অয়েলি টি জোনের যত্ন কিভাবে করবেন? আচ্ছা এ নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের ত্বকের ধরণ নিয়ে চলুন জেনে নেই। সাধারণত আমরা ৪ ধরনের ত্বকের সাথে পরিচিত। শুষ্ক, তৈলাক্ত, নরমাল এবং মিশ্র বা কম্বিনেশন। কম্বিনেশন ত্বকে শুষ্ক এবং তৈলাক্ত উভয় অংশই উপস্থিত থাকে এবং সাধারণত কম্বিনেশন স্কিনে অয়েলি টি জোনের দেখা মিলে। মিশ্র ত্বকের কপাল, নাক ও থুতনির পার্টটিকে অয়েলি টি জোন (Oily T zone) বলা হয়। কেননা এই অঞ্চলগুলো তৈলাক্ত, চিক (Cheek) থাকে শুষ্ক আর এই পুরো অংশটি মিলিয়ে দেখলে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘T’ এর মত মনে হবে। স্বভাবতই জানতে ইচ্ছা করবে কেন এই কম্বিনেশন স্কিন! বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই জেনেটিক্যালি আর কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের স্কিন প্রোডাক্টগুলো নির্বাচনে অবহেলার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
বুঝতে পারেন নি তো? আচ্ছা, ধরুন আপনি এমন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন যার ভেতর প্রদাহ সৃষ্টি করে এমন উপাদান আছে। এই উপাদানগুলো আপনার টি জোনে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণে ভূমিকা রাখে একই সাথে মুখের অন্যান্য এরিয়ার ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। মেকআপ করলে বা নরমাল সময়ে দেখা যায় কপাল, নাকের অংশটি তেলতেলে হয়ে আপনাকে কালচে দেখাচ্ছে। কিছু ঘরোয়া উপাদান আছে যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে এই এরিয়ার তেল নিঃসরণ থাকবে আপনার আয়ত্বের ভেতরে। তবে ভাগ্যক্রমে আপনি যদি স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন এবং আপনার টি জোন অয়েলি না হয়ে থাকে তবে তেমন কোন বিশেষ যত্নের দরকার হয় না। শুধুমাত্র ভালো কোন টোনার ব্যবহার করলেই চলবে। এবার চলুন যাওয়া যাক আমাদের মূল প্রসঙ্গে। চলুন জ়েনে নেওয়া যাক অয়েলি টি জোনের যত্ন নিতে কিছু পন্থা।
অয়েলি টি জোনের যত্ন কিভাবে হবে?
০১. মুলতানি মাটি যেমন আমাদের সবার কাছে পরিচিত তেমনি সহজলভ্যও। মুলতানি মাটি ত্বকের উপরিভাগ থেকে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, তাই সব তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের মুলতানি মাটির প্যাক লাগাতে বলা হয়। সে কারণে যদি আপনার ত্বকের টি জোন অয়েলি হয়ে থাকে তাহলে পানির সাথে মুলতানি মাটির প্যাক বানিয়ে শুধু মাত্র তৈলাক্ত অংশে লাগাবেন। প্রতিদিন এই চর্চাটি করবেন।
০২. টক দইয়ের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রসের মিশ্রন বেশ উপকারী ক্লিঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল নির্গত হওয়ার কারণে আমাদের কপাল, নাক আর থুঁতনির ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ঐ এরিয়াতে ব্রণের আনাগোনাও দেখা যায়। যদি নিয়মিত ক্লিন করার মাধ্যমে তেলের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায় তবে খুব সহজে ব্রণ আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারবে না।
০৩. ১ চা চামচ মধুর সাথে ২ চা চামচ টোমেটোর রস মিশিয়ে নিবেন। এই সলিউসন, টি জোনে ম্যাসেজ করে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। টমেটোর ন্যাচারাল এসিড ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স করে সেই সঙ্গে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হওয়া থেকে আমাদের মুক্ত করে। সুতরাং পরোক্ষভাবে ব্রণের প্রকোপ থেকেও আমরা রেহাই পাই।
০৪. এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরার সাথে ১ চা চামচ শশার রস মিশিয়ে মিশ্রণটি কটন প্যাডে লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য পুরো মুখে বা শুধু আপনার টি জোনে লাগান। এভাবে প্রতিদিন রুটিন করে মুখে লাগান।
অয়েলি টি জোনের যত্ন নিতে মুখ ক্লিনিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং
এবার দেখা যাক যাদের টি জোন অয়েলি তাদের মুখ ক্লিনিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং এর জন্য কী কী প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যায়।
১. আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী জেল বেসড বা মাইলড ফোমি ক্লিংঞ্জার সঠিক নির্বাচন হবে। ক্লিঞ্জিং এর জন্য যদিও ক্লিনিকের প্রোডাক্ট একটু ব্যয়বহুল তবুও আমি বলবো সামর্থ্য থাকলে এদের প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করুন কেননা, এই কোম্পানির প্রোডাক্ট লাইনে বিভিন্ন ধরনে্র ত্বক অনুযায়ী প্রোডাক্ট আছে। মিশ্র ত্বকের জন্য Wash – Away Gel Cleanser বা Rinse Off Foaming Cleanser নামের প্রোডাক্ট ২টির যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
২. Clean and Clear Deep Action Cleanser হয়তো আমরা অনেকেই ব্যবহার করছি। এটি তৈলাক্ত ত্বক বা অংশের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এটি ব্যবহারের পর ৩-৪ ঘণ্টা আপনার টি জোনের তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৩. আছে ওলেই কোম্পানির ফোমি ফেইসওয়াশ। এই অয়েল ফ্রি ফেইসওয়াশ অতিরিক্ত শুষ্ক না করেই ত্বকে আটকে থাকা ধুলো ময়লা, অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে দেয়। সেই সঙ্গে আপনার তৈলাক্ত টি জোনটিও ম্যাট থাকবে।
৪. ত্বক যেমনই হোক না কেন গোলাপ জল আমার কাছে বেস্ট টোনার বলে মনে হয়। তারপরও যদি আপনি চান তবে নিউট্রেজেনার অয়েল ফ্রি টোনার বা বডি শপের টি ট্রি স্কিন ক্লিয়ারিং টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এই টোনার কটন প্যাডে লাগিয়ে আপনার কপাল, নাক আর থুঁতনিতে ব্যবহারের পর পেয়ে যাবেন বহু কাঙ্ক্ষিত শাইন ফ্রি টি জোন।
৫. ক্লিঞ্জিং টোনিং এর পর এবার আসে ময়েশ্চারাইজিং এর পালা। Clinique Dramatically Different Moisturising Gel প্রোডাক্টটি অয়েলি টি জোনের জন্য বিশেষ ভাবে ফরমুলেটেড। এই ফ্লুয়িড- জেল ফরমুলা খুব দ্রুত ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর আপনার অয়েলি এরিয়া শাইন ফ্রি ম্যাট দেখায়। The Body Shop এর Seaweed Day বা Night Cream কম্বিনেশন টাইপ স্কিনের জন্য একদম পারফেক্ট। এটি ড্রাই এরিয়া মানে চিক এরিয়াকে আর্দ্র রাখে উপরন্তু অয়েলি পার্ট অর্থাৎ টি জোনের অতিরিক্ত সেবাম ব্যালেন্স করে। সবশেষে মিশ্র ত্বকের জন্য আরেকটি ক্রিম সাজেষ্ট করবো সেটি হলো Nivea Visage Pure & Natural Moisturising Day Cream. এই প্যারাবেন ও সিলিকন ফ্রি ক্রিমটির ৯৫ ভাগই ন্যাচারাল উপাদান দিয়ে তৈরি। যার প্রাকৃতিক গুণাগুন টি জোনের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মেকআপ করার ক্ষেত্রে অয়েলি টি জোনের যত্ন
মুখে মেকআপ করার আগে অবশ্যই আপনার টি জোনে এক টুকরো বরফ ঘষে নিবেন। তারপর ঐ অংশে অয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন এবং ম্যাট লুকিং প্রেসড পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। এমন কিছু কস্মেটিক্স হলো চ্যানেল এর Vitalumière Aqua, ক্লিনিক ইভেন বেটার, নারস এর Sheer Glow Foundation, রেভলন এর কালারস্টেই, লরিয়াল প্যারিস ট্রু ম্যাচ সুপার ব্লেন্ডেড পাউডার, রেভলন কালারস্টেই মিনারেল ফিনিশিং পাউডার।
আর্টিকেলটি পড়ার পর অনেকে ভাবতে পারেন কী দরকার এত সব ঝামেলা করার? যেমনটি আছি তেমনটিই থাকি। কিন্তু এখন আমি কিছু সমস্যার কথা বলবো যে সমস্যাগুলো এখন দেখা না দিলেও পরবর্তী কোন না কোন সময় আপনাকে ভোগাতে পারে। যেহেতু টি জোনে বেশ কিছু পরিমাণে অয়েল গ্ল্যান্ড থাকে সেহেতু ব্রণ তো খুবই কমন ব্যাপার। এরপর আছে seborrhea, এক ধরনের স্ক্যালি rash যা সচরাচর অয়েলি টি জোনেই দেখা যায়। rosacea বা স্কিন পোর বড় হয়ে যাওয়ার মতও সমস্যা দেখা দেয়। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া ভালো। আশা করি আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আপনাদের উপকারে আসবে।
ছবিঃ সংগৃহীত- ওয়েস্টোন্স.কম