মেকাপ আর স্কিন কেয়ারের জন্য অনেক কিছুই তো করা হয়। আলাদা করে চোখের কথা ভেবে যত্ন নেওয়া আর হয়না। মুখের ত্বকের চেয়ে চোখের ত্বক ১০ গুণ বেশি পাতলা হয়। আর তাই যত্নটাও নিতে হয় সেভাবেই। ভালো আই ক্রিম ব্যবহার করে চোখের চারপাশের ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। ভাবছেন কোনটা কিনবেন? আইডিয়া নেই আই ক্রিমের ব্যাপারে? আজকে রিভিউ দেবো কিছু ভালো আই ক্রিমের। আপনার প্রয়োজন অনুসারে বেছে নিতে পারবেন যেকোনোটি। ক্রিম, জেল আর রোল অন; আজকে এই তিন ধরণের আই কেয়ার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাবো।
The body shop neutriganics smoothing eye cream:
অরগানিক উপাদান দিয়ে প্রস্তুতকৃত এই আই ক্রিম চোখের চারপাশের বলিরেখা, শুষ্কতা দূর করতে চাইলে ইউজ করতে পারেন। ২৮ এর ওপরে যাদের বয়স, তারা এই আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। চোখের চারপাশকে ময়েশ্চারাইজড করে, বয়সের কারণে সৃষ্ট চোখের চারপাশের ক্লান্তিভাব দূর করে রিফ্রেশ করে তোলে। যদি আপনার চোখে ডার্ক সার্কেল থাকে তবে হয়ত এটা আপনার জন্য নয় কারণ ডার্ক সার্কেল দূর করতে এটা খুব বেশি কার্যকরী না। চোখের চারপাশে শুষ্কতা বা বেশি টানটান অনুভব করলে ক্রিমটা আপনার জন্য আদর্শ। এটা একদম হালকা, ময়েশ্চারাজিং অথচ মোটেও তেলতেলে না, তবে চোখের চারপাশের নাজুক ত্বকের প্রতি খুবই যত্নশীল। খুব সহজে স্কিনে মিশে যায়। পাম্প বোতলের প্যাকে থাকে তাই প্রতি পাম্পে দুই চোখের জন্য যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই বের হয়ে আসে। সব মিলিয়ে ক্রিমটা বেশ ভালো।
The body shop Pomegranate Firming & Refreshing Eye Roll-On:
এই ক্রিমের লাইট ময়েশ্চারাইজিন ফর্মুলার একটা স্ট্রোক চোখের নিচের অংশকে কিছুটা উজ্জ্বল করে, চোখের নিচের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে আর কিছুটা টানটান ও স্মুদ করে। প্যাকেজিংটা বেশ সুবিধাজনক মনে হয়েছে। রোল অন প্যাক হওয়ার কারণে চোখের নিচে ইউজ করা বেশ সহজ। অনেকটা মাসাজের মতো লাগে। সকালে আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ব্যাবহার করলে চোখের নিচের ফোলা ভাব আস্তে আস্তে কমে আসে। এমনকি চোখের চারপাশের সেল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে। যাদের স্কিন ড্রাই, তাদের জন্য ভালো হবে এটা।
The Body Shop Elderflower Unperfumed Eye Gel:
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এটা জেল বেজড আই কেয়ার প্রোডাক্ট। বডি শপের বেস্ট প্রোডাক্ট হিসেবে কম প্রশংসা পায়নি এই আই জেল। চোখের সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। মেকাপের আগে চোখের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ইউজ করা যায়। ট্রান্সপারেন্ট কালারের এই জেল বলিরেখা কম করে, নিয়মিত ব্যবহারে চোখের ত্বকের ঝুলে পড়া চামড়াকে টানটান করতে সাহায্য করে। সুদিং আর রিফ্রেশিং একটা ফিলিং দেয়। ফ্রিজে রেখে ইউজ করলে চোখের ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়ে যায়। সেনসিটিভ স্কিন সহ যেকোনো স্কিনের অধিকারীরা এটা ব্যবহার করতে পারেন।
Aveeno positively age less lifting and firming eye cream:
ডার্ক সার্কেল কমাতে বেশ কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই আই ক্রিম। ড্রাই বা কম্বিনেশন স্কিন যাদের, তাদের জন্য ভালো হবে এটি। নিয়মিত অন্তত ১ মাস ব্যবহার করলে আপাতদৃষ্টিতে চোখের ফোলা ভাব কমিয়ে আনে, অনেকসময় রোদে লম্বা সময় থাকেল চোখের নিচে কালি পরে অনেকের, সেক্ষেত্রেও কাজ করে। চোখের আশেপাশের ত্বক কিছুটা উজ্জ্বল করে, এমনকি চোখের ত্বকের নির্জীব সেলগুলোকে সজীব করে তোলে যার ফলে ক্লান্তি আর ফোলা কমে আসে অনেকটাই। ফাইন লাইন্স লুকাতে সাহায্য করে বলে এই আই ক্রিম অনেকেই পছন্দ করেন।
Boots essentials cucumber eye gel:
সব ধরণের স্কিনেই স্যুট করে এই আই জেল। আপনার নিত্যদিনের দৌড়ঝাঁপ, ক্লান্তি, স্ট্রেস, ঘুম ঠিক মতো না হওয়া; সব কিছু ফুটে ওঠে চোখের কোনার কালিতে, ফোলাভাবে আর বলিরেখাতে। মাঝে মাঝে সময় করে ২ টুকরো শশা চোখের আরামের জন্য হয়ত দিলেন। ব্যাস ওই পর্যন্তই। Boots এর এই জেল যেন শসার সেই শীতল অনুভুতিই এনে দেয় আপনার চোখে পাতায়। শুধু তাই না, চোখের কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পরে ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণে। সেই কথা চিন্তা করেই এই প্রোডাক্টটির কুলিং আর সুদিং ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। ২০ বছরের পর থেকেই ইউজ করতে পারেন আই জেল। রাতে ঘুমানোর আগে চোখের চারপাশে আলতো করে মাসাজ করে ঘুমাতে যান, নিয়মিত ব্যবহারে একদিন সকালে উঠে চোখের উজ্জ্বলতা দেখে নিজেই অবাক হবেন।
Olay Age defying classic eye gel:
কিছুটা সিল্কি ফিনিশের আই জেল। খুব বেশি ঘন না, আবার একদম পাতলাও না। চোখের উপরের পাতা ও নিচের পাতার সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সমানভাবে যত্নশীল। বলিরেখা লুকানোর সাথে সাথে এটা কুলিং, রিফ্রেশিং আর স্মুদিংও বটে। যাদের চোখের কোনে বলিরেখা পড়ছে, তারা চোখ বুজে ভরসা করতে পারেন এই প্রোডাক্টটির ওপরে। আপনার অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্টের মধ্যে সামিল করলে নিরাশ হবেন না। পার্মানেন্টলি যদি চোখের নিচে কালি পড়েই যায়, তবে তা দূর করবে কিনা বলা কঠিন, তবে যারা ডার্ক সার্কেলের ব্যাপারে সচেতন তারা এখন থেকেই ইউজ করতে পারেন।
Clinique- Even Better Eyes Dark Circle Corrector
মূলত লাইট ওয়েটের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অয়েল ফ্রি আন্ডার আই ক্রিম হিসেবে পরিচিত, তবে লাইট কাভারেজের ডার্ক সার্কেল কারেক্টার হিসেবে ব্যবহার হয় বেশি। বেস্ট অফ বিউটি আর রিডার্স চয়েস মিলিয়ে মোট তিনবার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত এই আই ক্রিমটি অল্প সময়েই সকলের নজর কেড়েছে। আর ১২ সপ্তাহের মধ্যে ডার্ক সার্কেল কমিয়ে ফেলার দাবি করে। এটা টিনটেড আই ক্রিম বলে ইনস্ট্যান্টলি ডার্ক সার্কেল লুকাতে সক্ষম। খুব সহজেই চোখের ত্বকের সাথে অ্যাবসর্ব হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এটাকে লাইট কাভারেজের কন্সিলারও বলা যেতে পারে। সব মিলিয়ে আই ক্রিম ব্যবহারকারীরা এর বেশ ভালো রিভিউ দিয়েছেন।
MJL Placenta Eye Eream
পুরো মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে পরিমান মতো আঙুলে নিয়ে চোখের চারপাশে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে মিশিয়ে ফেলুন। আই ক্রিমটিতে থাকা পাপায়া এক্সট্রাক্ট(বিদ্যমান অ্যামিনো এসিড ত্বকে উজ্জ্বলভাব আনতে সাহায্য করে, লেমন এক্সট্রাক্টে (বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বকের কালো দাগ এবং ডালনেস দূর করতে সাহায্য করে), অ্যালোভেরা জেল এর অ্যান্টি মেলানিন উপাদান ডাল স্কিনকে ভেতর থেকে ময়েশ্চার জোগানোর সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে্ স্নেইল মিউকাস ত্বকের নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে এবং ইলাস্টিসিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাজেই যারা রিংকেলের সমস্যাসহ ডালনেসের হাত থেকে বাঁচতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আমি বলব এটা বেস্ট অপশন।
The Body Shop Vitamin E Eye Cream
সব ধরণের ত্বকের অধিকারীরা বডি শপের এই আই ক্রিমটি ইউজ করতে পারবেন। চোখের চারপাশে ফাইন লাইন এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে।
ভাবছেন কোথায় পাবেন? এই ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব ওয়েব সাইটে অর্ডার করলেই পেতে পারেন। আর সবগুলো ক্রিমই দেশে পাবেন যমুনা ফিউচার পার্কের Sapphire এ। চাইলে তাদের ফেসবুক পেজ থেকে অনলাইনে অর্ডার করতেও পারেন।
লিখেছেন – চৌধুরী তাহাসিন জামান
ছবি- ক্যানইউসিহোয়াটআইসি.ব্লগস্পট.কম