ডার্ক সার্কেলের ব্যাপারটা বুঝলাম। অনেকে জানেনও ডার্ক সার্কেল কেন হয়। কিন্তু কেউ কেউ আছেন যাদের চোখের নিচের অংশ ছোট একটা পোটলার মতো হয়ে ফুলে থাকে। চোখের নিচের ফোলাভাব সমস্যাতে অনেকেই ভুগেন। চোখের নিচের ফোলাভাব সমস্যাটাকে ইংলিশে বলা হয় আই ব্যাগ। বুঝতে পারছেন না আমি আসলে কিসের কথা বলছি?
চোখের নিচের ফোলা যে অংশটা দেখতে পাচ্ছেন সেটাই হচ্ছে আই ব্যাগ। আবার মনে করবেন না আমি আই ব্যাগ থাকাটাকে অ্যাবনরমাল বলছি, আমি বলতে চাচ্ছি এটা অনেকের জন্যই একটি সমস্যা এবং অনেকেই অজান্তে এই স্পেশাল ফিচারটির প্রকোপ আরও বাড়িয়ে ফেলছেন।
চলুন জেনে নিই, আই ব্যাগ আসলে কেন হয় এবং এটা কমানোর জন্য আপনার কী কী করনীয়।
চোখের নিচের ফোলাভাব বা আই ব্যাগ হওয়ার ৫টি কারণ
১. আপনার যদি ভালো ঘুম না হয়
চোখের নিচে ফুলে যাওয়ার একটা বড় কারণ রেগ্যুলার ঠিকমতো ঘুম না হওয়া। যারা জোর করে রাতে জেগে থাকেন এবং দিনে এখন ২ ঘণ্টা তখন ৩ ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে রাতের ঘুম পূর্ণ করার চেষ্টা করেন তবে শরীর নিজের মধ্যে অয়ানি ধরে রাখতে শুরু করে। একে বলে ‘ওয়াটার রিটেশন’। আর শরীরে অযাচিত পানি জমে থাকার কারণে অনেকের সারাদিন মুখ ফুলে থাকে আবার অনেকের চোখের নিচে ব্যাগ চলে আসে। বছরের পর বছরের অনিয়মে এই ব্যাগ স্থায়ী হয়ে যায়। এবং চেহারায় একটা পার্মানেন্ট বয়স্ক, টায়ার্ড ভাব চলে আসে।
কী করবেন?
অবশ্যই রোজ রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ফোন বন্ধ করে ঘুমাবেন। দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস বাদ দেবেন। এর কোন বিকল্প নেই।
২. খুব দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলেছেন
যে কারণেই হোক আপনি খুব বাজেভাবে ক্র্যাশ ডায়েট করে ওজন কমিয়েছেন। আসলে ওজন কমেনি বডিতে যেটুকু অতিরিক্ত পানি জমে ছিল সেটা হঠাৎ বেড়িয়ে গেছে। সো বডির স্কিন লুজ হয়ে গেছে। একই সাথে বডি ট্রাই করছে হারিয়ে যাওয়া পানি আবার পড়িমাড়ি করে ফিল আপ করতে। ফলাফল, কিছুদিনের মধ্যেই চোখের নিচের লুজ স্কিনের তলায় পানি জমে আই ব্যাগ তৈরি হওয়া। যে মানুষের কোনদিন আই ব্যাগ ছিল না তারও হঠাৎ করে আই ব্যাগ তৈরি হতে পারে।
কী করবেন?
বুঝতেই পারছেন, কোনভাবেই ক্রাশ ডায়েট করা যাবে না। কোন ভাবেই এক মাসে ৩ কেজির বেশি ওজন কমান যাবে না। নয়তো যে ওয়েট কমেছে সেটাতো ফিরে আসবেই সাথে আপনার অ্যাডভেঞ্চারের রেজাল্ট হিসেবে ফ্রি হিসেবে আই ব্যাগ পেয়ে যাবেন।
৩. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
যাদের অলরেডি হেরিডেটারি আই ব্যাগ আছে তারা এই কারণে আরও বেশি ভোগেন। একজন মানুষের দিনে সবমিলিয়ে ১ চা চামচের বেশি লবন খাওয়ার দরকার হয় না। জি রান্নার ভেতরের লবণটাও কিন্তু এর ভেতরেই চলে আসবে। এবং এটুকু লবন কিন্তু আপনি যেকোনো রেস্টুরেন্টের ২ টা চিকেন ফ্রাই, ১ টা লার্জ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর এক গ্লাস কোল্ড ড্রিঙ্কেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই শুধু এটা খেয়েই সারাদিন পার করবেন না! সো বুঝতে পারছেন আপনি বাইরে খেয়ে রোজ কতগুলো অতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন? আর যত অতিরিক্ত লবণ খাবেন ততই আপনার বডিতে অতিরিক্ত পানি জমবে। এবং যত পানি জমবে ততই আপনার আই ব্যাগ বাড়বে।
কী করবেন?
যদি হঠাৎ করে দেখেন মুখ ফুলে উঠছে, চোখের নিচটা ঝুলে যাচ্ছে, সাথে সাথে নিজের লবণ ইনটেক চেক করুন। দেখুন বাইরে কত খাওয়া হচ্ছে। এবং কাঁচা লবণ পাতে নিয়ে খাওয়া একেবারেই বন্ধ করুন।
৪. আপনার হরমোন লেভেল ওঠা নামা করে
আসলে আই ব্যাগ ফর্ম করে দুটি কারণে। এক, পানি জমে, দুই, চোখের নিচে ওই নির্দিষ্ট এলাকায় ফ্যাট জমা হবার কারণে। হরমোন লেভেলের ওঠা নামার কারণে শরীরে পানি জমা এবং ফ্যাট জমা দুটোই চেঞ্জ হতে পারে। এবং একারণে হঠাৎ করে আপনার ফেস শেপ চেঞ্জ হওয়া এবং আই ব্যাগ দেখার মতো সমস্যা হতে পারে।
কী করবেন?
থাইরয়েড, মেনোপজ, PCOS, প্রেগন্যান্সি এসব কারণে আপনার যে ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জ হয় সেকারণে আপনি এসব সিম্পটম দেখতে পাবেন। হরমোন কনট্রোল সম্পূর্ণভাবে করা সম্ভব না। করতে পারলেও পার্মানেন্টলি আপনার আই ব্যাগের সমাধান নাও হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি চিরতরে আই ব্যাগ থেকে মুক্তি পেতেই চান তবে সারজিকালি চোখের নিচের ফ্যাট ডিপোসিট সরিয়ে ফেলতে পারেন। অথবা চোখের নিচে বোটক্স ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। দুই উপায়েই আপনি দীর্ঘসময়ের জন্য আই ব্যাগ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। অবশ্যই এই ট্রিটমেন্টের জন্য একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর সাথে কথা বলবেন।
৫. আপনার বংশগত সমস্যা
বাবা মা কারো যদি আই ব্যাগ থেকে থাকে তবে সন্তানেরও হতে পারে। এটা অত্যন্ত কমন। এই ধরণের সমস্যায় কোন হোম রেমেডি কাজ করবে না।
কী করবেন?
একই সলিউশন ফ্যাট রিমুভাল অ্যান্ড বোটক্স।
চোখের নিচের ফোলাভাব বা আই ব্যাগ প্রতিরোধে কিছু উপায়
- ঘন ক্রিম ইউজ করবেন না। ঘন থিক আই ক্রিম ইউজ করলে চোখের নিচে ওয়াটার রিটেনশন প্রব্লেম আরও বেড়ে যাবে।
- রাতে থিক ক্রিম ইউজ করলে সকালে দেখবেন চোখ ফুলে মুখের অর্ধেক ঢেকে গেছে। অবশ্যই আই প্রোডাক্ট হিসেবে আই জেল ইউজ করবেন, নট ক্রিম।
- আই জেল অথবা অ্যালোভেরা জেল ফ্রিজে রাখুন। পাফি আইজ অথবা আই ব্যাগ সমস্যায় দিনে কয়েকবার এই ঠাণ্ডা জেল ইউজ করলে ফোলা ভাব বেশ কন্ট্রোলে থাকবে।
- ফ্রিজে ইউজড টি ব্যাগ অথবা দুটো চা চামচ রেখে দিন। সকালে জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য দুই চোখের উপরে ঠাণ্ডা ব্যাগ বা চামচ দিয়ে রাখুন।
- অবশ্যই দিনে ৩ লিটার করে পানি খাবেন। যত বেশি পানি খাবেন তত বেশি আপনার শরীর নিজে থেকে জমিয়ে রাখা পানি বের করে দেবে। সাথে সাথে রোজ শসা খাবেন, লেবুর রস খাবেন এবং ২-৩ কাপ গ্রিন টি খাবেন।
- অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি খাওয়া, বাজে ডায়েট হ্যাবিটের কারণে শরীরে পানি জমে আই ব্যাগ তৈরি হয়ে থাকলে রেগুলার এই টিপসগুলো ফলো করলে সমস্যা সবসময় কন্ট্রোলে রাখতে পারবেন।
চোখের নিচের ফোলাভাব হওয়ার কারণ ও তা দূর করার উপায় নিয়ে এই তো বেশ জানা হয়ে গেলো। এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক চোখের নিচের ফোলাভাব কমানোর কিছু প্রোডাক্টস যেগুলো শপ সাজগোজ-এ পাওয়া যাচ্ছে…
ছবি – সাজগোজ, সাটারস্টক