চুলের যত্ন? কে নেবে? আমি!! সময় কোথায়? একে তো অফিসে কাজের প্রেশার, তার উপর বাসায় ফিরে শুধু কাজ আর কাজ। বিশ্রাম নেয়ারই সময় পাই না, হেয়ার কেয়ার তো দূরের কথা।
কি, নিজের সাথে মিলে যাচ্ছে কথাগুলো? আসলে সব কর্মজীবী মেয়েদেরই এমন অবস্থা। অফিসের স্ট্রেইস আর সংসারের কাজের ভিড়ে নিজের জন্য একটু ‘মি টাইম’ বের করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। চুলের জন্য সময় বের করাতো আরও টাফ। সকাল থেকে সন্ধ্যা বাহিরে থেকে বাসায় ফেরার পর শরীরের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটা দিন চলে আসে। উইকেন্ড-এ বাসার কাজ, শপিং, বেড়ানোর পর চুলের যত্ন নেয়ার টাইম থাকেই না বলতে গেলে। বাহিরে থাকলে রোদ, ধুলাবালির অত্যাচারে চুল হয়ে যায় রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রাণহীন। এসময় চুলের স্বাস্থ্য মেইনটেইন করার একমাত্র সল্যুশন হল নারিকেল তেল।
তাই আমি পারসোনালি সারা সপ্তাহ জুড়েই কিছুটা সময় হেয়ার কেয়ার-এর জন্য তুলে রাখি। প্রতি ২ দিন পরপর মাথায় তেল ম্যাসাজ করি। এক্ষেত্রে আমার চয়েস হল প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট অয়েল। প্যারাসুট নারিকেল তেলতো আমরা সবাই চিনি। ছোটবেলা থেকে মায়ের দেখাদেখি এই তেল ব্যবহার করা শুরু। এখন আমি প্যারাসুট অ্যাডভান্সড এনরিচড কোকোনাট হেয়ার অয়েল ইউজ করি। এটা খাঁটি নারিকেল তেল যা চুলের পুষ্টি যোগায়, চুলের গোঁড়া মজবুত করে আর চুলের কিউটিকল-এর ড্যামেজ রিপেয়ার করে শাইনি হেয়ার পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই তেলে এখন অ্যাড করা থাকে ভিটামিন ই অ্যাসিটেট যা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এটার অ্যাবজরপশন লেভেল হাই, তাই এটা তেলের মাধ্যমে ডাইরেক্ট স্ক্যাল্প ভেদ করে ব্লাড সেলে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং বলা যেতেই পারে যে এই তেল লিটারেলি ভেতর থেকে চুলকে মজবুত করে।
আমি গত ছয়মাস ধরে রেগুলার মোটরবাইক-এ অফিসে যাতায়াত করছি। আগে রাজ্যের ধুলাবালু চুলে আটকে যেত। রোদের তাপে পুড়ত আবার হাইস্পিডে গেলে বাতাসে চুল আলুথালু হয়ে জট বেঁধে থাকতো। তখন আমি বাসায় গিয়ে তেল লাগিয়ে আস্তে আস্তে আঙ্গুল বুলিয়ে জট খুলতাম। এরপর কয়েক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলেই চুল আবার ঝলমলে হয়ে যেত। কিন্তু পরদিনই আবার একই হাল হত। আবার তেল লাগাও, আবার শ্যাম্পু করো! কিন্তু এত ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার কথা তাই না? কিন্তু প্যারাসুট তেল চুলে ডিপ কন্ডিশনিং-এর কাজ করে বিধায় আমার চুল রুক্ষ হতে পারে নি। তবুও নিজের সেফটি-এর পাশাপাশি রোদ আর ধুলো থেকে স্কিন আর চুলকে প্রটেক্ট করতে আমি হেলমেট ব্যবহার শুরু করি। কিছুদিন বেশ আরামে থাকলেও আমি নোটিস করা শুরু করি যে আমার চুল ও স্ক্যাল্প আগের চেয়ে খুব তাড়াতাড়ি অয়েলি হয়ে যাচ্ছে। আমার হেয়ার এবং স্ক্যাল্প নরমালি ড্রাই। তাই শুধু স্ক্যাল্প ও মাথার উপরিভাগের চুল অয়েলি আর বাকি চুল ড্রাই থাকছিল। এভাবে স্ক্যাল্প অয়েলি হয়ে যাওয়াটা আমার জন্য বেশ অস্বাভাবিক লাগলেও পরে বুঝতে পারি যে এর কারণ হেলমেট-এর ভেতর বেশি বাতাস ঢুকতে পারে না। এয়ার সার্কুলেশন ঠিকভাবে না হওয়ায় মাথা ঘেমে যায়। এই সামার-এ বাসায় ফেরার পর এমন স্ক্যাল্প নিয়ে থাকতে কার ভাল লাগবে বলুন? ফলাফল, আবারো শ্যাম্পু করা। কিন্তু এখন তেল দিয়ে আর শ্যাম্পু করার পাশাপাশি আমি চুলের আরেকটু যত্ন নেয়ার ট্রাই করি। সপ্তাহে কমপক্ষে ২দিন আমি মাথায় হেয়ার প্যাক লাগাই। আমার স্ক্যাল্প-এর ন্যাচারাল ড্রাইনেস আর ঘামের জন্য হওয়া অয়েলিনেস ব্যালেন্স করে চুলের শাইন ধরে রাখার জন্য কিছু হেয়ার প্যাক বানিয়ে আমি মাথায় লাগাই যার ৩ টা আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। বাইকে যাতায়াত করেন বা না করেন, এই হেয়ার মাস্ক আর হোম রেমেডিগুলো যেকোনো হেয়ার টাইপের সাথে মানিয়ে যাবে।
১) হানি-লেমন মাস্ক
যা যা লাগবে-
- ২ চা চামচ মধু
- ১ চা চামচ লেবুর রস
- ২ চা চামচ প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল
একটা প্লাস্টিক বা মেলামাইন-এর বাটিতে সবকিছু মিক্স করে আঙ্গুল দিয়ে স্ক্যাল্প-এ অ্যাপ্লাই করবেন। আর চুলের আগায় শুধু তেল লাগাবেন। লেবুর রস স্ক্যাল্প-কে ড্রাই করে ফেলে, তাই অবশ্যই তেল মিক্স করবেন এই হেয়ার মাস্ক-এর সাথে। এটা ২০-৩০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করে ফেলতে হবে।
২) হোমমেইড প্রোটিন মাস্ক
যা যা লাগবে-
- ডিমের কুসুম ১টি
- টক দই ২ চা চামচ
- ২ চা চামচ প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল
প্রথম মাস্ক-এর মতই এটাও মিক্স করে মাথার স্ক্যাল্প ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। টক দই-এর জন্য যাতে স্ক্যাল্প ড্রাই না হয়ে যায় এজন্য আমি এতে প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল আর ডিমের কুসুম মিক্স করেছি।
৩) আমলা-হেনা প্যাক
যা যা লাগবে-
- মেহেদি
- আমলকী পাউডার ১ চা চামচ
- চায়ের লিকার ১ কাপ
- ২ চা চামচ প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল
লাইফলেস অয়েলি হেয়ার-কে ঝরঝরে এবং শাইনি করতে এই হেয়ার মাস্ক অনেক উপকারি। ১ কাপ চায়ের লিকার-এ মেহেদি গুঁড়ো আর আমলা গুঁড়ো ভিজিয়ে রাখতে হবে। আধা ঘণ্টা পর তাতে প্যারাসুট অ্যাডভান্স হেয়ার অয়েল মিশিয়ে মাথায় ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এই হেয়ার মাস্ক চুলকে নারিশ করবে।
ছুটির দিনে একটুখানি সময় নিজের জন্য বের করে নিলেই চুলের জন্য এনাফ। শত ব্যস্ততার ভিড়েও নিয়ম করে সপ্তাহে ২/১ বার হেয়ার প্যাক আর কমপক্ষে ৩ বার অয়েল ম্যাসাজ করলে চুল থাকবে হেলদি। আর হেলদি চুল মানেই স্ট্রং অ্যান্ড শাইনি চুল।
ছবি- Shutterstock