আধুনিকায়নের ভেলায় ভাসতে ভাসতে আমরা এখন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি,সেই সাথে যান্ত্রিক হয়ে গেছে রূপচর্চাও। ব্যস্ততার দোহাই দিয়েই হোক কিংবা ভেষজ দ্রব্যের অপ্রাতুল্যতার জন্যেই হোক,আজকাল অনেকেই বেছে নিয়েছে এবং নিচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্যাদি;এসব পণ্য আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাছাড়া হারবাল পণ্যের নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নানা রকম ভেজাল সামগ্রী। অনেককেই বলতে শোনা যায়,’আমরা বাঙালীরা ভেজালে অভ্যস্ত’-আসলে কি তাই?? আমাদের ত্বকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণই প্রমাণ করে যে একথা সম্পূর্ণ ভুল। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই জানেন রুপচর্চায় টক দই, গোলাপ জল ও কমলার খোসার গুড়ার অবদান অনবদ্য। কেমন হয় যদি জেনে নিতে পারেন এ জিনিস গুলো নিজে তৈরি করার পদ্ধতি? তবে আসুন চট জলদি জেনে নেওয়া যাক এগুলো তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালী –
টক দইঃ
টক দই খাদ্য হিসেবে যেমন ভালো, তেমনি রূপচর্চাতেও এর জুড়ি নেই। অনেকেই হয়ত জানেন না যে খুব সহজে আর অল্প সময়ের মধ্যেই ঘরে বসে উপযুক্ত নিয়মের টক দই তৈরি করা সম্ভব। তবে আসুন দেরি না করে জেনে নিই এজন্য আমাদের কী কী লাগছে-
উপকরণঃ
-পূর্ণ ননীযুক্ত তরল দুধ /গুঁড়া দুধ (সে ক্ষেত্রে পানিও লাগবে)
-লেবু
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১. তরল দুধের ক্ষেত্রে প্রথমেই দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন।
২. গুঁড়া দুধ হলে গরম পানি মিশিয়ে তাকে তরল করে নিন।
৩. এরপর পর্যাপ্ত সময় পর দুধ জ্বাল দেওয়া হয়ে গেলে তা নামিয়ে নিন, সাধারণত আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।
৪. এবার পাত্রের গরম দুধে লেবুর রস দিয়ে দিন, ১ কাপ দুধে ২ চামচ লেবুর রসই যথেষ্ট।
৫. সবশেষে পাত্রটিকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন, ঠান্ডা হয়ে এলেই দেখবেন দুধ জমাট বেঁধে দইয়ে রূপ নিয়েছে।
এবার প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারবেন এ টক দই – ত্বক, চুল কিংবা রান্নায় এ দই এনে দেবে আপনার নিজের হাতের ছোঁয়া।
গোলাপ জলঃ
উপকরণঃ
-গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি,
-তাপ নিরোধোক কাঁচের পাত্র (ঢাকনা সহ)
-ঝর্ণার পানি (মিনারেল ওয়াটার হলেও হবে)
-ছাঁকনি
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১. গোলাপের পাঁপড়ি নিন। নিজের বাগানের গোলাপ হলে সবচেয়ে ভালো, যদি না থাকে তবে দোকান থেকে কিনে নিতে হবে। কেনা গোলাপের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন সেগুলোতে কেমিকেল না থাকে, তাই ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
২. গোলাপ ফুল থেকে পাঁপড়ি আলাদা করে এক কাপ পরিমাণের মত নিন ও কাঁচের পাত্রটিতে রাখুন।
৩. এবার ২ কাপ পানি সেদ্ধ করুন এবং ঐ গরম পানি পাঁপড়ি সহ কাঁচের পাত্রটিতে ঢেলে দিন। ঢাকনা দিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখুন।
৪. তারপর অন্য একটি পাত্রে ছাঁকনির সাহায্যে গোলাপের পাঁপড়ি গুলো থেকে পানি আলাদা করে ফেলুন।
৫. সব শেষে বোতল ভরে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন।
যেহেতু এই গোলাপ জলে কোন প্রিজারভেটিভ নেই, তাই এটি সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মত ভালো থাকবে, এক সপ্তাহ পর অবশিষ্ট গোলাপ জল ফেলে দিয়ে নতুন করে তৈরি করতে হবে।
কমলার খোসার গুঁড়াঃ
উপকরণঃ
-কমলার খোসা (বীজ ছাড়া)
-খোলা-ছড়ানো পাত্র (অ্যালুমিনিয়াম হলে ভাল),
-ব্লেন্ডার বা শিল পাটা
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১. প্রথমেই কমলার খোসা গুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন; আঁশ, কমলার কোয়া বা বীজ যেন না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিন।
২. এবার খোসা গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে চওড়া ও ছড়ানো পাত্রে ভালো করে বিছিয়ে দিন।
৩. তারপর বাড়ির যেখানটায় সবচেয়ে বেশি রোদের তীব্রতা রয়েছে সে জায়গায় পাত্রটিকে রেখে দিন।
৪. প্রখর রোদে ২-৩ দিন ধরে কমলার খোসা গুলোকে শুকোতে দিন।
৫. এবার উপযুক্ত ঠান্ডা হলে হাত দিয়ে কয়েকটা খোসা ভাঙার চেষ্টা করে দেখুন, যদি দেখেন সহজেই ভেঙে যাচ্ছে তবে শুকোনো শেষ, আর না হলে আরো এক দিন রোদে রাখুন।
৬. তারপর ব্লেন্ডার বা পাটার সাহায্যে এগুলোকে মিহি গুঁড়ায় রূপান্তরিত করুন।
৭ সব খোসা গুঁড়ো করা হয়ে গেলে এয়ার টাইট জারে করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন। এ গুঁড়ো ৬ মাসেরও বেশি সময় ভালো থাকে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি, আজকের লেখাটি সবার পছন্দ হয়েছে এবং এখন থেকে সবাই বাড়িতে বসেই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রূপ-চর্চা করতে পারবেন। সবার সর্বাঙ্গীন সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য কামনায় আজকে এখানেই শেষ করছি।
লিখেছেনঃ রোজা স্বর্ণা
ছবিঃ মেকআপএন্ডবিউটি.কম