আমি সানস্ক্রিন ইউজ করার খুব বড় ফ্যান। সাজগোজও সবসময় রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন সাজেস্ট করে থাকে। এবং প্রায় অনেক সময় রিডাররা পেজে সাজেশন চান অথবা ইনবক্স করেন রোদে পোড়া ত্বক উজ্জ্বল এবং নিচের সমস্যাগুলো নিয়ে-
“আমার হাত পা রোদে পুড়ে একদম কালো হয়ে গেছে। কিন্তু সামনে এই প্রোগ্রাম সেই প্রোগ্রাম। এখন কি করব? খুব তাড়াতাড়ি স্কিনটোন ঠিক করে ফেলার টিপস চাই।”
আমাদের প্রথম জিজ্ঞাসাই থাকে, সানস্ক্রিন ইউজ করেন তো ডেইলি? রোদে গেলে মাথায় ছাতা থাকে?
দুঃখের ব্যাপার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরটা হয়-“না”। তারা এগুলো কিছুই করেন না!
যতটা দ্রুত এই প্রচণ্ড গরম এবং রোদে পোড়া ত্বক আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব তা নিয়ে কথা বলি চলুন। মেইনলি রোদে পুড়ে স্কিনটোন চেঞ্জ হয়ে গেলে অথবা ট্যান লাইন পড়ে গেলে কি করবেন সেটাকে ৩ ভাগে ভাগ করেছি।
স্টেপ ১ – প্রোটেকশন
রোদে পুড়েছেন রোদ গায়ে লাগার কারণে। সুতরাং এখন আপনার মেইন কাজ হবে ট্যান দূর করার সময়েও যেন স্কিনে আবার রোদ না লাগে সেই ব্যবস্থা করা। কীভাবে রোদে পোড়া ত্বক উজ্জ্বল করবেন?
- লং স্লিভ কটন ড্রেস পড়বেন পারলে
- পা ঢাকা জুতা পরবেন
- অবশ্যই রোদ বৃষ্টি যাই থাক না কেন ছাতা খুলবেন। বাইরে গেলেই ছাতা খুলবেন
- ফেইসে এবং ঘাড়ে মিনিমাম ১ টি স্পুন সানস্ক্রিন ইউজ করবেন। এর কম কোনভাবেই নয়।
- প্রতি হাত পায়ের ১ টেবিল স্পুন সানস্ক্রিন মাখবেন।
- সানস্ক্রিন মাখার ১৫-২০ মিনিট পড়ে বাইরে যাবেন।
- প্রতি ২ ঘণ্টায় সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করবেন
ঘরে বসে থাকাটা আপনার সানস্ক্রিন ইউজ না করার অজুহাত? উপরের টিপগুলো তৈরি করতে যাওয়ার আগে ফলো করবেন। যাদের তিল পড়ে যাওয়া এবং ট্যান বেশি হওয়ার ধাত তারা ঘরে দিনের বেলায় spf 20 সানস্ক্রিন ইউজ করবেন।
স্টেপ ২- বডি ব্রাইটেনিং বাথ অয়েল রেসিপি
ট্যান অলরেডি পড়ে গেলে রোজ আপনাকে সময় নিয়ে এই তেলটা ইউজ করতে হবে। তিলের তেল ত্বকের ট্যান কাটাতে খুবই হেল্পফুল। রেগুলার ইউজে তিলের তেল শরীরের ব্রণের দাগ দূর করবে, কালচে ভাব কাটাবে। ট্যান লাইন হালকা করবে এবং শরীরে ব্রণ হওয়ার হার কমাবে।
যারা তিলের তেল পাচ্ছেন না –
সাবস্টিটিউট ১
কাঠবাদামের তেল। পিওর তেল কিনবেন। skin cafe ব্র্যান্ডের তেল ইউজ করতে পারেন।
সাবস্টিটিউট ২
- ২ কাপ নারিকেল তেল
পিওর নারিকেল তেল কিনবেন। আমলা, মেহেদি মিক্স করা হারবাল জিনিসপত্রের কথা বলছি না। এর বেনেফিট স্কিনের জন্য তিলের তেলের মতো হবে না। কিন্তু যাদের স্কিন ড্রাই তারা বেশি বেনেফিট পাবেন নারিকেল তেলে।
- আমলকী গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
খুব ইজিলি ৪-৫টা আমলকী রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করেও নিতে পারেন। আমলকীর ভিটামিন সি রোদে পোড়া ভাব কাটাতে এবং শরীরের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
- হলুদের পেস্ট – ২ টেবিল চামচ
রান্নার হলুদ দিয়ে সাবস্টিটিউট করা যাবে না। আস্ত কাঁচা হলুদ কিনে আনবেন। বেঁটে পেস্ট বানাবেন যদি সময় থাকে। হলুদ স্কিন ব্রাইট করতে হেল্প করবে। স্কিনে গোল্ডেন গ্লো নিয়ে আসবে। স্কিনের ব্রণ ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমিয়ে দেবে। তবে এলার্জি থাকলে হলুদ এভয়েড করাই বেটার!
যেভাবে তৈরি করবেন-
– খুব অল্প আঁচে তেল গরম করুন। তেল যেন ফুটতে শুরু না করে।
– কাঁচা হলুদের পেস্ট দিয়ে দিন তেলে। এবার জাস্ট ২-৩ মিনিট অল্প আঁচে রাখুন। হলুদের পেস্ট যেন পুড়ে কালো হয়ে না যায়। বা তেল যেন ফুটে না ওঠে।
– চুলা থেকে নামিয়ে তেল ঠাণ্ডা করে একটা কাঁচের বোতলে ভরে নিন। রুম টেম্পারেচারে চলে এলে তেলে আমলকীর গুঁড়া দিয়ে দিন। বোতলটা ঝাঁকিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ২ দিন পর থেকে তেল ইউজ করতে পারবেন। তেলের রং হবে খুব ঘন হলুদ।
– অবশ্যই তেল বাইরে রাখা যাবে না। ফ্রিজেই রাখতে হবে। এই পরিমাণ তেল আমি ২ সপ্তাহ ইউজ করতে পারি। এরপর নতুন করে বানাই।
ব্যবহার বিধি-
– গোসলের আগে পুরো শরীরে তেল দিয়ে খুব ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ১৫-৩০ মিনিট রেখে দিন।
– এবার খুব ভালো করে বাথ লিলি অথবা লুফা দিয়ে বডি স্ক্রাব করে গোসল করে ফেলুন। গোসলের সময় সাবান ইউজ করবেন না। কেনা উপটান অথবা শাওয়ার জেল ইউজ করতে পারেন।
স্টেপ ৩ – মাস্ক সাজেশন
গোসল থেকে বের হয়েও কাজ আছে। নিচে আমার খুব পছন্দের দুটো মাস্ক রেসিপি দিলাম রোদে পোড়া ত্বক উজ্জ্বল করতে-
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য-
- টক দই – ১ কাপ
- টমেটোর রস বা শসার রস – ৫ টেবিল চামচ
- মুলতানি মাটি – ২ টেবিল চামচ
শুষ্ক ত্বকের জন্য-
- বেসন – ১ কাপ
- শসার রস অথবা দুধ – ৫ টেবিল চামচ
- টক দই – ২ টেবিল চামচ
জাস্ট সবকিছু মিক্স করে সারা শরীরে মেখে ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই পুরো ট্রিটমেন্ট-টা ট্যান চলে না যাওয়া পর্যন্ত রোজ করবেন। ট্যান চলে গেলে/ না থাকলে সপ্তাহে ২ বার করাই যথেষ্ট। এটা খুবই টাইম কনজিউমিং এবং কষ্টকর। কিন্তু কোন সাইড এফেক্ট ছাড়া এর থেকে ইজি সলিউশন আমার জানা নেই। আর সানস্ক্রিন ইউজ না করার দাম তো দিতেই হবে তাই না?
বিশেষ দ্রষ্টব্য-
(১) আবার বলছি, সানস্ক্রিন ডেইলি ইউজ না করে কেউ যদি এই ট্রিটমেন্ট শুরু করেন তনে রিগ্রেট করবেন। সো বি কেয়ারফুল।
(২) অনেকেই জানতে চাইবেন মুখের জন্য এটা ইউজ করা যাবে কিনা। উত্তর হচ্ছে, অনেকেই মুখে বিভিন্ন তেল ইউজ করতে ভয় পান। কিন্তু যদি তিলের তেল অথবা আমনড অয়েল আপনার ফেসে স্যুট করে অবশ্যই আপনি এটা ইউজ করতে পারবেন। ড্রাই স্কিনের জন্য আমনড অয়েল বেস্ট। স্কিন সেনসিটিভ না হলে এবং স্যুট করলে নারিকেল তেল ইউজ করতে পারেন। কিন্তু তিল/ আমন্ড ইউজ করাটাই বেস্ট। কিন্তু যদি আপনি না জানেন তেল/ আমন্ড অয়েল আপনাকে মানায় কিনা বোকামি করে আগেই পুরো মুখে মাখবেন না। প্যাচ টেস্ট করুন। স্মার্ট হন, ওকে?
(৩) আন্ডারআর্ম, হাঁটু, কনুইয়ের জেদি দাগের জন্য এই মেথড ট্রাই করতে পারেন।
(৪) হলুদ তেলটা আপনার কাপড় চিরতরে নষ্ট করে ফেলবে। সো বুদ্ধি করে একটা পুরনো কাপড় পড়বেন। অবশ্যই সারা শরীরে তেল মেখে বিছানায়/ সোফায় শুয়ে বসে থাকবেন না। দাগ পড়বে না এমন কোথাও বসুন।
(৫) অনেকের স্কিন হলুদের ব্যবহারে পুরো হলুদ হয়ে যায়। কিন্তু ডেইলি শাওয়ার জেল দিয়ে স্কিন ক্লিন করলে হলদে ভাব চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবার স্কিন সমান নয়। যদি আপনার স্কিনে জেদি হলুদের stain পড়ে তবে আপনি হলুদের পেস্ট কমিয়ে দেবেন।
আশা করি স্কিনে জেদি ট্যান পড়ে গেলে ডেইলি এই পুরো ট্রিটমেন্ট করে খুব কম সময়ে রেজাল্ট পাবেন। ট্রাই করে কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না! অনলাইনে অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। নিজেকে সময় দিন, নিজের যত্ন নিন আর মন খুলে হাসতে ভুলবেন না! সুন্দর হোক আপনার প্রতিটা মুহূর্ত। ভালো থাকবেন।
ছবি – সাজগোজ, সাটারস্টক
লিখেছেন – মীম তাবাসসুম