নারিকেল তেল খুব পরিচিত একটি তেল। এটি দু’ভাবে ব্যবহার করা হয়। যেটি রিফাইন্ড হয়ে আসে, সেটি বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। আর যেটি আনরিফাইন্ড বা ভার্জিন তেল হিসেবে থাকে সেটি খাবার তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বাহ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয় নারিকেল তেল মানে যেটি রিফাইন্ড হয়ে আসে। তবে বাহ্যিকভাবে আনরিফাইন্ড বা ভার্জিন তেলের ব্যবহার ইদানিং বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। চলুন আজকে জেনে নিই এই নারিকেল তেলের বেশ কিছু গুণ।
(১) ড্যামেজ চুল রিপেয়ার করতে এর জুড়ি নেই। এটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
(২) ত্বকে এটি বেসিক লোশন হিসেবে কাজ করে।
(৩) চোখের মেক-আপ তুলতে এটি ব্যবহার করা যায়। একটি তুলোয় তেল নিয়ে চোখের মেক-আপ ঘষে তোলা যায় ।
(৪) ত্বকের যেসব জায়গায় দাগ, সেসব জায়গায় নারিকেল তেল নিয়মিত ঘষলে দাগটি হালকা হয়ে যায়।
(৫) প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপকরণ:
– ৬ কাপ নারিকেল তেল
– ১/৪ কাপ বেকিং সোডা
– ১/৪ কাপ অ্যারারুট
[picture]
পদ্ধতি:
বেকিং সোডা ও অ্যারারুট মিশিয়ে নিন একটি মিডিয়াম পাত্রে। এর মাঝে নারিকেল তেল একটি চামচ দিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর একটি কাঁচের জারে বা পুরোনো ডিওডোরেন্ট কন্টেইনারে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।
(৬) গর্ভাবস্থায় পেটের চামড়া ফেটে গিয়ে দাগ হয়। এসময় নিয়মিত নারিকেল তেল পেটে মালিশ করলে এই দাগগুলো হালকা হয়ে যায়।
(৭) এটির ন্যাচারাল সান প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা আছে।এর SPF 4 , তাই সানস্ক্রিন হিসেবেও কাজ করে।
(৮) যৌনাঙ্গে ঈস্ট বা ঈস্ট ইনফেকশন হলে ওই জায়গায় বাহ্যিকভাবে নারিকেল তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায়। নারিকেল তেল ঈস্টকে ধ্বংস করে।
(৯) ম্যাসেজ তেল হিসেবে নারিকেল তেল খুবই জনপ্রিয়।
(১০) চুলের ফ্রিজি ভাব কমায় নারিকেল তেল।
(১১) রাত্রিকালীন ফেশিয়াল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
(১২) গোসলের আগে সমপরিমাণ নারিকেল তেল ও চিনি মিশিয়ে শরীরে ঘষা যায়। এটি একটি স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে শীতকালে এটি খুবই উপকার করে ।
(১৩) কোন স্থান হালকা পুড়ে গেলে তাতে অনেকক্ষণ পানি দিয়ে ধুয়ে নারিকেল তেল লাগালে জ্বালা পোড়া কম হয়।
(১৪) সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যোনিতে হালকা ছিলে গেলে, সেখানে নারিকেল তেল বাইরের দিকে লাগালে তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
(১৫) পায়ে ফাংগাস ঘটিত কোন ঘাঁ হলে, সেখানে নারিকেল তেল দিলে তা ফাংগাসের মোকাবেলা করে।
(১৬) স্কিনের অসুখ যেমন psoriasis or eczema-তে ব্যবহার করা যায়।
(১৭) প্রাকৃতিকভাবে উকুন দূর করতে ব্যবহার করা যায়। এজন্য যা লাগবে তা হল , আপেল সিডর ভিনেগার ও নারিকেল তেল। প্রথমে ভিনেগার পুরো মাথায় ঢেলে মাথাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এরপর ধোয়া যাবেনা। রেখে দিন যতক্ষণ ভিনেগার না শুকায়। এরপর শুকালে নারিকেল তেল লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ বা একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মাথা মুড়ে রাখুন। কয়েক ঘন্টা পর একটি চিকন চিরুনী দিয়ে মাথা আঁচড়ান। যতটা পারেন। এতে করে উকুন ও ডিম বের হয়ে আসবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
(১৮) নাকে অ্যালার্জি ঘটিত কোন সমস্যা দেখা দিলে এই তেল নাকের ভেতরে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
(১৯) ন্যাচারাল পারসোনাল লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায় এটি এবং এটি নরমাল ভ্যাজাইনাল ফ্লোরাকে ডিস্টার্ব করেনা, তাই ব্যবহার করা সেফ।
(২০) ন্যাচারাল অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল স্কিন ক্রিম হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়।
(২১) ন্যাচারাল সেভিং ক্রিম এবং আফটার সেভিং ক্রিম হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যায় বিশেষ করে প্রাইভেট পার্টে।
(২২) শিশুদের শরীর মালিশের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
(২৩) থালাবাসন মাজার পর একটু নারিকেল তেল হাতে নিয়ে ঘষলে হাত খসখসে হয় না। হাতের তালু নরম হয়।
(২৪) নিয়মিত মাথায় ম্যাসেজ করলে চুলের গ্রোথ ভালো হয়।
(২৫) লবনের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে পা ঘষলে পায়ের মরা কোষগুলো দূর হয়।
(২৬) বেকিং সোডার সাথে মিশিয়ে দাঁত হোয়াইটেনিং টুথপেস্ট তৈরী করা যায়।
(২৭) শিশুদের গোসলের আগে তুলোয় নারিকেল তেল ভিজিয়ে কানে দিলে পানি ঢুকেনা ফলে কানের ইনফেকশন দূর করা যায়।
(২৮) নখের কিউটিকলে লাগালে নখের গ্রোথ ভালো হয়।
(২৯) যাদের হাতের কনুই খসখসে ও শুকনো, তারা এই তেল কনুই-এ ঘষলে উপকার পাবেন।
(৩০) চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে একটি ছোট কন্টেইনারে নারিকেল তেল নিয়ে তাতে ৩টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিয়ে ফ্রীজে রেখে দিয়ে জমিয়ে প্রতিদিন রাতে শোবার আগে চোখের নীচে লাগালে দাগ দূর হয়ে যায়।
এছাড়াও খাওয়ার জন্য যে নারিকেল তেল পাওয়া যায় তার-ও অনেক গুণ আছে, নারিকেল তেলে রান্না খাবার খুব সহজে ডাইজেস্ট হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ক্ষত তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক ব্যাধি দূর করে।
ছবি – স্কিনকেয়ার.কম
লিখেছেন – লিলাবতী লিমা