সুস্থ থাকতে যোগাসন বা যোগব্যায়াম খুবই কার্যকরী। আর যোগাসনের মাঝে পদ্মাসন ও জানু শিরাসন খুবই উপকারী দুটি ইয়োগা। পদ্মাসন (Padmasana) সর্বরোগ দূর করার যোগাসন নামে পরিচিত। অন্যদিকে জানু শিরাসন (Janusirsasana) ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য খুব উপকারী ইয়োগা। চলুন জেনে নেই পদ্মাসন ও জানু শিরাসন এর উপকারিতা ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত।
পদ্মাসন ও জানু শিরাসন
০১.পদ্মাসন
ইয়োগা চর্চায় বহুল ব্যবহৃত এ আসনটিকে দেখতে অনেকটা প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো মনে হয় বলে একে পদ্মাসন (Padmasana) বলা হয়। সবজির মধ্যে আলু যেমন সকল কাজের কাজী, সব কিছুতেই মানিয়ে যায়, তেমনি যোগ-ব্যায়ামের যে কোন আসনের সাথে জুড়ে যাবার প্রয়োগ যোগ্যতার কারণে লব্ধ জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এই রহস্যময় পদ্মাসন চর্চায় বহু বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায়।
পদ্মাসনের উপকারিতা
যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্প দিনে সেরে যায়। মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মনের একাগ্রতা আনে। পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। দেহে বাত বা সায়টিকা আক্রমণ করতে পারে না।
কার্যপদ্ধতি
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর এবং ডান পা একই ভাবে বাঁ উরুর উপর রাখুন। হাত দু’টোর চেটো উপুড় করে বা চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন (আসনের এই ভঙ্গিকে সিদ্ধাসনও বলা হয়)। দৃষ্টি নাসিকার অগ্রভাগে এবং জিহ্বার অগ্রভাগ মাড়ির শেষদিকে স্পর্শ করে রাখুন। সহজ ভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকুন।
পদ্মাসনে বেশি সময় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস অবশ্যই স্বাভাবিক থাকবে। এবার পা বদল করে অর্থাৎ প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর এবং বাঁ পা একই ভাবে ডান উরুর উপর রাখুন এবং আগে যতক্ষণ অভ্যাস করেছেন ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পায়ের বাঁধন খুলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। (আগের পোস্টে শবাসন এর পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। )
০২. জানু শিরাসন
যোগব্যায়ামে জানু শিরাসন বলে একটা আসন রয়েছে। এর চর্চায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। আপনি নিজে নিজে ঘরে বসে করতে পারেন এ আসনটি।
জানু শিরাসনের উপকারিতা
এই আসনে অগ্নাশয়ে চাপ পড়ায় অগ্নাশয় সবল ও সক্রিয় হয়। সেখানে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য খুব উপকারী এটি। এ ছাড়া পেটের সামনের অংশের অতিরিক্ত মেদ কমানো যায় এটি করে। ১০ থেকে ২২ বছরের যে কেউ এটি করতে পারেন। এতে উচ্চতা বৃদ্ধির হার বাড়ে।
কার্যপদ্ধতি
প্রথমে দুই পা সোজা করে সামনে ছড়িয়ে বসুন। দুই পায়ের বুড়ো আঙুল পরস্পর একসঙ্গে লাগান এবং আঙুল গুলো সামনের দিকে ফিরিয়ে রাখুন। বাম পা হাঁটুতে ভেঙে শরীরের ভেতরের দিকে নিয়ে আসুন। এ সময় আপনার বাম হাঁটু বাম দিকে ফেরানো থাকবে, বাম পায়ের সম্পূর্ণ পাতা ডান উরুর ভেতরের দিকে লেগে থাকবে। বাম পায়ের বাইরের দিকের সম্পূর্ণ অংশ মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। এ অবস্থায় দুই পায়ের মধ্যে কোণ হবে সমকোণের চেয়ে বড়। এবার দুই হাত শরীরের দুই পাশ দিয়ে দম নিতে নিতে মাথার ওপর সোজা করে তুলুন।
এ সময় তালু পরস্পর লেগে থাকবে। লম্বা করে দম নিন। দম ছাড়তে ছাড়তে কোমরের ওপরের অংশ সামনের দিকে নামান। দুই হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি চেপে ধরুন। দম ছাড়তে ছাড়তে কনুই দুটো ভেঙে দুই পাশে যতখানি দরকার, তা ছড়িয়ে দিয়ে মাথা সামনের দিকে নিতে হবে। তারপর মাথা নিচু করে কপালটা ডান পায়ের হাঁটুতে ঠেকান। এবার দম স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকুন। নিঃশ্বাস নিতে নিতে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসুন। দম ছাড়তে ছাড়তে দুই হাত শরীরের দুই পাশে নামিয়ে আনুন। বাম পা সোজা করুন। একই ভাবে বিপরীত দিকে করুন। এখন ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। এভাবে তিনবার করুন।
সতর্কতা
যাঁরা হার্টের অসুখ, রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যার ভুগছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যোগব্যায়ামটি অভ্যাস করবেন না।
ছবিঃ সংগৃহীত – সাটারস্টক