ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা আমাদের অনেকেরই আছে। বিশেষ করে এখন শীতকালে এই সমস্যা বৃদ্ধি পায় অনেক হারে। তবে মাঝে মধ্যে আবহাওয়া ছাড়াও শারীরিক কারণে ত্বকের শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যদি ত্বকের শুষ্কতায় ভুগে থাকেন তাহলে কিছু টিপস মেনে চলুন, দেখবেন ত্বকের শুষ্কতা থেকে রেহাই পাবেন সহজেই!
[picture]
১. ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ
প্রথমেই আপনার ত্বককে বাইরে থেকে ময়েশ্চারাইজ করার চেষ্টা করুন। ময়েশ্চারাইজ বলতে ত্বকের উপর অংশের কোষগুলো যাতে পর্যাপ্ত ভেজা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। প্রতিনিয়ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এজন্য প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখের চামড়ায় এবং হাতে পায়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন।
এছাড়াও অনেকের মাঝে হাতের চামড়া শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে নিজের সাথে হ্যান্ড ক্রিমের একটি ছোট টিউব রাখতে পারেন। যখনই মনে হবে হাত শুষ্ক, তখনই হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করে হাতের চামড়া ভেজা ও নরম রাখবেন।
প্রতিদিন দিনে অন্তত ৩/৪ বার মুখ ধোয়া জরুরী। এতে মুখের চামড়া নরম থাকবে এবং ধুলোবালি আটকে থাকবে না। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর নির্দিষ্ট পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
এখন অনেকের মাঝেই প্রশ্ন আসতে পারে কোন ময়েশ্চারাইজারটি ব্যবহার করবেন। আসলে নির্দিষ্ট করে কোন ময়েশ্চারাইজার ক্রিমের নাম নেয়া কঠিন। তবে আপনার চামড়ার সাথে মানিয়ে যায় এমন যে কোন ময়েশ্চারাইজার ক্রিম আপনি ব্যবহার করতে পারেন। দরকার হলে অভিজ্ঞদের সাহায্য নিন।
২. শরীরের ভেতর থেকে চামড়ায় পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানের যোগান দিনঃ
পানি মানুষের শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য বস্তু। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করুন। পানি আপনার শরীরের মাঝে টক্সিন জাতীয় পদার্থগুলোকে পরিষ্কার করে এবং চামড়ার কোষগুলোকে সজীব রাখে। একজন সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৪/৫ লিটার পানির দরকার। সেই প্রয়োজনীয়তা যাতে পূরণ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
প্রতিদিন খাবারে প্রচুর শাকসবজি গ্রহণ করুন। মাংস কিংবা চর্বি জাতীয় খাবারের চাইতে শাকসবজি আপনার ত্বকের যত্নে বেশ কাজে দেবে। সবুজ শাক জাতীয় খাবারে যে খনিজ উপাদান থাকে তা ত্বকের সজীবতা রক্ষায় সাহায্য করে। এছাড়াও চাইলে পানি জাতীয় ফল ও সবজি খেতে পারেন। তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর আমিষ জাতীয় খাবার যেমন ডিম, বাদাম, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে ফাস্টফুড এবং অধিক মসলাদার খাবার পরিহার করুন। আর ধুমপানের অভ্যাস থাকলে সেটাও পরিহার করতে পারেন। কারণ ধুমপান আপনার ত্বকের শুষ্কতার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে।
৩. ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করুনঃ
অনেকের শুচিবাই সহ বিভিন্ন কারণে অধিক পরিমাণে গোসল ও হাতমুখ ধোয়ার অভ্যাস থাকতে পারে। এই ব্যাপারটি পরিহার করার চেষ্টা করুন। কারণ অধিক পরিমাণে পানির ব্যবহার আপনার ত্বকের সুরক্ষা স্তর ধুয়ে নিয়ে যেতে পারে। যার কারণে ত্বকের শুষ্কতার মাত্রা বাড়তে পারে।
এছাড়া শীতকালে ত্বক ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন। নইলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস আপনার ত্বুককে রুক্ষ বানিয়ে দেবে সহজেই। আর শীতকাল ছাড়া গরমকালে ত্বককে রোদের তাপ, বাইরের ধুলোবালি থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। না হলে ঘাম এবং ধুলোবালি ত্বকের ভেতরে ঢুকে চামড়ার ক্ষতি করতে পারে।
খুব বেশি টাইট জামা কাপড় না পরাই ভালো। এতে চামড়ার যে ফ্লেক্সিবিলিটি আছে সেটি নষ্ট হয়। নিজের জন্য আরামদায়ক কাপড় ব্যবহার করুন। এতে চামড়ার উপর বাড়তি চাপটা পড়বে না।
৪. ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
এই শীতে যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়েই যায়, তাহলে কিছু জিনিস অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমত ত্বক ভালোমত পরিষ্কার করুন। এরপর ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের সজীবতা রক্ষা করবে এবং শীতের প্রকোপ থেকে আপনার ত্বককে বাঁচিয়ে রাখবে।
ঘরে থাকা নানা জিনিস ব্যবহার করে আপনি ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। অ্যালোভেরা, নারিকেল তেল, গ্লিসারিন এগুলো ত্বকের যত্নে বেশ কার্যকরী। তাই শীতের দিনে এগুলো নিয়মিত ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
ত্বক আপনার সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ত্বক যত সুন্দর ও সজীব থাকবে, আপনিও থাকবেন তত সুস্থ ও সুন্দর। সুতরাং ত্বকের যত্ন নিন, সজীব থাকুন।
লিখেছেনঃ ফরহাদ রাকিব
ছবিঃ গ্লোলাক্স.সিএ