কিডনী মানুষের শরীরের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। মানবদেহের রক্ত পরিষ্কার করা, শরীরের বর্জ্য নিঃসরণ ও অন্যান্য কাজে কিডনী প্রয়োজনীয়। যেহেতু আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল তাই কিডনী ভালো না থাকলে অন্য অঙ্গ গুলো খুব একটা ভালো থাকবে না তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শরীরের স্বার্থে, বেঁচে থাকার স্বার্থে কিডনীর যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি আপনার কিডনীকে সুস্থ ও সচল রাখতে পারেন।
০১. প্রয়োজন সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবারঃ
এটা সবাইই জানে যে ফল এবং সবজি মানুষের শরীরের জন্য অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল এর যোগান দেয়। তাই প্রতিদিন খাবারে সবজি এবং খাবারের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল আপনার কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করবে। ফল এবং সবজিতে অত্যন্ত কম পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, যা আপনার কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাবে। সেই সাথে প্রতিদিন খাবারের সাথে আলাদা করে লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন অথবা চেষ্টা করুন একেবারে বন্ধ করে দিতে।
ফাস্ট ফুড বা ইন্সট্যান্ট ক্যাটাগরীর ফুডগুলো কিডনীর জন্য ক্ষতিকর। কারণ এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণ লবণ থাকে। সেই সাথে স্যাচুরেটেড অয়েল ও অন্যান্য কেমিক্যাল থাকে যা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই যত কম সম্ভব ফাস্ট ফুড গ্রহণের চেষ্টা করুন। তাজা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, না পারলে ফ্রোজেন প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করুন। তেলযুক্ত মাছ, অলিভ অয়েল, শুকনো ফল আমাদের শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর আমিষ উপাদানের যোগান দেয়।
এর পাশাপাশি খাবার এবং কাজের ব্যালেন্স ঠিক রাখুন। যে পরিমাণ আমিষ আপনি গ্রহণ করছেন, সেই পরিমাণ কাজের মাধ্যমে আমিষ কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া চালু রাখুন। না হলে আমিষ এবং চর্বি শরীরে জমে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, বয়স হিসেবে সঠিক ওজন আপনার কিডনীর সুস্থতা নিশ্চিত করবে। কিডনী সুস্থ না থাকলে আপনাকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ এর মত ঝামেলায় ভুগতে হতে পারে।
০২. নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ
নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই ব্যায়াম অনেক জরুরী। সুতরাং প্রতিদিন এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করুন। যত বেশি পারেন, হাঁটুন। কর্মক্ষেত্রে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। কারণ পা সচল রাখা অত্যন্ত কার্যকরী একটি এক্সারসাইজ। আপনাকে এর জন্য আলাদা করে সময় দিতে হয় না। প্রতিদিনের এক্সারসাইজ আপনার কিডনীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, কিডনীকে সচল রাখবে।
সাইকেল চালানো একটি বড় ও কার্যকরী এক্সারসাইজ। তাই বাস রিকশার পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার পায়ের ও পেটের পেশী সচল থাকবে। সেই সাথে সাইক্লিং এর কারণে পানি খাওয়ার চাহিদা বাড়বে, যা আপনার কিডনীকে সচল রাখতে সাহায্য করবে।
শুধু তাই নয়, নিয়মিত খেলাধুলাও কিডনীর জন্য উপকারী। কারণ শুধু মাত্র অনেকক্ষণ ধরে টানা দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা আপনার কিডনীর ক্ষতি করতে পারে। কারণ কিছু না করলে আপনার শরীরের পানির প্রয়োজন হবে কম, আপনি পানি পান না করলে কিডনীও কার্যক্ষমতা হারাবে।
০৩. নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল উপাদান গ্রহণ করুনঃ
একজন সুস্থ্ মানুষের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ৪ লিটার পানি গ্রহণ অপরিহার্য। তাই প্রতিদিন অন্তত ৪ লিটার, পারলে এর থেকে বেশি পানি গ্রহণের চেষ্টা করুন। একবারেই পানি গ্রহণ করতে হবে এমন কথা নেই। যেখানেই যান, সাথে একটি পানির বোতল রাখার চেষ্টা করুন। কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে পান করুন। এতে শরীর সতেজ থাকবে, কিডনী ও সচল থাকবে।
চিনিযুক্ত পানীয় আপনার ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই আলাদা ফ্লেভার ও অত্যধিক চিনিযুক্ত পানীয় এড়ানোর চেষ্টা করুন। এর পরিবর্তে ফলের রস গ্রহণ করলে বেশ উপকার হবে। আম, কমলা, লেবু, আনারস, আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, কলা ইত্যাদি ফলের রস শরীরে পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়ার পাশাপাশি আপনার কিডনীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সাথে প্রতিদিন এক কাপ গ্রীন টি গ্রহণ করলে আপনার কিডনী থাকবে সুস্থ ও কর্মক্ষম!
কিডনী মানুষের এমন একটি যা ছাড়া পুরো শরীর সম্পূর্ণ অচল। তাই বাঁচার জন্য জরুরী এই অঙ্গটির নিয়মিত যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেনঃ ফরহাদ রাকিব
ছবিঃ shutterstock