ইদানিং আমার ডাস্ট অ্যালার্জি হচ্ছে প্রচুর। চারিদিকের এই ধূলোবালি ও গরমের কারণে আমার হয়েছে স্কিন কনটাক্ট টাইপ অ্যালার্জি। এর আগে আপনাদেরতো বলেছিই ত্বকের সংস্পর্শে কত ধরনের অ্যালার্জি হয়। আজ বলবো ইনজেশন অ্যালার্জি (Ingestion Allergy)-এর কথা। প্রথমেই বলি ইনজেশন মানে কী? ইনজেশন মানে মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ করার পদ্ধতি। অর্থাৎ, আপনি তরল বা কঠিন যে ধরনের খাদ্যই গ্রহণ করেন না কেন তাতে যদি আপনার শরীর সেই খাবারকে ক্ষতিকর না হওয়াতেও ক্ষতিকরভাবে এবং তা থেকে যে অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাকেই ইনজেশন অ্যালার্জি বা আহারের অ্যালার্জি বা খাবারে অ্যালার্জি বলা হয়। সবার যে একটি খাবারে অ্যালার্জি হবে তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধরনের খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে।
৪ ধরনের খাবারে অ্যালার্জি এর লক্ষণ ও প্রতিকার
১) দুধে অ্যালার্জি (Milk Allergy)
অনেক অবাক হচ্ছেন তাই না? দুধেও মানুষের অ্যালার্জি হয়! হ্যাঁ হয়! তবে খুঁজলে হয়তো হাতে গোনা কয়েকজনকে মাত্র পাওয়া যাবে। মিল্ক অ্যালার্জি সাধারণত ল্যাকটোজ এনজাইম (lactoze enzyme)কম থাকলে বা ল্যাকটোজ এনজাইমের দ্বারা দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার সঠিকভাবে পরিপাক না হলে আপনার দেহে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তাই। এছাড়াও গরুর দুধে আলফা এস-১ ক্যাসেইন প্রোটিন (Alpha S1-casein protine) থাকে যা অ্যালার্জির জন্য দায়ী।
লক্ষণ
যাদের দুধে অ্যালার্জি আছে, তাদের দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাবার কয়েক ঘন্টা পর থেকে এক দিনের মধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও কখনো কখনো পায়খানার সাথে মিউকাস ও রক্ত যেতে পারে। তাছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, সাইনোসাইটিস, কফে সকল সমস্যা দেখা যায়। স্কিনে র্যাশ ও দেখা যায়। আর খুব তাড়াতাড়ি লক্ষণ প্রকাশ পেলে বমি ও শরীর লাল লাল চাকার মত হয়ে ফুলে যেতে পারে।
প্রতিকার
মিল্ক অ্যালার্জি যাদের আছে তাদের সাধারণত এই সমস্যা ছোট থেকেই দেখা দেয়। তাই তারা মূলত আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যতটা সম্ভব দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। প্যাকেটের খাবার কিনতে খেয়াল করে কিনুন। দেখুন যেখানে ‘ডেইরি’ শব্দটি লেখা আছে তা এড়িয়ে চলুন। আর যদি ডেইরি না লেখা থেকে শুধু ‘D’ লেখা থাকে, তাহলেও বুঝতে হবে তাতে দুধ রয়েছে। ভালোভাবে দেখবেন কিন্তু, ‘vit-D’ আর ‘D’-এ দুটি মিলিয়ে ফেলবেন না যেন!
২) আমে অ্যালার্জি (Mango Allergy)
আমের কস বা খোসা মুখে লাগলেই কিছু মানুষের অ্যালার্জি হয়। যদি কারো অনেক বেশি পরিমাণে অ্যালার্জি থেকে থাকে তাদের ক্ষেত্রে আমের খোসা বা আমের কস না লাগলেও শুধু আম খেলেও অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
লক্ষণ
আমের অ্যালার্জিতে দুই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমত, শুধু মুখে ও মুখের চারপাশে ফুলে যায় বা চুলকানি হয়। দ্বিতীয়ত, সারা শরীরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায় ও চুলকানি হতে পারে। অনেকের শ্বাস-কষ্টও হতে পারে।
প্রতিকার
যাদের আমে অ্যালার্জি রয়েছে, তারা আম ভালো করে ধুয়ে, কস পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে খান। এরপরও যদি আপনার আমে অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যালার্জির জন্য ওষুধ সেবন করুন।
৩) বাদাম ও শেলযুক্ত মাছ ( Nuts & Shellfish)
প্রায় সব ধরনের বাদামেই কিউপিন (cupin), প্রোলামিন (prolamin), প্রোফিলিম (profilim) এবং বেট-ভি-১(Bet-v-1) জাতীয় প্রোটিন থাকে যার কারণে অনেকের অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
আর শেল-যুক্ত মাছ যেমন- চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি খেলেও অ্যালার্জি হয়। আবার অনেক সামুদ্রিক মাছ, যেমন- টুনা, কোরাল ইত্যাদি মাছেও অনেকের অ্যালার্জি হয়ে থাকে। যারা রেগ্যুলার বাদাম ও শেল-যুক্ত মাছ খেয়ে থাকেন অর্থাৎ যাদের এই খাবারে অ্যালার্জি নেই, তাদেরও যেকোনো সময় অ্যালার্জি হতে পারে।
লক্ষণ
বাদাম ও শেল-যুক্ত মাছ খেলে প্রায় একই ধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি দেয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকা চাকা হয়ে ফুলে যাওয়া।
প্রতিকার
আপনার যদি বাদাম ও সামুদ্রিক মাছে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হলো তা এড়িয়ে চলা। আর অল্প পরিমাণে অ্যালার্জি হলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
৪) ওষুধ সেবনে অ্যালার্জি (Medication)
চোখ কপালে উঠল বুঝি? ওষুধেও যদি অ্যালার্জি হয়ে থাকে তবে উপায় কী? এত চিন্তিত হবার কারণ নেই! সব ওষুধে অ্যালার্জি হয় না। তবে যাদের ওষুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের পেনিসিলিন (penicilline), সালফোনামাইডস(sulphonamides) অ্যাসপিরিন (Aspirine), ইবুপ্রফেন (Iboprofen) জাতীয় ওষুধে অ্যালার্জি হয়। ওষুধের কারণে অ্যালার্জি হলে তা সেবনের সাথে সাথেও হতে পারে আবার কয়েক ঘন্টা বা এক সপ্তাহ সময় পরেও হতে পারে।
লক্ষণ
ওষুধ অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করলে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সাধারণত চুলকানি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ, শ্বাসকষ্ট, শরীরে চাকা হয়ে ফুলে ওঠা এমনকি জ্বরও হতে পারে!
প্রতিকার
রোগ হলে ওষুধ খাওয়াতো আর বন্ধ রাখা বা এড়িয়ে চলা যাবে না। তাই, আপনার অ্যালার্জি সম্পর্কে ডাক্তারকে অবশ্যই অবগত করুন ও ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন!
খাবারে অ্যালার্জি এর কথা অনেক বললাম। দুধের মতো ডিমেও কিন্তু অনেকের অ্যালার্জি হয়। আর ফলের মধ্যে আম একাই অ্যালার্জেন নয়। কলা, আঙ্গুর ও অন্যান্য ফলও অ্যালার্জেন। ভাবছেন মূল কথাগুলোই বলি নি? বেগুন, ইলিশ, মিষ্টি কুমড়ার মত কমন অ্যালার্জেন নিয়ে কথা না বলে কেন স্বল্প পরিচিত অ্যালার্জেন নিয়ে বললাম? উত্তরটা আপনার প্রশ্নেই রয়েছে। কমন যে! মোটামোটি আমাদের সবারই এই কমন ইনজেশন অ্যালার্জি নিয়ে ধারণা রয়েছে। তাই জানালাম আনকমন কিছু! অ্যালার্জি নিয়ে লেখা এখানেই শেষ নয় কিন্তু! পরবর্তিতে অ্যালার্জি নিয়ে আরও লিখবো।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক