মানবদেহের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে এমন একটি অসুখের নাম বললে অবধারিতভাবে যে নামটি মাথায় আসে তা হল এইডস। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কমবেশি ধারণা থাকলেও তাতে রয়ে গেছে নানা অস্পষ্টতা। কাজেই বাঁচতে হলে অবশ্যই এইচ.আই.ভি. (HIV) এবং এইডস (AIDS) সম্পর্কে জানতেই হবে।
এইচ.আই.ভি. এবং এইডস-কে অনেকে একই জিনিস ভাবেন। তবে আদতে তা একই জিনিস নয়। এইচ.আই.ভি. বা হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস মূলত এইডস-এর জীবাণুর নাম যা কনডমবিহীন শারীরিক সম্পর্ক এবং এইচ.আই.ভি. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তগ্রহণের ফলে বা এমন কোন ব্যক্তির সাথে সূচ বা রেজর জাতীয় কোন কিছু শেয়ার করলে যার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবাণু দেহে ঢুকে পড়তে পারে, এসব পদ্ধতিতে ছড়ায়।
এইচ.আই.ভি. (HIV) দ্বারা আক্রান্ত হবার মানেই এইডস হওয়া নয়, বরং এর তৃতীয় বা সর্বশেষ ধাপটির নাম এইডস বা অ্যাকোয়ারড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিন্ড্রোম (Acquired Immune Deficiency Syndrome)। এই নামের পেছনে ব্যাখ্যাটা হলো এই যে,
Acquired: It means that you can get infected with it.
Immune Deficiency: It specifies the weakness of body’s immune system.
Syndrome: It is a group symptoms that make up a disease.
এইচ.আই.ভি. ইনফেকটেড একজন মানুষের এইডস দ্বারা আক্রান্ত হতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। আর যত দ্রুত এইচ.আই.ভি. ইনফেকশন-এর ডায়াগনোসিস হয়, এর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এইডস হওয়া ঠেকানো ততই সম্ভবপর হয়। তবে দুঃখের বিষয় হল এর উপসর্গগুলো জানা না থাকার কারণে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি এইচ.আই.ভি. দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, ফলে সঠিক ডায়াগনোসিস এবং অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপির অভাবে অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৭ সালে ইউএনএইডস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১২০০০ এইচ.আই.ভি আক্রান্ত ব্যক্তি বাস করছেন অথচ এর চিকিৎসা সঠিক পন্থায় গ্রহণ করছেন মাত্র ১৮০০ রোগী! (*)
প্রথম স্টেজ
এইচ.আই.ভি. দ্বারা আক্রান্ত হবার প্রথম স্টেজ-টি শুরু হয় ২-৪ সপ্তাহ পর। এসময় অনেকের জ্বর আসে, গলা ব্যথা করে, র্যাশ ওঠে এবং মাংসপেশি বা হাড়ে ব্যথা হতে পারে। কাজেই আপনি যদি দ্বিধান্বিত থাকেন যে আপনি এইচ.আই.ভি. দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তবে এটিই সঠিক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কনফার্ম হওয়ার এবং চিকিৎসা শুরু করার।
দ্বিতীয় স্টেজ
দ্বিতীয় স্টেজ-এ সাধারণত কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না। কাজেই প্রথম স্টেজ-এ যদি আপনি চিকিৎসা শুরু না করেন তবে হতে পারে আপনি এইডস দ্বারা আক্রান্ত হবার আগে আর কখনোই তা জানবেন না। দ্বিতীয় স্টেজ সাধারণত ৫-১০ বছর স্থায়ী হতে পারে। তবে এইচ.আই.ভি. দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথম বা দ্বিতীয় যেই স্টেজ-এই থাকুন না কেন, অন্যের দেহে এই জীবাণু সংক্রমণ করতে পারেন।
তৃতীয় / সর্বশেষ স্টেজ
সর্বশেষ স্টেজ হচ্ছে যখন দেহের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে আসতে থাকে। ফলে বিভিন্ন ইনফেকশন এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেড়ে যায়। চিকিৎসাবিহীন এইডস-এ আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সাধারণত এক থেকে তিন বছরের বেশি বাঁচেন না।
যেমনটা শুরুতেই বলেছিলাম যে, সঠিক ধারণার অভাব একজন এইচ.আই.ভি. দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসার পথে প্রধান অন্তরায় আর এর ফলে সে যে শুধু নিজে এইডস আক্রান্ত হতে পারে তাই নয় বরং তার ভুলের মাশুল তার পরিবার এবং আশপাশের মানুষদেরও দিতে হতে পারে। কাজেই কনডমবিহীন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বা রক্তদাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া রক্তগ্রহণের মত ভুলটা ভুলেও করতে যাবেন না। নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।
*তথ্যসূত্র- এইডসডাটাহাব.ওআরজি
লিখেছেন- ডাঃ তাসনিম তামান্না হক, চিফ কনসালটেন্ট, স্কিনেজ ডারমাকেয়ার
ছবি- আইস্টকফটো.কম