চুল লম্বা বা ছোট, কোঁকড়ানো বা সোজা যাই হোক না কেন সবারই স্বপ্ন থাকে তার চুলগুলো যেন মসৃণ, সিল্কি ও স্বাস্থ্যকর হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাদের মধ্যে কারো কারো চুল জন্ম থেকেই প্রাকৃতিকভাবে নিস্তেজ, শুষ্ক এবং ফ্রিজি হয়ে থাকে। এমনকি আপনি যদি সুস্থ ও সুন্দর চুল নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, তবুও আপনার চুল ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যেতে পারে অযত্ন, দুষন, অতিরিক্ত স্টাইল ও বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারের কারণে। শুষ্ক চুল থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট ও স্টাইলিং সরঞ্জামের ব্যবহার করে থাকেন। এতে সাময়িকভাবে চুল সুন্দর হলেও দীর্ঘমেয়াদীভাবে চুলের অনেক ক্ষতি হয়ে যায় যেটা কারোরই কাম্য নয়। তবে আপনি কি জানেন আপনার হাতের কাছেই রয়েছে এর সহজ সমাধান? হ্যা, আপনি আপনার রান্নাঘরেই এমন কিছু সহজলভ্য জিনিস খুঁজে পাবেন যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার চুল হবে দীর্ঘমেয়াদিভাবে সফট, সিল্কি, মজবুত আর উজ্জ্বল। তাহলে চলুন এমন ২টি হোমমেইড রেসিপি দেখে নেই যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে আপনি ড্রাই বা শুষ্ক চুল থেকে মুক্তি পাবেন চিরতরে!
শুষ্ক চুল থেকে মুক্তি পেতে ২টি উপাদান
শুষ্ক চুল থেকে মুক্তি পেতে ২টি উপাদান ব্যবহার করলেই হবে। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? অবাক হওয়ারই কথা! চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কোন সেই ৩ টি উপাদান!
১) মেয়োনেজ মাস্ক
যারা তাদের চুলকে খুব অল্প সময়েই নরম, কোমল ও শাইনি করতে চায় মেয়োনেজ মাস্ক তাদের জন্য হতে পারে খুব উপকারী একটি সমাধান। মেয়োনেজে রয়েছে এল সিস্টিন (L-cysteine) নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা চুলকে উজ্জ্বল ও শক্তিশালী করে এবং চুলে ভলিউম এনে দেয়। এটি ড্রাই এবং ড্যামেজ চুলের জন্য খুবই দরকারি একটি উপাদান।
ে
আপনার প্রয়োজন হবে-
১. ফুল ফ্যাট মেয়োনেজ– ১/২কাপ
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১. মেয়োনেজটি সম্পূর্ণ ফ্লাফি না হওয়া পর্যন্ত ভালোভাবে হুইপ করে নিন অর্থাৎ অনেকক্ষণ ধরে নাড়তে থাকুন।
২. আপনার চুলগুলোকে ভিজিয়ে নিন। এবার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মেয়োনেজ অ্যাপ্লাই করুন। তবে চুলের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলোতে একটু বেশি নজর দিতে হবে।
৩. একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ৩০মিনিটের জন্য আপনার চুলগুলো কভার করে রাখুন।
৪. তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুলগুলোকে ধুয়ে নিন এবং শ্যাম্পু করে নিন।
আপনি যদি আপনার ড্যামেজ চুলের তাৎক্ষনিক প্রতিকার চান তবে বিশাল প্রস্তুতির দরকার নেই। একটি ফুল ফ্যাট মেয়োনেজ ম্যাসাজই যথেষ্ট। এই মেয়োনেজ প্যাকটি ড্রাই হেয়ার ড্যামেজ ট্রিটমেন্টের জন্য হেয়ার স্টাইলিস্টদের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং এটি সহজেই ঘরে বসে হতে পারে।
২) আপেল সাইডার ভিনেগার
আপেল সাইডার ভিনেগারের অগণিত সুবিধা রয়েছে। এটি ত্বকের চিকিৎসায় ও বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এর ভূমিকা অনেক।
আপনার প্রয়োজন হবে-
১. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার- ২চামচ
২. পানি- ২কাপ
যেভাবে ব্যবহার করবেন-
১. উপাদানগুলো একটি পাত্রে একত্রে মিশিয়ে নিন।
২. পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
৩. ভালোভাবে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার দিয়ে নিন।
কয়েকদিন পর পর এটি আপনার চুলে অ্যাপ্লাই করুন। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহারে আপনার চুল হবে নরম, সিল্কি ও শাইনি!
ড্রাই চুল থেকে মুক্তি পেতে কিছু টিপস
১. আপনার চুলে খুব ঘন ঘন শ্যাম্পু করবেন না। বেশি শ্যাম্পু চুলের প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে দেয় ও চুল শুষ্ক করে তোলে।
২. সর্বদা মাইল্ড বা প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
৩. অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং সরঞ্জামগুলো এড়িয়ে চলুন।
৪. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। আপনার চুলের বেশিরভাগ অংশ আপনি যা খান তা থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।
শুকনো বা ড্রাই চুল থেকে মুক্তি পেতে আপনি কি কখনো রান্নাঘরের এই উপাদানগুলো ব্যবহার করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে দ্রুত এবং কিছুটা ধৈর্য সহকারে ব্যবহার করে দেখুন। আশা করি নিয়মিত ব্যবহারের পর ফলাফল খুব ভালো হবে। তবে যদি আপনার অ্যাপল সাইডার ভিনেগারে অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে, তবে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। ভালো হয় অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহারের পূর্বে স্কিনে প্যাচ টেস্ট করে নিলে। প্যাচ টেস্ট কী? অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার অল্প তুলার বলে নিয়ে কানের কাছে বা হাতের কব্জিতে ৫/১০ মিনিট রাখলে যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার অ্যালার্জি হয়। আর রেগ্যুলার হেয়ার কেয়ারের জন্য যদি অথেনটিক প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, তাহলে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য একটি ভালো অপশন। আপনি চুলের যত্নের প্রোডাক্ট সাজগোজের দু’টি ফিজিক্যাল শপ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। এছাড়া অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকুন, যত্ন নিন আপনার চুলের!
ছবি- সংগৃহীত: স্টাইলক্রেজ, সাজগোজ