বসন্ত এসে গেল বলে! কত রঙ, কত গান, কত আনন্দ আকাশে-বাতাসে ঝলমল করছে। ফাল্গুনের প্রথম দিনে রাস্তা জুড়ে সুন্দরের আগুন লাগবে যেন। আগুনঝরানো সেদিনটিকে বরণ করে নিতে কতই না পরিকল্পনা থাকে আমাদের। কোন শাড়িটা পরব, সাথে কোন চুড়িটা যাবে, কী ফুলের মালা গুঁজে দেব খোঁপায়, আরও কত কী! কখনও কি এমন হয়েছে যে সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে ফুল কিনতেই ভুলে গেছেন? নানান ঝামেলায় আর ফুলের কোন ব্যবস্থাই করতে পারলেন না। কিংবা ফুল নিয়ে একটু একঘেয়েমিতে ভুগছেন, এমন হয় না অনেক সময়? বসন্ত বরণে যাবেন, আর ফুল থাকবে না তা কি হয়?
তাজা ফুলের একটা বাড়তি আবেদন থাকে সবসময়ই। কিন্তু একটুআধটু ব্যতিক্রমতো চেষ্টা করে দেখাই যায়, তাই না? এবারের বসন্তে নাহয় মাথায় ফুলের ক্রাউনটি কাগজ দিয়েই তৈরি করে নিন? ফুল শুকিয়েও যাবে না, আবার একটু ব্যতিক্রমও থাকা যাবে! দেখে নিই তাহলে কাগজের ফুলের ক্রাউন বানাতে হয় কী করে।
যা যা প্রয়োজনঃ
০১। ক্রেপ/ কালার অফসেট পেপারের টুকরা – পছন্দমত রঙের। এখানে গোলাপি, সবুজ, হালকা সবুজ, সাদা, চাপা সাদা এবং কমলা ব্যবহার করা হয়েছে।
০২। ১৪/১৫ টি তার – যেকোন রঙের
০৩। আঠা
০৪। ফ্লোরাল টেপ
০৫। কাঁচি
০৬। তার কাটার জন্য প্লায়ার্স
০৭। তুলি
০৮। ফিতা
০৯। মধু মোম
এগুলো সবই ধানমণ্ডি হকার্সের ক্র্যাফটের দোকানে এবং নিউমার্কেটের মডার্ন স্টেশনারিতে পাওয়া যাবে।
০১। প্রথমে ডেইজি ফুল বানাতে ১০/১২ টি তারকে চার টুকরা করে কাটতে হবে। এরপর তারের গায়ে সবুজ ফ্লোরাল টেপ পেঁচিয়ে দিতে হবে। অথবা সবুজ কাগজকে ছবির মত করে চিকন চিকন স্ট্রাইপে কেটে তারের গায়ে আঠা দিয়ে জড়িয়ে নিতে হবে।
০২। এরপর কমলা কাগজটিও স্ট্রাইপ কেটে নিয়ে তারের গায়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে। তৈরি হয়ে গেল ফুলের রেণু!
০৩। এবারে সাদা কাগজটিকে ২”x৪” সাইজে কেটে অ্যাকরডিয়ন স্টাইলে ৫ লেয়ারে ভাঁজ করতে হবে।
০৪। এবার ভাঁজ করা কাগজটিকে কেটে নিন ফুলের পাঁপড়ির আদলে।
০৫। এখন ভাঁজ খুলে আগে থেকে তৈরি করে রাখা ফুলের রেণুতে পেঁচিয়ে দিয়ে আঠা দিয়ে।
০৬। ফুলের গোঁড়ায় সবুজ ফ্লোরাল টেপ বা কাগজের আরেকটি স্ট্রিপ দিয়ে ঠিক ছবির মত করে পেঁচিয়ে দিন।
০৭। এবার পেন্সিল বা চপস্টিক দিয়ে ফুলের পাঁপড়িগুলোকে কার্ল করে দিন। তৈরি আপনার ডেইজি ফুল।
০৮। এবার পপি ফুল বানাতে লাগবে গোলাপি কাগজ ১”x ৩” মাপের। তারপর সেটিকে ফ্রিঞ্জ করে কেটে নিতে হবে ছবির মত। এই ফ্রিঞ্জগুলো হবে ফুলের রেণু।
০৯। এই পর্যায়ে ফুলের রেণু বানাতে আগের মতই সবুজ তারগুলোতে ফ্রিঞ্জ পেঁচিয়ে দিতে হবে।
১০। এখন ৩” x ৫.৫” মাপে কমলা কাগজটি কেটে ফের অ্যাকর্ডিয়ন স্টাইলে ৫ টি লেয়ারে ভাঁজ করতে হবে। তারপর সেটিকে পপি ফুলের পাঁপড়ির আদলে কাটতে হবে।
১১। এবারে ভাঁজ খুলে কাগজটিকে ফুলের রেণুর চারপাশে আঠা দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে।
১২। এরপর ঠিক ডেইজি ফুলের মতই ফুলের গোঁড়ায় সবুজ কাগজের একটি ফালি পেঁচিয়ে দিতে হবে।
১৩। পাঁপড়িগুলো খুলে দিলেই হয়ে গেল পপি ফুল!
১৪। এখন বানাতে হবে ঝুমকা ফুল। সেজন্য প্রথমে ফুলের রেণু তৈরি করতে লাগবে একটি ১” x ১” মাপেরহালকা সবুজ কাগজ। কাগজটিতে ছবির মত করে আবারও ফ্রিঞ্জ কাটতে হবে।
১৫। এখন এই ফ্রিঞ্জটিকেও সবুজ তারে প্যাঁচাতে হবে।
১৬। তারপর একটি স্কয়ার সাইজের অফ হোয়াইট কাগজকে রেণুর ওপর বসাতে হবে গোল করে।
১৭। এবারে কাগজের গোঁড়ায় সবুজ কাগজ বা ফ্লোরাল টেপ দিয়ে আটকে দিতে হবে।
১৮। সবশেষে পাঁপড়িগুলোকে আঙুল দিয়ে ছড়িয়ে দিলেই হয়ে গেল ঝুমকো ফুল!
১৯। এবারে পাতা তৈরির পালা। পাতার আকারে সবুজ এক ফালি কাগজকে কেটে লম্বাটে আকৃতি দিতে হবে। এরপর সেটিকে জড়িয়ে নিতে হবে সবুজ তারে।
২০। এই পর্যায়ে পাতাগুলোকে কার্ল করে দিতে হবে চপস্টিক কিংবা পেন্সিলে পেঁচিয়ে।
২১। এবারে আপনি যদি কাগজের ফুলগুলোকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে চান, তবে মধু মোম গলিয়ে নিয়ে ফুল ও পাতার উপরে একটি আবরণ দিয়ে দিতে পারেন তুলি দিয়ে। এতে ফুলগুলো টিকবেও বেশিদিন, সেই সাথে ফুলের ওপর চকচকে একটা ভাবও আসবে।
২২। সবশেষে শুকিয়ে নিন ফুলগুলোকে।
২৩। শুকানোর পর সবুজ একটি তারকে আপনার মাথার মাপে গোল আকৃতি দিন। তাতে ফুলের কান্ডগুলো জড়িয়ে নিন।
২৪। চাইলে ক্রাউনে ফিতেও লাগিয়ে নিতে পারেন।
ব্যস, হয়ে গেল আপনার কাগুজে ফুলের ক্রাউন! শুভ বসন্ত।
লিখেছেনঃ নুজহাত ফারহানা
অনেস্টলি ডব্লিউটিএফ অবলম্বনে