হাটি হাটি করে শীত কিন্তু চলেই এসেছে। চারদিকে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবের মধ্যে স্কিন যেমন টানতে শুরু করেছে, ঠোঁটের অবস্থাও কিন্তু তেমনি খারাপ। ড্রাই হওয়া শুরু করছে এবং ফেঁটে যাচ্ছে। আমাদের ঠোঁট অনেক সেনসিটিভ এবং ঠোঁটের স্কিন অনেক পাতলা হয়। যার ফলে এটি দ্রুত ময়েশ্চার হারায়। এই সময় ঠোঁটের সুরক্ষায় লিপ বাম যা ঠোঁটকে সফট এবং হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে । লিপ বাম আমাদের ঠোঁটকে শীতের প্রকোপ থেকে প্রোটেক্ট করে এবং ঠোঁটকে সফট বানিয়ে দেয়। ঠোঁটের সুরক্ষার জন্য আমরা বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লিপ বামের দিকেই প্রথমে তাকাই। তবে, এবার যদি লিপ বামটা ঘরে বসে নিজেই বানিয়ে ফেলে ব্যবহার করা যায় সেটা কেমন হয়? চলুন তবে দেখে নেই ঠোঁটের সুরক্ষায় লিপ বাম কিভাবে বানাতে হয়?
বাড়িতেই ঠোঁটের সুরক্ষায় লিপ বাম যেভাবে বানাবেন
বাসায় লিপবাম বানাতে ব্যবহার করা হবে সব ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্টস। যার ফলে ঠোঁটের ক্ষতি হওয়ারতো চান্সই নেই। উলটো বেশ কিছু টাকাও কিন্তু বেঁচে যাবে। ঘরে তৈরি লিপ বামগুলোও কিন্তু সুপার হাইড্রেটিং এবং ময়শ্চারাইজিং হবে আর নিজের মনমতো ফ্লেভারও আপনি যোগ করতে পারবেন। তো চলুন আর কথা না বাড়াই। জেনে নেই কিভাবে, এই শীতে ঠোঁটের সুরক্ষায় নিজেই বানিয়ে নিবেন ৩ ধরনের লিপ বাম!
লিপ স্ক্রাব
লিপ বাম লাগানোর আগে ঠোঁট স্ক্রাব করে নেয়টা জরুরি। এতে করে ঠোঁটের ডেড সেলস দূর হবে এবং ঠোঁট স্মুদ হবে। তাই বোনাস হিসেবে থাকছে একটা লিপ স্ক্রাবের রেসিপি। ঘরেই এটা যে কোনো সময় বানিয়ে নিতে পারবেন।
উপকরণ –
১. ব্রাউন সুগার বা সী সল্ট
২. গ্লিসারিন
৩. রোজ ওয়াটার
যেভাবে লিপ স্ক্রাবটি তৈরি এবং ব্যবহার করবেন-
১) প্রথমে ছোট একটা বাটিতে ১ চা চামচ ব্রাউন সুগার বা সী সল্ট নিয়ে নিন। এর মধ্যে ২ ফোঁটা গ্লিসারিন এবং ২ ফোঁটা রোজ ওয়াটার নিয়ে মিক্স করে নিন।
২) লিপ স্ক্রাবটি নিয়ে জেন্টলি ঠোঁটে ১-২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ওয়ার্ম ওয়াটার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ঠোঁট মুছে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন এটি ব্যবহার করবেন।
৩ ধরনের লিপ বাম
১. হানি লিপ বাম:
উপকরণ
১. মধু:
মধু ড্রাই লিপস-এর জন্য বেশ কার্যকরী। মধু শুষ্ক ঠোটকে বেবী সফট বানাতে হেল্প করে। এতে অনেক হিলিং প্রোপার্টিজ রয়েছে যা ঠোঁটে এক্সট্রা ময়েশ্চার যোগ করে। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, ঠোঁটের ইউভি ড্যামেজ রিপেয়ার করে।
২. কোকোনাট অয়েল:
কোকোনাট অয়েল ফাটা ঠোঁটের জন্য খুবই ভালো। এতে রয়েছে ময়শ্চারাইজিং উপাদান, যা ঠোঁটকে সফট বানিয়ে দেয়।
৩. ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল:
ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েলে রয়েছে এক্সট্রা হিলিং পাওয়ার এবং এটা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে।
৪. বি- ওয়াক্স বা মৌমাছির মোম এবং
৫. একটি পরিষ্কার খালি লিপ বামের কৌটা।
হানি লিপ বাম প্রস্তুতি
হানি লিপবাম তৈরি করার জন্য আমাদের ডাবল বয়লিং প্রোসেস ফলো করতে হবে। এজন্য, একটি হিটপ্রুফ কাঁচের বাটিতে ২ চা চামচ বি- ওয়াক্স, ১চা চামচ মধু এবং ১চা চামচ কোকোনাট অয়েল নিন। এরপর চুলায় একটা পাতিলে অল্প পানি নিয়ে তা ফুটিয়ে নিন। এবার ফুটন্ত পানির পাতিলের উপরে কাঁচের বাটিটা রাখুন। এরপর দেখবেন বি- ওয়াক্স গলে গিয়েছে। একটা স্প্যাচুলার সাহায্যে সবগুলো উপকরণ মিক্স করে নিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এরপর এতে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করুন। একটি পরিষ্কার খালি লিপ বামের কৌটায় মিশ্রণটি ঢেলে নিন এবং ৬-৮ ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রাখুন। ব্যস, আপনার হানি লিপ বাম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
২. পেপারমিন্ট লিপ বাম
উপকরণ
১. পেট্রোলিয়াম জেলি
পেট্রোলিয়াম জেলি ড্রাই এবং ফাটা ঠোঁটের জন্য দারুণ কাজ করে। এটা ঠোঁটের স্কিনের উপরে একটা প্রলেপ তৈরি করে এবং স্কিন থেকে ময়েশ্চার বা ওয়াটার লুজ করতে দেয় না।
২. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা ঠোঁটে ময়শ্চার এবং হাইড্রেশন যোগায় এবং ঠোঁটকে ড্রাই ফিল হতে দেয় না। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টিস ঠোঁটে ইরিটেশন হওয়া রোধ করে। এর এন্টি অক্সিডেন্টস ঠোঁটকে ড্যামেজ এবং রিংকেলস বা বলিরেখা হওয়া থেকে বাঁচায়।
৩. সুইট আমন্ড অয়েল
সুইট আমন্ড অয়েলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই। যা ঠোঁটকে ইউ ভি ড্যামেজ থেকে বাঁচায়। এতে থাকা নারিশিং প্রোপার্টিজ ঠোঁটের ময়েশ্চার লক করে ঠোঁটকে সফট বানায়।
৪. পেপারমিন্ট অয়েল:
পেপারমিন্ট অয়েলে রয়েছে সুদিং অ্যাফেক্ট। এটি ফাটা ঠোঁটকে হিল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ঠোঁটে কুলিং এবং রিফ্রেশিং একটা ভাব নিয়ে আসে।
৫. একটি পরিষ্কার খালি লিপবামের কৌটা।
পেপারমিন্ট লিপ বাম প্রস্তুতি
ডাবল বয়লিং প্রোসেসে ২ টেবিল চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে সেটা গলিয়ে নিন। এর সাথে হাফ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল, ২ ফোঁটা সুইট আমন্ড অয়েল (সুইট আমন্ড অয়েল না থাকলে নরমাল আমন্ড অয়েলও ব্যবহার করা যাবে), ১ ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার একটা খালি লিপ বামের কৌটায় মিশ্রণটি ঢেলে নিন। ৬-৮ ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিলেই আপনার পেপারমিন্ট লিপ বাম রেডি।
৩. আর্গান অয়েল লিপ বাম:
উপকরণ
১. কোকোনাট অয়েল:
কোকোনাট অয়েলের বেনিফিটস সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে।
২. অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েল ঠোঁটে একটা বেরিয়ার ক্রিয়েট করে ঠোটকে ড্রাই হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি ঠোঁটে হাইড্রেশন দেয়, ঠোঁট ফেটে যাওয়া রোধ করে ঠোঁটকে সফট রাখে।
৩. আর্গান অয়েল:
আর্গান অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই, এ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং ফ্যাটি এসিডস। যা আমাদের ঠোঁটকে প্রোটেকশন এবং নারিশমেন্ট দেয়। এছাড়াও এটা লিপ কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
৪. পছন্দের কালারের লিপস্টিক
৫. বি- ওয়াক্স এবং
৬. একটি পরিষ্কার খালি লিপ বামের কৌটা।
আর্গান অয়েল লিপ বাম প্রস্তুতি
একটি বাটি নিয়ে ডাবল বয়লারে ২ চা চামচ বি- ওয়াক্স গলিয়ে নিন। এর সাথে ১ চা চামচ কোকোনাট অয়েল, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল এবং ২ চা চামচ আর্গান অয়েল এবং আপনার পছন্দের কালারের একটি লিপস্টিক নিয়ে ১ সেন্টিমিটার পরিমানে মিক্স করুন। লিপস্টিকটা অপশনাল। না দিলেও চলবে। তবে দিলে, লিপ বামটি ব্যবহারের পর সুন্দর একটা কালার আসে ঠোঁটে। সব কিছু নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন এবং গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর, লিপ বামের কৌটায় ঢেলে ৬-৭ ঘন্টা জমে যাওয়ার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। ব্যস! হয়ে গেল আর্গান ওয়েল লিপ বাম!
এই তো জেনে নিলেন, কিভাবে এই শীতে ঠোঁটের সুরক্ষায় ঘরে বসে নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন ৩ ধরনের লিপ বাম। এর মধ্যে আপনার পছন্দসই যে কোনো একটা লিপ বাম বানিয়ে নিলেই হলো। আর যদি হোমমেড লিপ বাম না বানাতে চান, তবে আপনার কোমল ঠোঁটের যত্নে ভালো মানের লিপ কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ঠোঁটের যত্নে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজের দু’টি ফিজিক্যাল শপ থেকে যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও আরেকটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। এছাড়া অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ