ধুলা-ময়লা, দূষণ ও যত্নের অভাবে চুল ও ত্বকের দারুণ ক্ষতি হয়ে থাকে। চুলের ক্ষেত্রে ক্ষতির হার সবচেয়ে বেশি। প্রায়শই শোনা যায় ব্যাপক হারে চুল পড়ছে, টাক পড়ে যাচ্ছে, চুলের আগা ফেটে যাচ্ছে, রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, খুশকি সহ আরো কত কী! এক কোথায় যাকে বলে, এ হলো রুক্ষ শুষ্ক নিষ্প্রাণ চুল ! সমস্যাগুলো দেখা তো দেয় কিন্তু বিদায় নেওয়ার যেন নামটিও নেই। এসব সমস্যা এড়াতে বা দূর করতে হলে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্নের যাতে চুল ফিরে পাবে পুরনো সৌন্দর্য। আজ চেষ্টা করছি চুলের প্রত্যেকটি জেদি সমস্যার সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া সমাধান জানাতে, যাতে ব্যস্ততা যত্ন-আত্মির পথে বাঁধা না হতে পারে।
রুক্ষ শুষ্ক নিষ্প্রাণ চুল
যাদের চুল ড্রাই তাদের তো বটেই নরমাল ও অয়েলি চুলের অধিকারী তরূণ-তরুণীর মুখেও শুনতে পাওয়া যায় রুক্ষ শুষ্ক নিষ্প্রাণ চুল এর সমস্যা নিয়ে অভিযোগ। এর কারণ হিসেবে বাইরের দূষণ তো আছেই সেই সাথে রিবন্ডিং, হেয়ার কালার, ব্লিচিং, সস্তা ডাই ও প্রতিনিয়ত আয়রন করাকে দায়ী করা যায়। তাছাড়া অনেকেই চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন না সে কারণেও এমনটি হতে পারে।
প্রথমত ভালো ও নামী ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, এমন দোকান থেকে কেনার চেষ্টা করুন যারা তাদের ভোক্তার জন্য অরিজিনাল পণ্য দিয়ে থাকেন। আর কন্টেইনারের গায়ে ‘for dry, dull & frizzy hair’ এর মত লেখা দেখে নিন।
আর ঘরোয়া ভাবে নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহার করুন। হতে পারে নারিকেল, অলিভ, আমন্ড, ক্যাস্টর, সরিষা, সেসিমি বা তিলের তেল অথবা কয়েকটা তেলের সংমিশ্রণ কিংবা আপনার পছন্দের কোন হেয়ার অয়েল। এক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, তেলটি যেন বিশুদ্ধ ও আসল হয় সেদিকে নজর দেবেন। এই একটি কাজ প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে করে দেখুন, ফলাফলে চমকে যাবেন। আর শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না, এটিও যেন আপনার চুলের ধরনকে ফলো করে এবং আসল হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
চুল পড়া
৮০% এর ও বেশি নারী-পুরুষ হয়ত এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। কম বেশি সবারই অভিযোগ যে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে যাচ্ছে, টাক পড়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। প্রথমেই চুলে ব্যবহার্য পানির দিকে নজর দিন, দেখুন পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি নেই তো? যদি থেকে থাকে তবে এ পানি থেকে চুলকে বাঁচানোর পন্থা বের করুন। যদি শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল পড়ার হার বেড়ে যায় তবে এক্ষুনি বাদ দিন এ শ্যাম্পু, নতুন শ্যাম্পু নিয়ে আসুন।
কি করবেন?
তেলের বোতলে মেথি দানা বা শ্যাম্পুর বোতলে পেঁয়াজের রস মেশান, নিয়মিত ব্যবহার করুন। চুল পড়া কমে যাবে অতি দ্রুত।
আগা ফাটা
অনেকেরই লম্বা চুল ভীষণ পছন্দ, কিন্তু আগা ফেটে যাওয়ার কারণে বার বারই ঐ অংশগুলো কেটে ফেলতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি আপনার চুলের আগা ফেটে গিয়েই থাকে তবে প্রথমেই ভালো কোন পার্লারে গিয়ে বা বাসায় বোন, মা কিংবা বান্ধবীর হাতেও ফাটা অংশটুকু ট্রিম করিয়ে নিতে পারেন।
কি করবেন?
এখন থেকে থেকে প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহারের পর ডগার দিকে বেশি করে কন্ডিশনার লাগাবেন, চাইলে ‘এন্টি স্প্লিট এন্ড’ লেখা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এর পর ভেজা চুলে হেয়ার সেরাম ব্যবহার করুন। বাজারে অনেক রকম হেয়ার সেরাম পাওয়া যায়। লিভন, হেয়ার এন্ড কেয়ার, স্ট্রীক্স যে কোনটি বেছে নিতে পারেন। আর ঘরোয়া ভাবে, শ্যাম্পুর পর ২৫০মিলি পানিতে ২ টেবিল চামচ মধু (অবশ্যই খাঁটি হতে হবে) ও ১ কাপ চায়ের লিকার মিশিয়ে চুলের আগায় ঢেলে দিন । নিয়মিত করলে চুলের আগা ফাটা কী জিনিস ভুলেই যাবেন।
খুশকি
জীবনে একবার হলেও খুশকির সমস্যায় ভুগেননি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন ব্যাপার। কারো কারো ক্ষেত্রে সারা বছরই খুশকির সমস্যায় নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হয়।
যাদের খুশকি আছে তারা সব সময় ‘anti dandruff’ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মাথার স্ক্যাল্প সব সময় পরিষ্কার রাখবেন, ধুলা, ময়লা বা ঘাম যাই থাকুক না কেন দিন শেষে সব কিছু সঠিক ভাবে পরিষ্কার করার ব্যাপারটিকে অভ্যাসে রূপান্তরিত করুন।
কি করবেন?
শ্যাম্পু করার আগে যে কোন তেলের সাথে লেবুর রস বা ভিনেগার মিশিয়ে লাগান অথবা লেবু / ভিনেগার সরাসরিও ব্যবহার করতে পারেন যদি এগুলোতে আপনার এলার্জি বা অন্য সমস্যা না থাকে। যদি থাকে তবে তেল বা পানির সাথে মিশিয়ে কিছুটা ডায়ালুট করে নেবেন। লাগানোর ৪০-৬০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেললেই হবে।
আশা করি রুক্ষ শুষ্ক নিষ্প্রাণ চুল নিয়ে যে সমস্যা আপনাদের এতদিন ছিল আর্টিকেলটি পড়ে তা অনেকটাই দূর হবে।
ছবি- Shutterstock