“এয়ারব্রাশ অ্যাপটা ছিল বলে রক্ষা। অনির বার্থডে তে একগাদা সেলফি তুলেছি সব ফ্রেন্ডদের সাথে। ছবিগুলো বসে বসে মাত্র এডিট করে আপলোড দিলাম। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেমিস্টার ফাইনাল আর অ্যাসাইনমেন্টের প্রেশারে পার্লারে যাওয়ার সময় ও পাইনি, আর লাস্ট টাইম পার্লারে আপার লিপ প্লাক করার সময় মেয়েটা ঠোঁটের উপরে সামান্য কেটে ফেলেছিল। মেজাজটা এত খারাপ হয়েছিল তখন, মেয়েটাকে বললাম, সে কোথাকার এক ক্লেঞ্জিং মিল্ক এনে জায়গাটা ক্লিন করে বললো ঠিক হয়ে যাবে। বাসায় যাবার পর যেটা হলো, রাতে ওখানে বেরোলো র্যাশ। বরফ দিয়ে দিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেলাম।
আজকের ছবিগুলোতে অ্যাপের সাহায্যে মোটামুটি ভ্রু আর আপার লিপের লোমগুলোকে স্মুদ করে গায়েব করা গিয়েছে, বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে ছবিগুলো।
বাহ! ৬৩টা লাইক, ৫টা কমেন্ট!
এ কি! তন্বী তো আমার সাথে তোলা ছবিগুলো এডিটিং ছাড়া আপলোড দিয়েছে! আবার ট্যাগ ও করেছে আমাকে! উফ! এখন তো সবাই আমার ছবিগুলো যে ভয়াবহ মাত্রায় এডিটেড বুঝে যাবে!”
উপরের ঐ মেয়েটা কি আপনি? সবসময় ক্যামেরারেডি থাকা কিন্তু একটু কঠিন। আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আপনি নিজে নিজের ছবি তোলায় আগ্রহী না হলেও আপনার ফ্রেন্ডরা, কলিগরা আপনার সাথে ছবি তুলতেই পারে। ইউনিভার্সিটিতে প্রেজেন্টেশন হোক, কিংবা অফিসের কলিগের বার্থডে পার্টি, ছবি কিন্তু তোলা হয় ই। আর সবসময় ক্যামেরা রেডি থাকতে কিন্তু ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশন বা কন্ট্যুরিং এর কথা বলছি না এখানে। প্রয়োজন আপনার স্কিনকেয়ার, হেয়ারকেয়ার, গ্রুমিং, কিছুটা মেকআপ আর আত্মবিশ্বাস!
মেয়েদের অনেকেরই ফেসিয়াল হেয়ারের সমস্যা আছে। আর মুখের এই অবাঞ্ছিত লোম, বিশেষ করে আপার লিপ আর আইব্রো যদি ট্রিমড না থাকে তাহলে কিন্তু আপনার অ্যাপিয়ারেন্স অনেকটাই নির্জীব দেখাবে, প্রাণবন্ত সুন্দর দেখাবে না। ভ্রু সুন্দর না থাকলে কাজল দিলেও যে চোখজোড়া খুব বেশি আকর্ষণীয় দেখায় না সেটা তো আমরা সবাই জানি। আর পছন্দের লিপস্টিকটা লাগিয়ে ঠোঁটের উপর ফেইসপাউডার বুলাতে গিয়ে যদি দেখেন ঠোঁটের উপরের বেয়াড়া ছোট্ট ছোট্ট লোমগুলো উঁকি মারছে, তাহলে তো আরো মনটা খারাপ হয়ে যায়।
পার্লারে গিয়ে ভ্রু প্লাক আর ওয়্যাক্সিং থ্রেডিং তো মাসে দুবার করানোই হয়। কিন্তু ওয়্যাক্সিং এ অনেকেরই আপত্তি থাকে, ব্যথা পান অনেকে, আবার অনেকের স্কিন সেনসিটিভ, র্যাশের সমস্যা থাকে। দেখা গেলো যে আগামীকাল বান্ধবীর গায়ে হলুদ আর আপনি আজকে ফাইনালি পার্লারে যাওয়ার সময় পেয়ে পার্লারে গিয়ে ভ্রু প্লাক আর ফুল ফেইস থ্রেডিং করালেন, সুতার টানে এক আধ জায়গায় কেটে গেলো, তাহলে তো আরো দুর্গতি। আর এক সপ্তাহ আগে ভ্রু প্লাক আর আপার লিপস থ্রেডিং করে আসার পর যদি পরের সপ্তাহে হঠাৎ কোন ইভেন্ট থাকে তখন কিন্তু ঝটপট পার্লারে যাওয়ার সময় ও না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ক্যামেরা রেডি হবার উপায় কি?
[picture]
তিনটা উপায় আছে – চিমটা ব্যবহার করা, বাসায় তৈরি ওয়্যাক্স ব্যবহার করা, এবং ট্রিমার ইউজ করা।
চিমটা দিয়ে ভ্রু এর আশপাশের ছোট ছোট লোম তলা সম্ভব হলেও বেশ সময়সাপেক্ষ, এবং নিয়মিত করতে থাকলেই হাত অভ্যস্ত হয়, নাহলে ভ্রু এর শেইপ নষ্ট হবার সম্ভাবনা বেশি। আর আপার লিপের লোম তোলা যায় না।
বাসায় তৈরি ওয়্যাক্স বানাতে প্রয়োজন চিনি, মধু আর লেবুর রস, একসাথে মিডিয়াম কনসিসটেন্সিতে ফুটিয়ে নিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা হলে অল্প করে ওয়্যাক্স লাগিয়ে সুতি কাপড় বসিয়ে একটানে লোমের গ্রোথ যেদিকে তার অপরপাশ থেকে একটানে তুলে ফেলতে হবে। তবে এই পদ্ধতি ভ্রু এর জন্য ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ নিজে নিজে করতে গেলে শেইপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর ওয়্যাক্সিং এর পর অনেকেরই স্কিনে র্যাশ বের হয়। তাছাড়া অবশ্যই ফেসিয়াল হেয়ার তোলার জন্য ওয়্যাক্স করলে তাপমাত্রা ভালো করে দেখে নিয়ে তবেই ব্যবহার করা উচিৎ। তবে হ্যা, ওয়্যাক্সিং শুধু বাসায় বসেই সম্ভব, আপনি বাইরে থাকা অবস্থায় হঠাত লোম ক্লিন করার জন্য এটা কনভেনিয়েন্ট অপশন না। আর ব্যথা পাওয়া যায় বেশ, কাজেই যারা ব্যথা সহ্য করতে পারেন না, তাদের জন্য না এইটা।
শেষ অপশন হলো ট্রিমার, যা পশ্চিমা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। ট্রিমার আপনি সহজেই আপনার হ্যান্ডব্যাগে ক্যারি করতে পারবেন এবং যখন তখন এটা ব্যবহার করে ফেসিয়াল হেয়ার রিমুভ করতে পারবেন। ট্রিমার প্রায় সবাই ব্যবহার করতে পারেন। শুধু আপার লিপ ই না, আইব্রোর জন্য ও এটা ব্যবহার করা বেশ সহজ। শুধু প্রয়োজন ছোট্ট একটা আয়না আর একটা ট্রিমার। ব্যস আপনি ক্যামেরারেডি!
ফেসিয়াল হেয়ার না থাকলে কিন্তু মেকআপ ও মুখে সহজে খুব সুন্দর করে বসে, কেকি লাগে না, ভেসে ভেসে থাকে না। হুদা বিউটির হুদা কাত্তান ও কিন্তু ফ্ললেস মেকআপের জন্য ফেসিয়াল হেয়ার ক্লিন করার কথা বলেছেন। লোম না থাকলে মেকআপ সহজে ব্লেন্ড হয়, আর ফ্ললেস দেখায়। যেকোন ইনস্ট্যান্ট প্রোগ্রামের আগে ক্যামেরারেডি থাকতে ব্যাগে সবসময় একটা বিবি ক্রিম, একটা কম্প্যাক্ট পাউডার, দুটো লিপস্টিক (একটা পিংক বা ন্যুড শেইডের, একটা হট পিংক বা রেড শেইডের), একটা কাজল, একটা আয়না, কিছু মেকআপ ওয়াইপস আর একটা ট্রিমার রাখুন।
আর সেই সাথে নিয়মিত ২-৩ লিটার পানি পান, দিনে কমপক্ষে আধঘণ্টা হাঁটা, ব্যালেন্সড নিউট্রিয়েন্ট রিচ ডায়েট, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস আর ৮ ঘণ্টার ঘুম কিন্তু চাই। আপনাকে সব ছবিতে, এবং বাস্তবেও কোন রকম ফটো এডিটিং অ্যাপ ব্যবহার না করেও সবসময় ক্যামেরারেডি আর গর্জিয়াস দেখাবে!
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি