হারবাল অয়েল ম্যাজিক | আসলে কতটা  বিশ্বাসযোগ্য  (পর্ব-১) - Shajgoj

হারবাল অয়েল ম্যাজিক | আসলে কতটা  বিশ্বাসযোগ্য  (পর্ব-১)

herb-infused-oils

কিছুদিন আগেই চুলের যত্নে তেল ইউজ করাটা আসলেই প্রয়োজন নাকি সহজেই কোন শর্টকাট করে একই রেজাল্ট পাওয়া যায় এই বিষয়ে ২ পর্বে লিখেছিলাম… দেখে খুশি হলাম অনেকেরই লেখা ভালো লেগেছে। বুঝলাম আমরা আসলেই টাকা দিয়ে কি কিনছি, কি মাখছি তা নিয়ে একটু ডিটেইলে জানতে চাই। আর আগেই বলেছিলাম এখন থেকে শুধু ১০-১২ টা র‍্যান্ডম টিপ না দিয়ে আমার প্রতিটা লেখায় ত্বক চুল আর স্বাস্থ্যের জন্য আমরা যা করি তা কেন করি সেটা নিয়ে কথা বলব। আজকের লেখাটি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

আসলে আজকের লেখাটি অন্য টপিকে লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম আমাদের অনেক পাঠক আগের দুটি পর্ব পড়ে কিছু অত্যন্ত ইনটেলিজেন্ট প্রশ্ন করেছেন…! তাই শেষ মুহূর্তে লেখার টপিক চেঞ্জ করলাম। আমি বলেছিলাম, ত্বক ও চুলের জন্য আমরা তেলের সাবস্টিটিউট যেগুলো ইউজ করি তার লং টার্ম ইফেক্ট কেন এবং কীভাবে হয়, এবং তেল আসলে কীভাবে চুলে কাজ করে। পড়ে পাঠকরা যেসব প্রশ্ন করেছেন সেগুলোর gist যদি একটু চেক করি তবে নিচের টপিকগুলো পাই-

Sale • Oil Control, Hair Oil

    আপনাদের জিজ্ঞাসা:

    –   তেল থেকে একটু এগিয়ে গেলেই হারবাল তেলের নাম শোনা যায়, এটা কী?

    –   কেমিক্যাল আর হারবাল, দুটোর মধ্যে কোনটা ভালো?

    –   হারবাল তেল কীভাবে কাজ করে?

    –   হারবাল তেল, হারবাল ইনফিউশন আর এসেনসিয়াল অয়েল, এসব কমপ্লিকেটেড শব্দগুলো কী একই জিনিসের আলাদা আলাদা নাম?

    –   হারবাল অয়েল ঘরে কীভাবে সঠিক উপায়ে বানাবো ?

    –   ত্বক আর চুলের সমস্যায় এগুলো কীভাবে ইউজ করে?

    –   আসলেই কী হারবাল তেলে চুল পড়া কমে? নাকি টিভি আর পত্রিকার অ্যাড দেখে অযথাই একগাদা টাকা নষ্ট করছি?

    অনেক প্রশ্ন, এবং খুবই জরুরি সব প্রশ্ন। আমরা সব আর্টিকেলেই এটা সেটা ওটা তেলের সাথে মিশিয়ে ম্যাজিকাল হারবাল অয়েল বানিয়ে ফেলুন- টাইপ কথা বার্তা বলি। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় না বললেই চলে।এবার দেব। কিন্তু এক পর্বে যেহেতু এত কথা বলা সম্ভব না….. ‘হারবাল অয়েল’ নামক এই রহস্যময়(!) বস্তু নিয়েও কয়েক পর্বে কথা হবে। আশা করি পড়বেন।

    [picture]

    হারবাল অয়েল:

    আমাদের কালচারে ‘herb’  শব্দটি খুবই জনপ্রিয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই “হারবাল অমুক, হারবাল তমুকেই সব সমস্যার সমাধান” টাইপের কমার্শিয়াল দিন-রাত মাথায় বেশ ভালভাবেই জিনিসটা সেট করে দিয়েছে। অনেকেই জানেন না herb কাকে বলে, তারপরেও বাজারে গিয়ে হারবাল কসমেটিক খোঁজেন, কেন খোঁজেন? এই প্রোডাক্টই যে খুঁজতে হবে, তমুক ব্র্যান্ডের হারবাল হ্যানো ত্যানো না পেলে আপনার জীবন বৃথা এই চিন্তার উৎপত্তি কোথায়?

    ক্লিকবেইট লাইন লেখা বন্ধ করে আসল লাইনে আসি, ‘herb’ (হার্ব) কী? হার্বহচ্ছে, গুল্ম জাতীয় গাছ। মানে ছোট সাইজের গাছ, যার বাকল নেই। কিন্তু স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ারে যেকোনো প্রাকৃতিক এবং গাছ থেকে পাওয়া উপকরণ কেই ‘হারবাল উপাদান’ বলে তকমা দিয়ে দেয়া হয়। নিম গাছের পাতাও এখানে হার্বআবার তুলসির পাতাও হার্ব।

    প্রতিটা গাছের পাতা, বাকল, ফল-ফুল এসব অংশে গাছের নির্যাস থাকে। প্রতিটার মুল গঠন হয় আলাদা, এই কারণে ঘ্রাণ, চেহারা সবই হয় আলাদা। এবং মানুষের ত্বক চুলের সংস্পর্শে এরা বিভিন্ন রিঅ্যাকশন করে। সেটা ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।

    এই নির্জাসটাই প্রাচীনকালে বিভিন্ন মাধ্যমে/ বেইজে ধরে দীর্ঘস্থায়ী করার পন্থা আবিস্কার করা হয়েছে। বেইজ মানে হচ্ছে এমন কিছু যাতে এই নির্জাস দ্রবীভূত হবে। বেইজ হতে হবে আদ্রতা মুক্ত। যাতে নির্জাস পচে না যায়। তো এমন জিনিস কী কী আছে?

    মোম, তেল তাই তো?

    হারবাল নির্যাস সংরক্ষণের এই প্রথা প্রথম কবে শুরু হয় সেটা ঠিকভাবে বলা যায় না। মিশরীয়রা মামির সাথে ভেষজ তেলে হার্ব মিক্স করে পারফিউম বানিয়ে দিয়ে দিত। যা ৫০০০ বছর পরেও যেমনটা তেমনই আছে কৌটার ভেতরে। সো পদ্ধতিটা যে কাজের সেব্যাপারে সন্দেহ নেই। পারফিউম অয়েল বা আতর বলে আমরা যা ইউজ করি তাও কিন্তু হারবাল অয়েলই…

    সুগন্ধির কথা বাদ দেই, সেই যুগেই চিকিৎসার জন্য লতা পাতার লেপ, মলম এগুলো ব্যবহার করা হত। তবে এসবই প্রাচীন পদ্ধতি। এখন দুষ্প্রাপ্য হার্বের গুণগত মান ঠিক রেখে সংরক্ষণের  জন্য সেগুলো এইসব বেইজে মিক্স করে বিভিন্ন সলিউশন তৈরি হতে শুরু করল… তেলের সাথে এই মিক্সচার-গুলোই আমাদের আধুনিক হারবাল অয়েলের পূর্বপুরুষ। এখন সেটা বোতলে ভরে বাজারে বিক্রি করা হয়, আবার অনেকে নিজেই বানান। জিনিস কিন্তু একই। তেলের ভেতরে অন্যান্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের নির্যাস তাই না?

    কেমিক্যাল ভালো না হারবাল জিনিস ভালো?

    চিরন্তন প্রশ্ন, এখন আমি যদি একটা হারবাল কোম্পানির মালিক হোতাম গম্ভীর স্বরে বলতাম-

    কেমিক্যাল খুব খারাপ, দাদি পরদাদি কি কেমিক্যাল ইউজ করত? তাদের কি চুল ছিল না? হুহ, এখনই বোতলগুলা ফেলে দিন।

    কিন্তু কি জানেন? যেই হোক না কেন, এই কথাগুলো যদি কেউ আপনাকে বলে সে কিন্তু টেকনিক্যালি ভুল বলছে… কেমিক্যাল কি জিনিস? পৃথিবীতে যে ১১৮ টা মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তারই পারমিউটেশন কম্বিনেশন। আপনাকে আমাকে ভেঙ্গে তার মুলে চলে গেলেও ঘুরে ফিরে এই ১১৮ টা জিনিসের ভেতরেই থাকতে হবে, একই ঘটনা ঘটবে পানি, বাতাস, কাপড় চোপড় সব কিছুর বেলায়। গাছপালাও কিন্তু এগুলো দিয়েই বানানো…

    তাহলে হারবাল অয়েল কি কোন জাদুকরী জিনিস নাকি? যে সেটা কেমিক্যাল থেকে আলাদা? হারবাল অয়েল হচ্ছে একই পদার্থের ভিন্ন রূপ। সত্যি কথা বলতে ক্লাস ৮ এর বাচ্চারাও এটা তাদের সাধারন বিজ্ঞান বই দেখে বলে দিতে পারবে…

    আর সহজ একটা টিপ দিয়ে দেই-

    কেউ যদি আপনাকে, কেমিক্যাল পচা হারবাল ভালো, অ্যালোপ্যাথি পচা হোমিওপ্যাথি ভালো, এই টাইপ জ্ঞান দিতে আসে তার কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেবেন। এগুলো কি , কোথা থেকে আসলো, এগুলা যে at the end of the day একই জিনিসের আলাদা রূপএটা যে বোঝে না, তার কোনটা ‘ভালো’ কোনটা ‘পচা’ ঠিক করার বুদ্ধি হওয়ার কথা না।

    তাহলে আমি আসলে এত বড় গল্প ফেঁদে বসলাম কেন? অন্যকে গাধা বলার জন্য? অনেকেরই সেটাই মনে হতে পারে। না, আমি জাস্ট পাঠকের কনফিউশন নিজের জ্ঞান যতটুকু দিয়ে যতটা পারা যায় দূর করার ট্রাই করছি।

    কিন্তু আসল কথা তো বললেন না, ‘কোনটা ভালো?’

    ‘কোনটা ভালো’ এই প্রশ্নের কোন ডাইরেক্ট উত্তর নেই। মলা ঢেলা মাছের চেয়ে চিংড়ি খেতে ভালো, কিন্তু কারো যদি চিংড়িতে অ্যালার্জি থাকে, তাকেও কি চিংড়ি ভালো বলে ঠেসে এক গাদা মালাইকারি খাইয়ে দেবেন? উত্তরটা নিজেই দিন।

    প্রত্যেক মানুষের শারীরিক গঠন আলাদা, প্রত্যেকের জিন আলাদা, এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের কোন মিল নেই। অমুকে তমুক ক্রিম মেখে ফর্সা হয়ে গেছে বলে লাফ দিয়ে পড়ে সেই ক্রিম মেখে গালে ঘষে অ্যালার্জি বানিয়ে ফেলেছেন  এমন ঘটনা প্রতিদিনই দেখি। সো ঢালাও-ভাবে ‘ওইটা ভালো, এখনই সবাই কিনে আনেন’ টাইপের আর্টিকেল সাজগোজে লেখা হয় না। এজন্য অনেকে রেগেও যান, কষ্ট করে নিজের কোনটা স্যুট করে সেটা বের করার ধৈর্য এবং মেনটাল ম্যাচিওরিটি না থাকলে রাগাটাই স্বাভাবিক…।

    তাই কথা না বাড়িয়ে রিভিউ স্টাইলে দেখে নিই, হারবাল অয়েল স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ারে ইউজ করার পজিটিভ দিকগুলো-

    ১। ভেজাল মুক্ত-

    বলাই বাহুল্য, নকল কসমেটিক তৈরি আর বিক্রিতে আমাদের দেশের জুড়ি নেই (না, আমাদের জুড়ি নাই , WOW বলে গর্বিত হবেন না যেন আবার) । আসল তেল প্রাকৃতিক তেল বিক্রি করে এমন ব্র্যান্ড খুব কমই আছে আমাদের দেশে। আর আমাদের প্রজন্মের দেশীয় সংস্কৃতিতে এতোটাই জ্ঞান যে, বাজার থেকে বোতল ভরে নারিকেল তেল নিয়ে এলাম না মিনারেল তেল সেটা চেহারা দেখে বোঝার ক্ষমতা নেই। সুযোগ নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো এই ব্র্যান্ড সেই ব্র্যান্ড বিদেশি দাঁত ভাঙ্গা নামের ব্র্যান্ড এসে লতা পাতা বোতলে ভরে যা ইচ্ছে তাই বিক্রি করে যাচ্ছে। আমরা আবার এককাঠি সরেস জাতি, সেই বোতল ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে ভেজাল বানিয়ে বাজারে বিক্রি করি । চোরের উপর বাটপাড়ির এমন উদাহরণ আর কোথায় পাবেন?

    এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কেউ যদি পিওর নারিকেল তেল নিয়ে এসে নিজেই কিছু বানিয়ে ইউজ করতে চায় তবে তাকে কি দোষ দেয়া যায় ?

    ২। কাস্টোমাইজেশনের সুবিধা-

    আগেই বলেছি, চিংড়ি মালাইকারি সবার জন্য না। সুতরাং আমার ত্বক বা চুলের জন্য যদি তিলের তেল বেশি ভালো হয়, আমি তমুক আপুকে দেখে অলিভ অয়েল মাখবো কেন? আবার কারো যদি মেথিতে অ্যালার্জি থাকে তাহলে সে মেথি কেন ইউজ করবে। হারবাল তেল, আজকাল বাজারে যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোও সাধারনত কাস্টোমাইজ করার সুবিধা রেখেই বানানো হয়। দেখবেন বিখ্যাত সব ব্রান্ডেরই বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য আলাদা আলাদা প্রোডাক্ট থাকে, ঢালাও-ভাবে সবাইকে এক বোতল তেল ধরিয়ে না দিয়ে, যাদের চুল পড়ার সমস্যা  তাদের জন্য এক, খুশকির জন্য আরেক, হট অয়েল ট্রিটমেন্টের জন্য, চিটচিটে  ভাব যাতে না হয় সেজন্য, সব প্রয়োজনের জন্য আলাদা তেল পাওয়া যায়। আর পিওর তেল সেপারেট সেল করা হয় যেগুলো আপনি নিজে কিনে এনে নিজের ইচ্ছামতো ঘরেই হারবাল অয়েল বানিয়ে নিতে পারেন।

    ৩। প্রিজারভেটিভ এবং পেট্রোকেমিক্যাল-

    অনেক ব্রান্ডই আজকাল অরগানিক প্রোডাক্ট বাজারজাত করার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এদের আমি বাহবা দেব। নকলের দেশে চান্স পেয়েও বোতলে মিনারেল অয়েল ভর্তি করে কাস্টোমারের টাকা হাতিয়ে না নিয়ে যারা এখনও প্রপার সোর্স থেকে দামি নারিকেল তেল সংগ্রহ করে সেটা মিনারেল অয়েলের দামে ওইসব ব্র্যান্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করে সততা বজায় রাখছে তাদের গুণগান আর বেশি নাই বা করলাম। স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ারে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন। আবার অনেক প্রিজারভেটিভ নিয়ে মানুষের মনে অনেক আশঙ্কা থাকায় অনেকেই বিভিন্ন পেট্রোকেমিক্যাল, এবং প্রিজারভেটিভ ছাড়া তৈরি এসব হারবাল অয়েল বেছে নেন। এটাও একটা সঠিক সিদ্ধান্ত। যখন হাতের কাছে ন্যাচারাল উপায় আছে, তখন বাম হাত ঘুড়িয়ে ডান কান ধরার তো দরকার নেই। তাই না?

    আমরা যখন নিজেরা চেক করে দেখতে পারছি না, এবং নিশ্চিতভাবে জানতে পারছি না কোন প্রিজারভেটিভের সাইড ইফেক্ট আসলে কি (এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি) তখন আমার মতে পিওর মিনারেল অয়েল, বিভিন্ন চটকদার সিরাম, মাস্ক  অ্যাভোয়েড করে হারবাল অয়েল যাতে অবশ্যই ন্যাচারাল অয়েলস আছে সেটা কিনে আনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

    প্রথম দুটো প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেই এক পর্ব শেষ করে ফেললাম। এবার দেরি হবে না, খুব শীঘ্রই পড়ের প্রশ্নগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব। আজ এ পর্যন্তই। প্লিজ কারো মনে আরও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। ‘কোনটা ভালো?’ এই প্রশ্ন বাদে, এটার উত্তর একবার দিয়েছি, বার বার আলাপ করব না। আর আমি কোন ব্র্যান্ডকে ভালো বা পচা বানানোর জন্য লিখছিনা। যা সত্যি বলে জানি তা লিখছি। ‘হারবাল অয়েল’ হতে হলে অ্যাটলিস্ট ভেতরে হারবের আগে অরিজিনাল ভেজিটেবল অয়েল থাকতে হবে। এটাই মোদ্দা কথা, কেন থাকতে হবে জানবেন পরের পর্বে…

    লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মিম

    6 I like it
    1 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort