সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। ঘুম ঘুম চোখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলেন আপনার নিঃশ্বাসটা কেমন যেন। ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলেন আপনার মুখ থেকে দূর্গন্ধ আসছে। এই জিনিসটা যেমন হতাশাজনক, তেমন অস্বস্তিকর। মেডিক্যাল টার্মে এই সমস্যাকে বলা হয় Halitosis. এই দূর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস এর কারণ হতে পারে দাঁতের সঠিক যত্নের অভাব, যথাযথ ঘুমের অভ্যাস কিংবা বিশেষ কিছু খাবার। এছাড়াও শুকনো মুখ এবং রাতে মুখ খোলা রেখে ঘুমানোও কারণ হতে পারে। তাই এই দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস দূর করতে সবাই চায়। আজকের লেখা তাদের জন্য যারা মুখে দূর্গন্ধ নিয়ে বিব্রত । মুখ থেকে কিভাবে দূর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস দূর করা যায় তার কিছু টিপস সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মুখে দূর্গন্ধ নিয়ে বিব্রত, সমাধান খুঁজছেন?
১. মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যকর যত্ন
দাঁতের যত্ন নেয়া জরুরী সবার আগে। যেহেতু খাবারের চর্বণ, এবং অন্যান্য কাজে দাঁত সবার আগে ব্যবহৃত হয় তাই দাঁতেই খাবার বেশিরভাগ অংশ লেগে থাকে। যদি সঠিক ভাবে দাঁত পরিষ্কার না হয় তাহলে দাঁতে লেগে থাকা এই খাদ্যকণা সময়ের সাথে পঁচে মুখে দূর্গন্ধের সৃষ্টি করে। তাই দাঁতের যত্নে যা করতে পারেন –
- প্রতিদিন ঘুমারতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করুন। সেই সাথে পরিষ্কার ফ্লসিং সুতো দিয়ে দাঁতে ফ্লস করুন। এতে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- সম্ভব হলে রেগুলার ব্রাশ এর পরিবর্তে ইলেক্ট্রিক ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ইলেক্ট্রিক ব্রাশে মাড়ির সব জায়গায় সমান ভাবে টুথপেস্ট পৌঁছানো সম্ভব যা খাদ্যকণার পচনকারী ব্যাকটেরিয়া কে মেরে ফেলতে সহায়তা করে।
- দিনে অন্তত একবার জিহবা পরিষ্কার করুন। কারণ জিহবায় অনেক সময় ব্যকটেরিয়া জমে থাকে যা দূর্গন্ধ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ভালো মানের মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ ও জিহবা দিনে অন্তত একবার পরিষ্কার করলেই হবে।
- এছাড়াও দিনে একবার মাউথ ওয়াশ মেশানো পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন। এতে মুখে ও গলার ভেতরে থাকা দূর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মরে গিয়ে আপনাকে দূর্গন্ধ থেকে রেহাই দেবে।
- এছাড়াও বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্ট এর পরামর্শ নিন।
২. ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করুন
মুখের গন্ধ দূর করার জন্য ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন জরুরী। এর যারা ঘুমের মাঝে নাক ডাকেন বা মুখ হা করে ঘুমান তাদের মাঝে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের প্রভাব দেখা যায় অনেক বেশি। আপনার মুখে যে স্যালাইভা থাকে তা ক্লিনার হিসেবে মুখের ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি নাক ডাকেন বা মুখ খোলা রেখে ঘুমান তাহলে মুখের এই স্যালাইভা শুকিয়ে গিয়ে মুখকে শুষ্ক করে তোলে, যার ফলে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হতে পারে না। এর ফলে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। মুখ খোলা রেখে ঘুমানো বা নাক ডাকা বন্ধে আপনি যা করতে পারেন –
- যদি নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা বোধ করেন তাহলে নাক এর ড্রপ ব্যবহার করে নাসিকা ছিদ্র পরিষ্কার রাখুন।
- সোজা হয়ে বসুন, জিহবা মুখের ভেতর সমতল রাখুন। তারপর শরীরের উপরিভাগ শিথিল করে দিন। এবার মুখ বন্ধ করুন এবং পেটের নিচের অংশে হাত দিয়ে হালকা চাপ দিন। এবার নাক দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিন, দুই তিন সেকেন্ড ধরে রেখে ছাড়ুন। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন, তারপর আবার নিঃশ্বাস নিন। এভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত একগ্লাস পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। পানি বেশি করে খেলে মুখের মধ্যে জমে থাকা খাদ্যকণা পানির সাথে পেটে চলে যাবে। এছাড়াও চাইলে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন, যা মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
- ফার্মেসিতে মুখের স্যালাইভা বৃদ্ধির জন্য কিছু চিউয়িং গাম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
কিছু কিছু খাবার আপনার মুখে দূর্গন্ধ তৈরী করতে পারে। তাই সেগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। আর খাবারে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করুন। যেমন –
- সুষম খাবার গ্রহণ করুন। ফলমূল বেশি করে খাবেন। বিশেষ করে, গাজর, আপেল ইত্যাদি আপনার মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
- অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না, বা স্বাদ বা গন্ধবিহীন খাবার কম গ্রহণ করুন। স্বাদবিহীন খাবারে স্যালাইভা ঠিক মত কাজ করতে পারে না।
- খুব বেশি মশলাদার, ঝাল এবং পেঁয়াজযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার গ্রহণ করবেন না। কারণ সুগারে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যা মুখের দূর্গন্ধের জন্য দায়ী। বেভারেজ জাতীয় কার্বনেটেড ড্রিংক কম খাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ এতে প্রচুর সুগার থাকে। আর সুগার মুখের দূর্গন্ধের জন্য দায়ী হতে পারে।
- কফি এবং এলকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণের অভ্যাস থাকলে যত সম্ভব কমিয়ে দিন। আর যদি গ্রহণ করতেই হয় তাহলে গ্রহণের পর নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করুন।
- প্রতিবেলা খাবারের পর একটি মিন্ট ফ্রেশ জাতীয় চিউয়িং গাম চিবাতে পারেন। এতে মিন্ট ও মেনথল এর ফ্রেশনেস মুখের দূর্গন্ধ দূর করে দেবে।
এই টিপসগুলোর পরও যদি মুখে দূর্গন্ধ নিয়ে বিব্রত থাকেন, যদি মুখের দূর্গন্ধ না যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। এছাড়া অনেকের মানসিক সমস্যা থাকতে পারে যাকে বলা হয় হ্যালিটোফোবিয়া (Halitophobia), যেখানে রোগীর মনে হয় তার মুখ থেকে সবসময় দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। রোগী সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় এবং মানসিক হতাশায় ভোগে। আপনি এই রোগে ভুগছেন কিনা ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হতে পারেন।
ছবিঃ সংগৃহীত – shutterstock