শীত তো শেষ হয়েই গেলো। বসন্ত চলছে, আর কিছুদিন পরে চৈত্রের তীব্র রোদ্দুর এবং এর পরেই গ্রীষ্মকাল। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দিন দিন ঢাকাসহ সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়ছে। প্রতিবছরই তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হচ্ছে দেশবাসী। আর এই তীব্র তাপ শুধু অস্বস্তি নয়, আপনার শরীরে তাপজনিত অসুস্থতার সৃষ্টি করতে পারে যে কোন সময়। সাধারণত যখন আবহাওয়া অনেক উষ্ণ হয়, তখন আপনার শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে। এর ফলাফল তিন ধাপে হবে – পানিশূন্যতা, শরীরের শক্তি ক্ষয় এবং সবশেষে হিট স্ট্রোক। বিশেষ করে হিট স্ট্রোক খুবই মারাত্মক একটি জিনিস। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি বছরই বাংলাদেশে কয়েকজন হিট স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং প্রচন্ড গরমে এই ধরণের তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার উপসর্গ ও প্রতিকার নিয়ে জেনে রাখা জরুরী। কারণ সময়মত চিকিৎসা নিতে পারলে সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব।
[picture]
চলুন দেখে নেয়া যাক, গরমে কি ধরণের অসুস্থতার সম্মুখীন আপনি হতে পারেন এবং এর উপসর্গ কি কি।
১. পানিশূন্যতা।
যখন আপনার চারপাশের তাপমাত্রা অনেক বেশি হবে, তখন শরীরের অভ্যন্তরেও উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। যার কারণে আপনার শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যাবে। এবং শরীরের ভেতরে থাকা তরল সব শুষে নেবে। এই সময় যদি আপনি পানি পান না করে তাহলে সবার আগে আপনার পিপাসা পাবে।
এই সময় যদি আপনি পানি পান না করেন তাহলে পেটে ব্যাথা শুরু হতে পারে। হাত পা ঝিম ঝিম করবে, কিংবা পেশীতে ব্যাথা অনুভূত হবে যেটাকে আমরা ক্র্যাম্প বলে থাকি। প্রচুর ঘাম হবে। সেই সাথে চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরানো কিংবা অন্যান্য দূর্বলতা দেখা দেবে। সুতরাং যখনই এই সব সমস্যায় আপনি ভুগতে শুরু করবেন, দ্রুত কোন শীতল স্থানে বসে বিশ্রাম নিন, এবং অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। সেই সাথে শরীরের ঘাম মুছে নিন, বাতাসে শরীর শুকানো ও শীতল করার চেষ্টা করুন।
২. শক্তিক্ষয়।
যদি পানিশূন্যতা প্রতিকার করা না হয় তাহলে সেটি শরীরের শক্তিক্ষয় এর দিকে মোড় নিতে পারে। কারণ যখন আপনার শরীর পর্যাপ্ত পানি পাবে না, তখন সেটি শরীরের কার্যকলাপ ঠিক রাখার জন্য সঞ্চিত শক্তি খরচ করতে শুরু করবে। এতে আপনার শরীরে দূর্বলতা বাড়তে শুরু করবে।
শক্তিক্ষয় হলে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এছাড়া বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, তীব্র মাথাব্যাথা, অবসাদ, হাত পা কাঁপতে থাকা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। তার পাশাপাশি মানসিক যে উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে দ্বিধাবোধ, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।
৩. হিট স্ট্রোক।
তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে হিট স্ট্রোক। যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি মুহুর্তের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে পারে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করার জন্য যেসব উপসর্গ পর্যবেক্ষণ জরূরী তার মধ্যে প্রথম হল, আক্রান্ত ব্যক্তির তাপমাত্রা চেক করতে হবে। যদি স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে তিনি হিট স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। এছাড়াও শুষ্ক ফ্যাকাসে ত্বক, ঘাম ইত্যাদি পাশাপাশি লক্ষ্য করা জরুরী। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির আচার আচরণ লক্ষ্য করুন। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ছোট করে নিঃশ্বাস নেয়া হিট স্ট্রোকের অন্যতম লক্ষণ।
তার পাশাপাশি যদি বমি হয়, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক এর চাইতে কম হয় তাহলে দেরী না করে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করুন।
অত্যাধিক গরমে অসুস্থ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। সুতরাং এর থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা জরুরী। তাপমাত্রা জনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। গরমে নিজেকে শীতল রাখার ব্যবস্থা করুন। সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন – ফরহাদ রাকিব।
ছবিঃ হুররে ফর ফ্যামিলি