান্টি-এজিং(anti-aging) ক্রিম দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করুন, এটি আপনার ত্বকে কোলাজেন উৎপন্নে সাহায্য করবে।
ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য মাসে একবার এই ফেসিয়াল করুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
উপরোক্ত ফলগুলো যদি আপনার হাতের কাছে না থাকে তাহলে কোলাজেন সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু, শসা, বিট, টমেটো দিয়েও কোলাজেন ফেসিয়াল-এর কাজ সেরে নিতে পারেন। তবে কোলাজেন ফেসিয়াল কোন এক্সপার্ট-কে দিয়ে করানো ভালো। কারণ আপনাকে তারা আগে টেস্ট করবে যে যে উপাদান ব্যবহার করা হবে তাতে আপনার কোন ধরনের অ্যালার্জি আছে কিনা। এমনকি তারা এটাও নির্ধারণ করে দিবে এই ফেসিয়াল করা আপনার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা।
২) ফেসিয়াল পিল
৩০ দিন পর পর স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের শরীরে নতুন কোষের দেখা মিলে। কিন্তু আমরা যদি মরা কোষগুলোকে পরিষ্কার না করি, তাহলে আমদের ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। ফেসিয়াল পিল-এর মাধ্যমে চেহারার উজ্জ্বলতা অনেকখানি বেড়ে যাবে, যেহেতু এক্সফলিয়েশন করে শুষ্ক চামড়া, বলিরেখার ছাপ বা ব্রণের দাগ হালকা হয়ে আসে। পিল হলো প্রাকৃতিক এসিড অথবা কেমিক্যাল-এর সংমিশ্রণ। পিল-টা অরগানিক বা নন-অরগানিক হতে পারে। ফেসিয়াল পিল শুরু করতে হবে খুবই হালকা এসিড-এর মধ্য দিয়ে যেন আপনার মুখের ত্বক এই ট্রিটমেনট-এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আমি কয়েক ধরনের পিল ফেসিয়াল-এর পদ্ধতি বলে দেবো আপনাদের। আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী ত্বকের উপযোগী ফেসিয়াল-টি বেছে নিবেন।
(১) ভেজিটেবল ফেসিয়াল পিল
একটি ছোট শসার বিচি ফেলে খোসাসহ ব্লেন্ড করুন। তারপর পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে রসটা আলাদা করুন। এর সাথে অ্যালোভেরা জেল, জেলাটিন, গ্রিন টি মেশান। এই মিশ্রণ একটি প্যান-এ অল্প আঁচে জ্বাল দিন যতক্ষণ পর্যন্ত না জেলাটিন গলতে থাকে। তারপর এই মিশ্রণ ৩০ মিনিট ফ্রিজ-এ রেখে মিশ্রণটিকে গাঢ় হতে দিন। শসা আর অ্যালোভেরা ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বিনাশ করে আর গ্রিন টি ত্বকে ঠাণ্ডা সতেজ ভাব বজায় রাখে। ২৫ মিনিট ধরে এই প্যাক মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখুন তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
(২) টমেটো পিল
একটি মাঝারি সাইজ-এর টমেটো ব্লেন্ডার-এ অল্প স্পীড-এ ব্লেন্ড করে নিন। তারপর পুরো মুখে মেখে রাখুন ২৫ মিনিট। এরপর ভালো ব্র্যান্ড-এর ফেইস ওয়াশ আর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত, স্বাভাবিক ত্বকের জন্য উপকারী।
(৩) সাইট্রাস পিল
১/২ লেবু, ১/২ কমলা, ১/২ কাপ আনারস আর ১/২ কাপ পেঁপের সঙ্গে ১-২ টেবিল চামচ টক দই অথবা মধু দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এই প্যাক ২৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গ্লাইকোলিক এসিড (glycolic acid), সাইট্রাস পিল(cytrus peel)-এর মাধ্যমে পাওয়া যায় যা মুখের বলিরেখা দূর করে সেই সঙ্গে হাইপারপিগমেন্টেশন(hyper pigmentation), মুখে গর্ত থাকলে তাও অনেকটা কমিয়ে আনে।
(৪) পাম্পকিন পিল ফেসিয়াল
২ চা চামচ মিষ্টি কুমড়ার পাল্প, ১/৪ চা চামচ দুধ আর ১/২চা চামচ মধুর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিণীরা নির্দ্বিধায় এই ফেসিয়াল-টি করে ফেলুন।
এছাড়াও এক প্যাকেট জেলাটিন, একটি লেবু আর কমলার রস প্যান-এ নিয়ে জ্বাল দিতে হবে। জেলাটিন গলে গেলে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২৫মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। জেলাটিন ত্বককে নরম করে আর স্কিন টোন করে। আমরা সবাই জানি লেবুর রস গায়ের রঙ উজ্জ্বল করে। ডিমের কুসুম ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়।
সব সময় যা বলে থাকি আজও তাই বলবো, যেকোনো প্যাক ট্রাই করার আগে অবশ্যই টেস্ট করে নিবেন আপনার ত্বকের কাছে ওই উপাদান কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা না হলে বেশ খানিকটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে। উপরের ফেসিয়া্ল ২টি ২০ বছর বয়স হলেই করা নিরাপদ, যেহেতু এতে কোন ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাই ১৫দিন পর পর একবার করা উচিত। অবশ্য যাদের বাসার বাইরে যাওয়া কম হয় তারা মাসে একবার করে ফেসিয়াল করতে পারেন।
ত্বকের যত্ন কিভাবে করবেন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তা তো জানলেন। অনেক সময় এ সকল উপাদান সংগ্রহ করে প্রয়োগ করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। তাই তাদের জন্য শপ সাজগোজ নিয়ে এসেছে কিছু অথেনটিক প্রডাক্টস যেগুলো ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। চলুন দেখে নেই প্রডাক্টসগুলো…
ছবি- সাটারস্টক