কোনো একটা কাজ আজ করবো, কাল করবো বলে ফেলে রেখেছেন? সেই কাজ কি আর করাই হয়ে উঠছে না? কথায় আছে না, “Now or Never” অর্থাৎ ‘হয় এখন না হয় কখনোই না’। সেটা হতে পারে- বিশ্ববিদ্যালয়ের টার্ম পেপার রেডি বা অফিসের কোনো প্রেজেন্টেশনের কাজ। সবই পড়ে থাকে ডেডলাইনের আগের রাতে করার জন্য। এভাবেই দিনের পর দিন অনেক কাজ জমে যাচ্ছে। এই কর্মবিমুখতার নামই ‘অলসতা’। কাজ জমানোর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমাদের জানা চাই অলসতা দূর করার উপায়। চলুন তবে দেখে নেই কিভাবে দূর করতে পারি অলসতা?
অলসতা দূর করার ৩টি উপায়
অলসতা মানে নিস্ক্রিয় থাকা, কাজ থেকে দূরে পালিয়ে বেড়ানো। এভাবে কাজ ফেলে রেখে দিলে পরবর্তীতে অল্প সময়ে অনেক কাজ একসাথে করতে হয়। এতে কোনো কাজেরই গুণগতমান ভালো হয় না। আবার অনেক কাজই শেষ পর্যন্ত করা হয়ে উঠে না। এই অলসতা থেকে মুক্তির জন্য অনেকেই অনেক চেস্টা করে থাকেন, কিন্তু প্রায় সময়ই সে চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয় না। চেস্টা সফল না হওয়ার পিছনের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, আমরা অলসতা কাটানোর জন্য অনেক রকম পরিকল্পনা করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামি। এভাবে প্রথম অবস্থায় বেশি নিয়ম-কানুন মানা সম্ভব হয় না, ফলে অলসতা আরো বেড়ে যায়। আজকে অলসতা দূর করার ৩টি কার্যকরী উপায় নিয়ে হাজির হলাম। আশা করছি এই লেখা পড়ার পরে আপনার অলসতা পালাবেই।
১) জীবনের সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নির্ধারণ
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর সব কিছুরই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। কোনো কিছুই লক্ষ্যহীনভাবে চলতে পারে না। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হয়ে যদি আমাদের লক্ষ্য ঠিক করা না থাকে তবে কীভাবে চলে বলেন? মানুষ যদি লক্ষ্যহীনভাবে চলে তবে একদিন বা দুইদিন বা বড়জোর কিছুদিন পরেই তার কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকবে না। সে হয়ে যাবে সমাজ-সংসারের চোখে অলস একজন মানুষ। সেটা যে কি পরিমাণ অপমানের, তা শুধু সেই অলসতায় আচ্ছন্ন মানুষই অনুভব করতে পারবে। এই অলসতা থেকে বাঁচতে অলসতা দূর করার প্রথম উপায় হলো, নিজের জীবনের সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ঠিক করে নিন। আপনি নিজেকে ঠিক কোন জায়গায় দেখতে চান, বা কেমন দেখতে চান সেটা ঠিক করে নেয়া প্রথমেই খুব জরুরি।
জীবন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবনাটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন তার একটি খসড়া করে নিন। এরপর জরুরি হলো, আপনার কোন ধরনের দক্ষতা হলে জীবনের লক্ষ্যটা অর্জন করা সহজ হবে সেটা খুঁজে বের করা। বা এমনও হতে পারে যে, আপনার পছন্দের কোনো কাজকেই দক্ষতাতে পরিণত করে নেয়া। আপনি যদি এখন ছাত্রজীবনে থাকেন তবে পড়াশুনার পাশাপাশি আপনার পছন্দমতো কোনো বিষয়ের উপর, যেমনঃ গ্রাফিক্স, মেকানিক্যাল বা অন্য যেকোনো বিষয়ে একটা কোর্স করে নিতে পারবেন অথবা ইউটিউব বা নেট ঘেঁটে নিজেই একটু বিষয়টা নিয়ে পড়াশুনা করে নিন। এই ছাত্রজীবনই হলো শেখার জন্য আদর্শ সময়। তবে কারো যদি ছাত্রজীবন পার হয়ে যায়, তবে বসে বসে আফসোস না করে কাজে নেমে পড়ুন। মনে রাখবেন, ‘শেখার কোন শেষ নেই, বয়স নেই’!
২) কাজগুলোকে ভাগ করে নিন
অলসতা কাটানোর জন্য অনেক রকম পরিকল্পনা করে নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করবেন বলে ভেবে রেখেছেন, কিন্তু সেইভাবে কাজ করতে পারছেন না। এর কারণ হতে পারে, একসাথে অনেক কাজ করতে হবে ভেবে আপনার কোনো কাজেই মন বসছে না। মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি অলসতায় আচ্ছন্ন সে কিন্তু প্রথমেই বেশি কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারবে না। সেইজন্য যা করতে হবে তা হলো, আপনার জীবনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিজের কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। বড় কোনো কিছু অর্জন করতে গেলে ছোট পদক্ষেপ বা ছোট লক্ষ্য অর্জন করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এই সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে ভালোবাসা, নিজের কাজকে ভালোবাসা, নিজের অলসতা দূর করার জন্য নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করা।
কাজ বা পড়াশুনার জায়গা বা আশেপাশের পরিবেশকে করে তুলুন আনন্দময়। এতে কাজ করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। কাজের প্রতি অলসতা কাটাতে আরো একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ করা অতীব জরুরি তা হলো- যেসব কাজে আপনার মন অন্য দিকে ধাবিত হবে সেসব কাজ থেকে দূরে থাকা। বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, একসাথে অনেকগুলো কাজ বা কয়েকটি ট্যাব ওপেন করে কাজ করবেন না, এতে কোনোটার প্রতিই পূর্ণ মনযোগ ধরে রাখা যায় না। আর কাজের সময় ফেসবুক থেকে তো দূরে থাকাই শ্রেয়। বেশিরভাগ মানুষ প্রথম অবস্থায় কাজে মন দিতে পারে না। কারণ, সে চায় পুরোপুরিভাবে সফলতা। এটা আসলে কোনোভাবেই বাস্তবতার সাথে যায় না। প্রথম কাজেই একদম নিখুঁত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
৩) অনুপ্রেরণা গ্রহণ
অলসতা কাটানোর আরেকটি শক্তিশালী উপায় হলো- সফল ব্যক্তিদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে। আপনি একটু ভেবে দেখুনতো, মানুষ জীবনে অলসতা করে কি কখনো সফলতার মুখ দেখেছে? পৃথিবীর সকল মানুষ তার জীবনে কঠোর পরিশ্রম করেই এরপর সফল ব্যক্তিদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। তাই অলসতা দূর করার জন্য সফল ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী পড়তে হবে, জানতে হবে। তাদের অনুসরণ করতে হবে। শুধু সফল ব্যক্তিই নয় বরং এই অনুপ্রেরণা আপনার আশেপাশের মানুষ বা আপনারই প্রিয়জনের কাছ থেকেও আসতে পারে।
অলসতা করে শুধু কাজের ব্যাঘাত ঘটে তা না, শরীর ও মনেও অনেক বিরূপ প্রভাব পড়ে। যার ফলে, মানুষ বিষণ্ণবোধ করে। তাছাড়া অলস মানুষ সমাজ-সংসারের কাছে অনেক বিদ্রুপের শিকার হয়। এইসব থেকে বাঁচতে হলে নিজের ভেতরকার অলসতা কাটিয়ে উঠুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আলসেমি করে সময় কাটনোর পরে আফসোস করার চেয়ে সময় থাকতে এই ভুল থেকে শিক্ষা নিন। হয়ে উঠুন পরিশ্রমী এক সফল ব্যক্তি।
শুভকামনা সকলের প্রতি!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ