নারী সৌন্দর্য যেন অনেকটাই নির্ভর করে সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের উপর। কিন্তু প্রায় সময়ই দেখা যায় আমাদের সাধের চুলগুলো ড্রাই আর ড্যামেজ হয়ে যায় যার অন্যতম কারণ বাজারের বিভিন্ন কেমিক্যাল হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, পানির সমস্যা ও আমাদের গ্রহণ করা বিভিন্ন খাবারের বাজে প্রভাব। চুল, সেটা যে উপায়েই নষ্ট হয়ে যাক সেই নষ্ট হয়ে যাওয়া চুলের সৌন্দর্য আর উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের চেষ্টার অন্ত থাকে না। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে এমন সব হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিয়ে ফেলেন যাতে চুলের ভালোর থেকে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়। সব সময় মনে রাখতে হবে যে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়াভাবে আপনি আপনার চুলের কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই ড্রাই আর ড্যামেজ ভাব সারিয়ে তুলতে পারেন।
ড্রাই ও ড্যামেজ চুল এর জন্য ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট দেওয়ার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আসলেই কি আপনার চুল ড্যামেজ? আসুন ড্যামেজ চুলের কিছু লক্ষণের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক।
ড্যামেজ চুলের ৫টি লক্ষণ
চুলের আগা ফাটা
ড্যামেজ চুলের অন্যতম লক্ষণ হল চুলের আগা ফেটে যাওয়া বা ভাঙ্গা যাকে আমরা সাধারণত দো আগা বলে থাকি। চুলের কিছু অংশ হাতে ধরে সামনে এনে যদি দেখেন চুলের আগাগুলো ফেটে গিয়েছে বা ভাঙ্গা ধরনের তাহলে বুঝবেন আপনার চুল ড্যামেজ।
চুলের রুক্ষতা
চুলে চিরুনি চালাতে গিয়ে যদি দেখেন চুল ভীষণ অমসৃণ আর খরখরে ধরণের তাহলেই নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনার চুল ড্যামেজ।
চুলের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের প্রধান দিক হল উজ্জ্বলতা। আর আপনার চুল যদি হয় ধূসর আর মলিন ধরণের তাহলেই বুঝে নিন চুল ড্যামেজ এর শিকার।
চুল পড়া
চুলে চিরুনি চালালে বা চুলে হাত চালালে যদি চুল উঠে আসে তাহলে ধরে নিন আপনার চুল ক্ষতিগ্রস্থ। আবার রাতে বিছানায় ঘুমিয়ে সকালে বালিশে চুল পেলেও বুঝতে হবে আপনার চুল ড্যামেজ।
অমসৃণ চুলের বৃদ্ধি
স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ চুলের লক্ষণ হল মসৃণতা আর সব চুল সমানভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। আর আপনার চুল যদি হয় অমসৃণ আর বৃদ্ধি হয় অসমানভাবে তাহলে এটিও আপনার ড্যামেজ চুলের একটি লক্ষণ।
ড্রাই ও ড্যামেজ চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে মধু ব্যবহারের উপায়
১. কাঁচা মধু ও পানি
শুধুমাত্র কাঁচা মধু (organic raw honey) ও পানি এই দুই উপাদান দিয়ে বানানো মিশ্রণটি আপনার চুলের ড্যামেজ ভাব সারিয়ে তুলতে পারে। এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা মধু ও পরিমাণ মতো পানি নিয়ে এক সাথে মিশিয়ে নিন। আসলে মধুর পরিমাণটা নির্ভর করবে আপনার চুলের পরিমাণের উপর। ভেজা চুলে যেভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন ঠিক একইভাবে এই মধু মিশ্রিত পানি লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে মৃদু উষ্ণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ১ থেকে দুই বার এটি ব্যবহার করলেই দেখবেন আপনার চুলের ড্যামেজ ভাব কমে আসছে।
২. কাঁচা মধু ও ভিনেগার
এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা মধু ও ১০ টেবিল চামচ ভিনেগার নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ভেজা চুলে এই উপাদান লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে আপনার চুলে নিশ্চিত পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
৩. কাঁচা মধু ও অলিভ অয়েল
এক কাপের চার ভাগের একভাগ অলিভ অয়েল ও আধা কাপ কাঁচা মধু একসাথে নিয়ে হালকা গরম করে আপনার চুলে লাগান। কিছু সময় রেখে চুল ধুয়ে নিন। আপনি চাইলে এই পদ্ধতি সপ্তাহে দুইবার অনুসরণ করতে পারেন।
৪. মধু ও নারিকেল তেল
৩ টেবিল চামচ গরম নারিকেল তেল ও এক কাপের চার ভাগের একভাগ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মধু ও নারিকেল তেলের মাস্কটি বানিয়ে ফেলুন। চুল ভিজিয়ে শ্যাম্পুর মতো করে এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর মৃদু গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের ড্যামেজ সারিয়ে তোলার পাশাপাশি চুল মসৃণ আর উজ্জ্বল করে তুলবে।
মনে রাখুন চুলের জন্য কখনোই বাজারের কিনতে পাওয়া পরিশোধিত মধু ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মধু বেশি বেশি ব্যবহার করলেই যে আপনার ড্রাই ও ড্যামেজ চুল এ উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন সেটা ভুল ধারণা। তাই উপরের পদ্ধতিগুলো সপ্তাহে এক থেকে দুইবার অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। আর আপনাকে অবশ্যই পদ্ধতিগুলোর উপর আস্থা রাখতে হবে, কারণ রাতারাতি আপনার চুল সুন্দর হয়ে উঠবে এমনটা সম্ভব নয়।
ছবি – সংগৃহীত: সাটারস্টক